বিমানবন্দরের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে প্রতিদিন লড়াই করে যাচ্ছে এপিবিএন। হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রতিটি প্রবেশ-বাহির গেট, রানওয়ে, ব্যাগেজ কাউন্টারসহ সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্তা বিধান, অনিয়ম-নৈরাজ্যের বন্ধে কাজ করছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। আবার চোরাচালানের পণ্য জব্দ করে সরকারকে রাজস্ব এনে দিচ্ছে। ২০১০ সালের ১ জুন থেকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পায় এপিবিএন। ৫ বছরে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণও দিয়েছে বাহিনীটি। সরকারের ঘরে রাজস্ব এনে দিয়েছে ৩০০ কোটি টাকার বেশি। একক প্রচেষ্টায় বিমানবন্দর থেকে এ পর্যন্ত ২১০ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে তারা। জব্দের খাতায় রয়েছে প্রায় ১২ হাজার কার্টন সিগারেট, ১৭ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আর ১৬ কেজি হেরোইন। শাহজালালের পাশাপাশি খুটি গেড়েছে ওসমানী বিমানবন্দরেও। এপিবিএনের ৮ম ব্যাটালিয়নের ১ হাজার ১৮০ সদস্য শুধুমাত্র বিমানবন্দরেই দায়িত্ব পালন করেন।শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আয় বাড়াতেও অবদান রয়েছে এপিবিএনের। বিমানবন্দরে এপিবিএনের কার্যক্রমের আগে অর্থাৎ ২০১০ সালে শাহজালালের আয় ছিল মাত্র ৮০০ কোটি টাকা। তবে ২০১৫ সালে এই আয় বেড়ে দাড়িয়েছে ১৮শ কোটি টাকায়। এই তৎপরতা অব্যাহত থাকলে আগামী বছর এই আয় ২ হাজার কোটির অতিক্রম করতে বলে আশা প্রকাশ করেন এপিবিএনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন।আগে দালালের দৌরাত্বে পদে পদে যখন যাত্রীরা হয়রানির শিকার হতেন, এপিবিএনের কল্যাণে সেই শাহজালালকে এখন প্রায় ‘দালাল মুক্ত’ বলা চলে। বাহিনীটির সার্বক্ষণিক নজরদারীর কারণেই স্বস্তিতে থাকেন যাত্রীরা।গত ৫ বছরে হারানো হাজারের অধিক যাত্রীদের হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র পেয়ে সেগুলো ফিরিয়ে দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্তের সৃষ্টি করেছে এপিবিএন। সর্বশেষ লন্ডন পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর পাউন্ডসহ ব্যাগ আর দুবাই প্রবাসী মো. জসিম উদ্দিনের দিরহাম ভরা ব্রিফকেস খুঁজে পেয়ে হস্তান্তর করে তারা। নরসিংদীর শিশু শামীমকে বিমানবন্দর চত্বর থেকে উদ্ধারের পর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার নজির সৃষ্টি করেছে বাহিনীটি। হজযাত্রীদেরকেও সহযোগিতায়ও এগিয়ে এসেছে এপিবিএন।শাহজালালে লাগেজ চুরির মূল হোতা জয়নাল। তাকে দুই দুইবার আটক করে চুরির সমস্ত মালামাল জব্দ করে এপিবিএন। বর্তমানে তাদের কড়া নজরদারীর কারণেই বিমানবন্দরে লাগেজ কাটা ও চুরির ঘটনা অনেক কমে এসেছে।তামিম আহমেদ শাহজালাল বিমানবন্দরের এক বিমানযাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াত করছি। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যবহার ও সহযোগিতায় আমি মুগ্ধ। আগে কোনো প্রয়োজনে কারো সহযোগিতা চাইলে কর্মরত বাহিনীর সদস্যরা খুব বিরক্তি দেখাতো। তবে এবপিবিএনের সদস্যরা হাসিমুখে সহযোগিতা করে। এপিবিএন এভাবে কাজ করতে থাকলে বাংলাদেশের এয়ারপোর্টের প্রতি বিদেশিদের মনোভাব অনেকটা ইতিবাচক হবে।মন্টি নামের এক যাত্রী বলেন, আগে বিমানবন্দরের গেট থেকে বের হলে ব্যাগ টানা পার্টির ভয়ে থাকতে হতো। তবে এখন গেটের বাইরে এপিবিএন সদস্যদের দেখে অনেকটা স্বস্তিতে বের হতে পারি।শুধু বিমানবন্দরের পয়েন্টগুলোতে নজরদারিই নয়, বিমানবন্দরের চারপাশে টহল পরিচালনার জন্য এপিবিএনের রয়েছে বাইক পুলিশ। রয়েছে সিসি টিভি সহ আধুনিক সার্ভেলেন্স মেকানিজম। কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারের কক্ষের মনিটরে ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সার্বক্ষণিক বিমানবন্দরের নজর রাখে এপিবিএন।আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের চোরাচালান বিরোধী অভিযানের ফলশ্রুতিতে গত ৫ বছরে বিমানবন্দর থেকে রাজস্ব আয় দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। আরো বাড়বে। উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে যাত্রী হয়রানী অবৈধ অর্থ আদায়। আশা করছি ভবিষ্যতেও এপিবিএন বিমানবন্দরে নিজেদের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখবে। বিমানবন্দর সম্পর্কে যেকোনো জিজ্ঞাসাবাদ, সমস্যার সমাধান নিয়ে বাহিনীটির এয়ারপোর্ট ইউনিট ফেসবুকে একটি পেজ খুলেছে। www.facebook.com/airportarmedpolice যাত্রীদের যেকোনো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই পেইজটিতে পোস্ট করার আহ্বান জানান আলমগীর হোসেন।এআর/এসকেডি
Advertisement