সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে নিখোঁজ হয়েছে ১৮ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি কিশোর। তার নাম মোহাম্মদ মিরাজ। আমিরাতে সে বাবা-মার সঙ্গেই থাকত। পড়ালেখা করত আজমানের একটি স্কুলে। এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল সে। মিরাজের গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে।
Advertisement
তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,বাবা-মাকে না জানিয়ে গত জানুয়ারিতে সে বাংলাদেশে চলে এসেছে। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে তারা এ তথ্য জানতে পেরেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে সে কোথায় আছে তা তারা জানেন না। এমনকি বাবা-মার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করছে না মিরাজ। এজন্য তার পরিবার আজমান পুলিশ স্টেশন ও ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানায় জিডি করেছেন।
মিরাজের ছবি হাতে নিয়ে তার অপেক্ষায় বাবা-মা, ভাই-বোন
মা-বাবার খুব আদরের সন্তান ছিল মোহাম্মদ মিরাজ। মাত্র দুই বছর আগেও ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন তারা। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে মিরাজ তৃতীয়। বাবা দেলোয়ার হোসেন ছোটখাটো ব্যবসা করেন আজমানে। মিরাজের বড় ভাই ইমরান হোসেন ও মেজো ভাই শাহাদাৎ হোসেন সাদ্দাম বাবার সঙ্গে ব্যবসায় সহযোগিতা করেন।
Advertisement
মিরাজের মা জানান, তার ছেলে খুব শান্ত স্বভাবের, এমনকি কোনো সময় কারও সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদেও লিপ্ত হয়নি।
মিরাজের ছবি হাতে নিয়ে তার অপেক্ষায় বাবা-মা, ভাই-বোন
‘আমি তাকে খুবই ভালোবাসি। কারণ, ছেলেদের মধ্যে সে সবার ছোট ও সবার আদরের। মিরাজের ছোট শুধু তার এক বোন, বাকিরা সবাই মিরাজের বড়’,- বলছিলেন মা।
মিরাজের মেঝ ভাই শাহাদাৎ হোসাইন সাদ্দাম জানান, ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর পবিত্র উমরাহ্ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গেলে ২৯ ডিসেম্বর উমরাহ্ পালন শেষে আমিরাত প্রবেশ করেন তারা। সবকিছুই চলছিল স্বাভাবিক। কিন্তু চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি দুবাই থেকে সালামা ফ্লাইটে করে ওমানের মাসকাট এবং সেখান থেকে ঢাকা এয়ারপোর্ট হয়ে বাংলাদেশে চলে আসে মোহাম্মদ মিরাজ।
Advertisement
তিনি বলেন, দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে এ তথ্য জানতে পেরেছি। তবে এর আগে আজামান পুলিশ স্টেশনে জিডি (জি.ডি নং ১৭৫৫৯) করি আমরা। পুলিশ জানায়, এ ব্যাপারে একমাত্র সিআইডি চাইলে হয়তবা সাহায্য করতে পারবে। তারপর সিআইডির শরণাপন্ন হলে সিআইডি তথ্য দেয় যে, মিরাজ এখন ওমান হয়ে বাংলাদেশে গেছে। তাই চাইলেও তারা কিছুই করতে পারবেন না।
শাহাদাৎ হোসাইন সাদ্দাম দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে তথ্য নিতে গিয়ে দেখেন সত্যিই মিরাজ ওমানের মাসকাট এয়ারপোর্ট হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাই সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে তারা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের এ ব্যাপারে জানান। এর মধ্যে মিরাজকে দু-একবার ফেসবুক অনলাইনেও দেখা যায় বলে জানায় মিরাজের পরিবার। কিন্তু বিভিন্ন আইডি থেকে ম্যাসেজ দিয়ে ফিরে আসার জন্য বলা হলেও মিরাজের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। প্রথম প্রথম ম্যাসেজগুলো মিরাজের আইডি থেকে দেখা হলেও এখন আর মিরাজের আইডি অ্যাকটিভ পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানায় জিডিও (জিডি নং ১১৯২) করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব অফিসেও জানানো হয়। কিন্তু এতেও কোনো ফল আসেনি। বর্তমানে মিরাজের বড় ভাই দেশে রয়েছেন।
মিরাজ আমিরাতে থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে তার খুব বেশি বন্ধুত্ব ছিল। তাই তার বাবা মা সন্দেহ করছেন হয়ত চট্টগ্রামের কোথাও থাকতে পারে তার সন্তান। তবে কোথায় এবং কার কাছে থাকতে পারে এ বিষয়ে ওনারা কিছুই জানাতে পারছেন না। মিরাজের বাবা-মায়ের এখন শুধু একটায় আশা- তাদের ছেলেকে যেন তারা ফিরে পান। সবপ্রকার চেষ্টার পরও হাল ছাড়েননি মিরাজের বাবা -মা, ভাই-বোনসহ আত্মীয় স্বজনরা। সারাদিন বাবা-মায়ের চোঁখ যেন শুধু তাদের হারিয়ে যাওয়া ছেলেকেই খুঁজে। মিরাজের বাবা সারাদিন অপেক্ষা করেন হয়তবা কোনো এক সময় ছেলের কাছ থেকে কল পেয়ে বেজে উঠবে তার ফোনটি।
তার বাবা-মা জানান, এখন একমাত্র আশা বাংলাদেশ সরকার। এ ছাড়া আর কোনো পথ তারা দেখছেন না, তাই তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানান, তিনি যেন এ বিষয়ে অবশ্যই কোনো সহযোগিতা করেন।
জেডএ/জেআইএম