নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় নিখোঁজের ১০ দিন পর ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান সেলিম চৌধুরীর (৫২) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
Advertisement
পাওনা টাকা চাইতে গেলে সেলিম চৌধুরীকে নির্মমভাবে হত্যা করে বস্তাবন্দি করে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। বুধবার বিকেলে ফতুল্লার কাশীপুর ভোলাইল এলাকার মোহাম্মদ আলীর ঝুটের গোডাউনের মাটি খুঁড়ে সেলিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরী নিখোঁজের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী (৪০) ও তার কর্মচারী ফয়সাল (২৯) ও ইউনুছকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যমতে মোহাম্মদ আলীর গোডাউন থেকে মাটি খুঁড়ে বস্তাবন্দি সেলিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরী ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের কানাইনগর এলাকার মৃত শামসুল হুদার ছেলে। সেলিম চৌধুরী ব্যবসার সুবিধার্থে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
Advertisement
নিহতের স্ত্রী রেহেনা আক্তার রেখা বলেন, সেলিম মূলত গার্মেন্টের থান কাপড় ও ঝুট ব্যবসা করতেন। তাদের বাড়ি বক্তাবলীর কানাইনগর এলাকায় হলেও ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় বসবাস করতেন। গত ৩১ মার্চ সকালে বাসা থেকে ব্যবসার কাজে সেলিম বের হয়ে যান। বেলা ১১টার দিকে মোবাইলে জানতে চাইলে সেলিম জানান ফতুল্লার পঞ্চবটি মোড়ে ইস্টার্ন ব্যাংকে রয়েছেন। বেলা ২টায় খাবার খাওয়ার জন্য ফোন করলে সেলিমের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
রেহেনা আক্তার রেখা বলেন, ফতুল্লার কাশীপুর ভোলাইল এলাকার মোহাম্মদ আলী নামে এক ঝুট ব্যবসায়ীর কাছে দুই লাখ টাকা পাওনা ছিলেন সেলিম। ওই টাকা নিয়ে টালবাহানা করছিল মোহাম্মদ আলী। ৩১ মার্চ আলীরটেকের ডিগ্রিরচর গ্রামের সালা উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আলীর ঝুটের গোডাউনে পাওনা দুই লাখ টাকা চাইতে যান সেলিম। এরপর সেলিম নিখোঁজ হন। পাওনা টাকা চাওয়ার অপরাধে পরিকল্পিতভাবে মোহাম্মদ আলী ও তার লোকজন সেলিম চৌধুরীকে হত্যা করে বস্তাবন্দি করে গোডাউনে মাটি খুঁড়ে চাপা দিয়ে রাখে।
ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুন আল আবেদ বলেন, ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরী নিখোঁজ হওয়ার পর স্ত্রী রেহেনা আক্তার রেখা ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করেন। জিডির পর ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরীর মোবাইল ট্র্যাকিং করে নিখোঁজের সময়কার অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়। এরপর নিখোঁজ ব্যবসায়ীর স্ত্রী বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। মোবাইল ট্র্যাকিং করার পর সন্দেহ হলে বুধবার দুপুরে মোহাম্মদ আলীর ঝুটের গোডাউনে অভিযান চালানো হয়। এ সময় মোহাম্মদ আলীসহ তার দুই কর্মচারী ফয়সাল ও ইউনুছকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তিতে মাটি খুঁড়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় সেলিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এসআই মামুন আল আবেদ আরও বলেন, আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায় পাওনা দুই লাখ চাওয়ায় মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তাদের তর্ক-বিতর্ক হয়। ৩১ মার্চ রাতে মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ৪-৫ জন মিলে সেলিমকে রড দিয়ে আঘাত করে এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে মরদেহ গুমের উদ্দেশ্যে বস্তাবন্দি করে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখা হয়। ওই সময় তারা মরদেহের পাশে চুন দিয়ে দেয়। যাতে করে মরদেহ মাটির সঙ্গে মিশে যায়। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান এসআই মামুন আল আবেদ।
Advertisement
মো. শাহাদাত হোসেন/এএম/এমএস