ইরানের এলটি ফোর্স হিসেবে পরিচিত ইসলামি বিপ্লবী নিরাপত্তা বাহিনীকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করায় যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা ও সমালোচনা করেছে চীন, তুরস্ক, কাতার ও ইরাক। তাছাড়া ইরানও যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক’ দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
Advertisement
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসওগ্লু মঙ্গলবার মার্কিন সরকারকে সতর্ক করে বলেন, দেশটির এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন বহির্ভূত। যার ফলে এই অঞ্চলে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে। মার্কিন সিদ্ধান্তকে একপেশে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে সন্ত্রাসী বলাকে আমরা সমর্থন করি না। আর একইভাবে একতরফা কোনো সিদ্ধান্তও সমর্থনযোগ্য নয়।’ যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য বলেও অভিহিত করেন তিনি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু ক্যাং বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষমতার রাজনীতির পরিবর্তে সব দেশের মৌলিক নির্দেশনা ও নীতিমালা মেনে চলা উচিত। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য বাইরের শক্তিগুলো আরো গঠনমুলক ভূমিকা রাখবে বলেও আশা করেন তিনি।
Advertisement
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুর রহমান আল সানি যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, অন্য দেশের সশস্ত্র বাহিনীর আচরণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ প্রকৃতপক্ষে সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখবে না।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদিল আবদুল মাহদি বলেছেন, মার্কিন সিদ্ধান্তের ফলে ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং এ অঞ্চল আরও অস্থিতিশীল হবে। মার্কিন সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ও মিশর সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবারের মতো কোনো দেশ অন্য দেশের সামরিক বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিলেন। সোমবার এক বিবৃতির মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন তিনি।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড কোর্পস বা আইআরজিসি’র প্রাথমিক অর্থ হলো এর মাধমে দেশটির ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদী ক্যাম্পেইনে’র বাস্তবায়ন করা।
Advertisement
২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে করা ছয় পরাশক্তির পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে আসা পর থেকে ওয়াশিংটন-তেহরান সম্পর্কের পতন হতে থাকে। তারপর থেকে ইরানের ওপর নানারকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটির অর্থনীতিকে নাজুক অবস্থায় নিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এই অভূতপূর্ব পদক্ষেপের মাধ্যমে যে সত্যটাকে স্বীকৃতি দেয়া হলো তা হচ্ছে, শুধুমাত্র ইরান সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষক নয় তাদের আইআরজিসি সক্রিয়ভাবে এতে অংশগ্রহণ, অর্থায়নের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্র পরিচালনার একটি অস্ত্র হিসেবে প্রচার চালায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন অনেকেই। কোনো দেশের সেনাবাহিনীকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দেয়ার এই সিদ্ধান্ত শেষে মার্কিন সেনাবাহিনী ও দেশটির গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জন্য বুমেরাং হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। দেখা যাবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নাখোশ রাষ্ট্রগুলোও একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। গত শনিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনের তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছিল, সোমবার প্রথম প্রহরেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
এসএ/এমএস