জাতীয়

স্বপ্রণোদিত হয়ে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কিনছেন ভবন মালিকরা

>> স্বপ্রণোদিত হয়ে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি কিনছেন অনেকেই>> বেড়েছে অগ্নিনির্বাপণ পণ্যের চাহিদা ও বিক্রি>> হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে দামও

Advertisement

রাজধানীর আজিমপুরে ৪ নম্বর নতুন পল্টন লাইনের সুইট হোম অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটি খুব উঁচু নয়, মাত্র ছয়তলা। আগুন কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভবনের বাসিন্দাদের জরুরি নির্গমনের প্রয়োজন হলে বিকল্প কোনো পথ নেই। তবে ভবনটির সিঁড়িগুলো প্রশস্ত।

এতদিন ভবনটির বাসিন্দারা এ নিয়ে কোনো চিন্তা ভাবনা না করলেও সম্প্রতি বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ২৩তলা এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে অ্যাপার্টমেন্ট মালিকরা জরুরি বৈঠকে বসে দ্রুত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি কেনার সিদ্ধান্ত নেন।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে ভবনটির ম্যানেজার হাশমত আলীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন ফ্লোরে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) স্থাপনের কাজ চলছিল।

Advertisement

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে হাসমত আলী বলেন, সর্বশেষ সভায় উপস্থিত সবার ‍মুখে ঘুরে ফিরে শুধু এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে সেদিন বাঁচার জন্য অসহায় মানুষের চিৎকার, ভবনের ওপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামার চেষ্টা ও লাফিয়ে পড়া কিংবা হাত ফসকে বহুতল ভবন থেকে নিচে পড়ে হতাহতের ঘটনা আলোচনায় উঠে আসে। তাই মালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি ফ্লোরে ফায়ার এক্সটিংগুইশার লাগানো হচ্ছে। ৫ কেজি ওজনের পাউডারের সিলিন্ডার ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ৬ কেজি লিকুইড সিলিন্ডার ৪ হাজার ৩০০ টাকায় কিনে এনেছেন।

শুধু আজিমপুর নতুন পল্টন লাইনের ওই ভবনটির বাসিন্দাই নন, তাদের মতো রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা অগ্নিকাণ্ড নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে তাদের অনেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি কিনছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সম্প্রতি বনানীর এফআর টাওয়ারসহ রাজধানীর বেশ কিছু স্থানে অগ্নিকাণ্ডের পর বিভিন্ন প্রকারের অগ্নিনির্বাপণ পণ্যের চাহিদা ও বিক্রি বেড়েছে। শুধু আবাসিক ভবনের মালিকরাই নন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, বহুতল ভবনসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে এসব অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। হঠাৎ এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে দামও। তবে চাহিদা অনুপাতে মজুত না থাকায় পণ্য সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। অনেকেই টাকা নিয়ে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি কিনতে গিয়ে ফিরে আসছেন কিংবা কয়েকদিন পর ডেলিভারি নেয়ার শর্তে আগাম বিল পরিশোধ করে আসছেন।

জানা গেছে, সিওটু ফায়ার এক্সটিংগুইশারের দাম এখন প্রায় ৪ হাজার টাকা, যা আগে ২৫শ’ টাকায় পাওয়া যেত। অন্যদিকে, ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার এক্সটিংগুইশার বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় যা আগে ১ হাজার টাকায় পাওয়া যেত।

Advertisement

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের এক কর্মকর্তা জানান, অগ্নিনির্বাপণের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। ভবনের উচ্চতা, আয়তন, ডিটেকশন ও প্রটেকশনের সিস্টেমের ওপর দাম নির্ভর করে। ডিটেকশন সিস্টেম ব্যয়বহুল হওয়ায় প্রটেকশনের জন্য এক্সটিংগুইশারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বহুতল ভবন হলেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের অনুমোদন নিতে হয়। এক্ষেত্রে ছয়তলা ভবনগুলোকে বহুতল ভবন বলা হয়। ছোট ভবনগুলোর ক্ষেত্রেও নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা জরুরি বলে ওই কর্মকর্তা অভিমত ব্যক্ত করেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৭ জন নিহত ও ১৩০ জন আহত হন। এর একদিন পরই ৩০ মার্চ গুলশান ডিএনসিসি মার্কেট কাঁচাবাজারে আগুন লাগে। ১ এপ্রিল রাজধানীর ডেমরা ও গাউছিয়া মার্কেটেও অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

এমইউ/এমএমজেড/এমকেএইচ