দেশজুড়ে

দেশের জন্য এমন মৃত্যু গৌরবের

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকণ্ডে নিহত ফায়ারম্যান সোহেল রানা। আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসীর চোখের জলে তাকে জানানো হলো শেষবিদায়।

Advertisement

মঙ্গলবার বাদ আসর উপজেলার চৌগাঙ্গা পুরানবাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে বিকেলে সোহেল রানার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

সবশেষ গত ২৩ মার্চ গ্রামের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল সোহেল রানার। সেদিন বাড়ি থেকে ঢাকায় যাওয়ার সময় মাকে বলেছিলেন- ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে শিগগিরই বাড়ি ফিরবেন। বাড়ি ফিরেছেন সোহেল রানা। তবে ছুটি মিলেছে জীবন থেকেই!

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অ্যাস্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে আনা হয় সোহেল রানার মরদেহ। এ সময় চারদিকে কান্নার রোল পড়ে। সোহেলের মা-বাবাসহ আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ। এ সময় তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী ও পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ।

Advertisement

বিকেল পৌনে ৬টায় চৌগাঙ্গা পুরান বাজার জামে মসজিদের সামনের মাঠে সোহেলের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পড়ান সোহেলের চাচাতো ভাই মেরাজুল ইসলাম নোমান। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ছাড়াও ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, সহকারী কমিশনার সাইফুল ইসলামসহ ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। জানাজা শেষে বাড়ির সামনে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় বীরযোদ্ধা সোহেল রানাকে।

স্বজন ও এলাকাবাসী বলছেন, পরিবারের বড় সন্তান সোহেল রানা ছিলেন সংসারের একমাত্র অবলম্বন। ফায়ার সার্ভিসের চাকরির টাকায় চলতো পরিবারের ভরণপোষণ আর ছোট তিন ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ। তাইতো প্রিয়জনের এমন অপ্রত্যাশিত মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। তবে এলাকাবাসী বলছেন, দেশের জন্য এমন মৃত্যু সবার জন্য গৌরবের।

এ দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার।

গত ২৩ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় সেখানে আটকে পড়াদের উদ্ধার করার সময় গুরুতর আহত হন ফায়ারম্যান সোহেলে রানা। তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গত ৫ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। সেখানকার সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বাংলাদেশ সময় ভোররাতে তার মৃত্যু হয়।

Advertisement

নূর মোহাম্মদ/বিএ