নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় আগুনে একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন। দগ্ধদের প্রথমে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুন ও রবিন নামে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
Advertisement
মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার উত্তর বাখননগর ইউনিয়নের লোচনপুর গ্রামের বিপ্লবদের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধদের স্বজনরা বলছেন, ঘরে পেট্রলবোমা মারা হয়েছে। সেই আগুনে চারজন দগ্ধ হন।
তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, ঘটনাস্থলে বড় ধরনের কোনো অগ্নিকাণ্ডের আলামত পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলে পেট্রলবোমা বা গানপাউডারের কোনো আলামত মেলেনি।
দগ্ধদের মধ্যে রয়েছেন একই পরিবারের তিন বোন। তারা হলেন- উপজেলার লোচনপুর গ্রামের সামসুল মিয়ার মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী প্রীতি আক্তার (১১), এসএসসি পরীক্ষার্থী মুক্তামণি (১৬), অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুইটি আক্তার (১৩)। দগ্ধ অন্যজন তাদের ফুফু খাতুন্নেছা (৬০)।
Advertisement
স্থানীয়রা জানায়, জমি-সক্রান্ত বিরোধ নিয়ে লোচনপুর গ্রামের দুলাল মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের মৃত শামসুল মিয়ার ছেলে বিপ্লবের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে দুপক্ষের দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের দুলাল মিয়া খুন হন।
এরপর থেকে বিপ্লবদের গোটা পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। বিপ্লব একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় পলাতক। বিপ্লব মিয়ার পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা না থাকায় সোমবার ফুফুকে নিয়ে বিপ্লবের তিন বোন বাড়ি আসেন। ওইদিন প্রতিপক্ষের আগুনে পোড়া আগের একটি ঘরে রাতযাপন করেন ফুফুসহ চারজন। ভোররাতে ঘরের চার পাশে আগুন ধরে। এতে অগ্নিদগ্ধ হন বিপ্লবের তিন বোন ও ফুফু। তবে কীভাবে আগুনের ঘটনা ঘটেছে তা জানাতে পারেনি কেউ।
খবর পেয়ে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মেরাজ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিউর রহমান, রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
দগ্ধ তিন বোনের মধ্যে বড় বোন রত্না আক্তার জানান, প্রতিবেশী শিপন ও কাজলদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা নিয়ে তাদের বিরোধ চলছে। এরই মধ্যে হত্যা মামলার মিথ্যা আসামি করা হয় তার দুই ভাই সোহাগ ও বিপ্লবকে। এখন তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরপর থেকে প্রতিপক্ষরা নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল তাদের। সর্বশেষ তারা এ ঘটনা ঘটায়।
Advertisement
রায়পুরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন লিডার কাজী মোহাম্মদ রুমান বলেন, ঘটনাস্থলে বড় ধরনের কোনো অগ্নিকাণ্ডের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে একটি রুমে আগুন জ্বলছিল। একটা কাঠের টুকরায় জ্বলা আগুন ঘরের বাইরে নিয়ে যাই আমরা। পরে তা একটু পানি দিয়ে নেভানো হয়।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থলে পেট্রলবোমা বা গানের কোনো আলামত মেলেনি। তবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে দগ্ধদের বিরোধ রয়েছে। বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। এরপর থেকে তারা বাড়িতে থাকতেন না। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুন ও রবিন নামে দুজনকে আটক করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের মেডিকেল অফিসার ডা. এনায়েত কবির বলেন, চারজন দগ্ধ রোগীর সবার দুই হাত-মুখসহ শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এর মধ্যে খাতুন্নেছার শরীরের ১২ শতাংশ, প্রীতির ১৫ শতাংশ, মুক্তামণির ১০ শতাংশ ও সুইটির ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।
সঞ্জিত সাহা/এএম/এমএস