১৯৬০ সালের দিকে নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলস যেতে বিমানে সময় লাগতো ৫ ঘণ্টা । নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন যেতে লাগতো মাত্র ৪৫ মিনিট। বর্তমানে সেই একই ফ্লাইটে নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলস যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টার বেশি এবং নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন যেতে লাগে ৭৫ মিনিট।
Advertisement
একটু সময় নিয়ে ফ্লাইট যাত্রাকে সাধারণত শিডিউল বিপর্যয় বা প্যাডিং বলা হয়। তবে কোনো এয়ারলাইন্স এ ব্যাপারে কাউকে কিছু জানায় না। বিমান যাত্রা দীর্ঘ করার কারণগুলো তারা সাধারণের কাছে গোপন রাখে।
এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাত্রা শুরু করতে এয়ারলাইন্সগুলো যে অতিরিক্ত সময় দেয় সেটাকে প্যাডিং বলে। কারণ ফ্লাইটগুলো প্রতিনিয়ত দেরি হয়। এ পরিস্থিতির সমাধান না করে বরং কয়েক দশক ধরে শিডিউল বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই বিশ্বের বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সগুলো চলছে।
নিয়মিত প্যাডিং বা অতিরিক্ত সময় নেয়ার ফলে যাত্রীদের যথেষ্ট ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবে ফ্লাইট দেরি করে ছাড়লেও তা ঠিক সময়ে পৌঁছালে যাত্রীরা প্রশান্তি পায়।
Advertisement
দেরিতে ফ্লাইট ছাড়াটা বৈশ্বিক সমস্যা। দেরিতে প্লাইট ছাড়ার এ প্রবণতাটি নানা ধরনের সঙ্কট তৈরি করে। এটা যে শুধু যাত্রীদর মূল্যবান সময় কেড়ে নেয় তা নয়, মানুষের নিয়মানুবর্তিতায় এক ধরনের বিভ্রম তৈরি করে। এ সঙ্কট কাটাতে এয়ারলাইন্সগুলোকে আরও দক্ষ হওয়া দরকার। কিন্তু দক্ষ হওয়ার কোনো চাপ এয়ারলাইন্সগুলোর নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন বিভাগের এয়ার ট্র্যাভেল কনজিউমার রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বিমান পরিচালনা পরামর্শক সাইট এটিএইচ গ্রুপের সভাপতি ক্যাপ্টেন মাইকেল বায়াদা বলেন, অতিরিক্ত সময় নেয়া সত্ত্বেও ৩০ শতাংশ ফ্লাইট প্রতিদিন গড়ে ১৫ মিনিট দেরিতে বিমানবন্দর পৌঁছে।
তিনি বলেন, প্যাডিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে বোকা বানানোর খেলা খেলছে। এয়ারলাইন্স যদি তাদের পরিচালনা সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতো, তাহলে যাত্রীরা লাভবান হতো।
প্যাডিং করলে জ্বালানিতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ পড়ে। এছাড়া নানা ঝামেলা তৈরি হয়। এয়ারলাইন্সের দক্ষতা বাড়লে অর্থ খরচ কমবে। এর ফলে সবাই উপকৃত হবে।
Advertisement
এয়ারলাইন্সগুলো গ্রাহকদের মূল্য ভালো বোঝে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন অধিদফতর অনুযায়ী, ডেল্টা এয়ারলাইন্স সাধারণত দীর্ঘ যাত্রায় যায়। এর কারণ, তারা নিশ্চিত করতে চায় যে, তাদের ফ্লাইট সময়মত পৌঁছে।
নতুন উড়োজাহাজ, কেবিন এবং বিমানবন্দরের সুবিধা বাড়াতে সংস্থাটি ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু ভাড়া বাড়াতে অন টাইম পারফর্মেন্সে বেশি জোর দিতে থাকে সংস্থাটি।
এখন প্রশ্ন, ঠিক সময়ে পৌঁছানোর জন্য যাত্রীদের যদি অর্থ দিতেই হয়, তাহলে ফ্লাইটে সময় নেয়ার পরিবর্তে এয়ারলাইন্সগুলো কেন দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে না?
বিমানের প্রধান অর্জনটা হচ্ছে, ঠিক সময়ে বন্দরে পৌঁছানো। যদি কোনো ফ্লাইট আগে কিংবা দেরিতে আসে তাহলে সেটা বেশ কয়েকটি জিনিসকে বিপর্যস্ত করে। এর ফলে গেটে জায়গার সঙ্কট দেখা দেয় এবং ধারণক্ষমতা অনুযায়ী বন্দরগুলো বিমান রাখতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, নিয়মানুবর্তিতা ব্যাখ্যার জন্য আলাদা একটা ভাষা আছে। প্রথম বিমানটি যদি ১৫ মিনিট দেরিতে বিমানবন্দরে পৌঁছে তাহলে ১৫ নম্বর বিমানটিরও ১৫ মিনিট দেরি হবে। কিন্তু প্রথম বিমান এবং ১৪ নম্বর বিমানটির মধ্যকার বাকি বিমানগুলোর ক্ষেত্রে এ বিলম্বটা আসলে ‘বিলম্ব হিসেবে’ বিবেচিত হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারলাইন্স শিল্প সংস্থা অনুযায়ী, আরও দক্ষ বিমান চলাচল পথ সক্রিয় করতে বৈশ্বিক এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলো কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। কিন্তু এ প্রক্রিয়ার উপর সুঁচ হয়ে বসে আছে ‘বিলম্ব’। যে কারণে দক্ষভাবে বিমান চলাচলের প্রকিয়া ৩০ শতাংশে আটকে আছে।
বেশ কয়েকটি কারণে বিলম্ব হতে পারে। কিন্তু বায়াডার মতে, বিলম্বের পেছনে ৮০ শতাংশ কারণ জড়িত। যেমন- শিডিউল বিপর্যয়, বিমানের প্রাপ্যতা, গেট প্রাপ্যতা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ক্রু বৈধতা। এ বিষয়গুলো এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রাধীন। কিন্তু বর্তমানে বিমান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বের মতো বিষয়টি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রকের হাতে ছেড়ে দিয়েছে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।
বায়াডা বলেন, কোনো বিমান যদি একবার গেটে আসে, এটা পরবর্তী বন্দরে পৌঁছানো পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা থাকে না।
তিনি বলেন, একটা ভালো উপায় আছে। তারা তাদের বিমান ট্র্যাকিং করে ফ্লাইট পরিচালনায় ভারসাম্য আনতে পারে। এছাড়া ফ্লাইটের গতি দেখে এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
অবসরপ্রাপ্ত এয়ারলাইন নির্বাহী কর্মকর্তা টম হেন্ড্রিক্স বিবিসিকে বলেন, বিমান চলাচলের সিডিউলগুলো এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তৈরি করে। কিন্তু যে কোনো দিন আবহাওয়া, বিমান ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ বা কোম্পানির নেটওয়ার্কে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তখণ এ সিডিউল প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই এ সিস্টেমে ভারসাম্য আনতে হবে আনা জরুরি।
হেন্ড্রিক্সের মতে, বিমানবন্দরে বিমানের প্রবাহ নিশ্চিত করতে এয়ারলাইন্সগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এটা তাদের অর্থনৈতিক সাফল্যের অবিচ্ছেদ্য কাজ। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল আধুনিকায়নে এ বিলম্বের সমস্যা মোকাবেলা করা যেতে পারে।
এয়ারলাইন্সের গেমিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা দাঁড়ায় যে, ফ্ল্যাইটের সময় যত বাড়বে তত বিমান আকাশে উড়বে। তবে প্যাডিং কখনো বিমান চলাচল পদ্ধতির মধ্যে পড়ে না। এটা যাত্রীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সূত্র : বিবিসি
এমএসএইচ/জেআইএম