বিনোদন

হলিউড বলিউডের সঙ্গে আমাদের তুলনা করবেন না : অপূর্ব

কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাটকটির নাম ‘বড় ছেলে’। ইউটিউব ভিউয়ের দিক থেকেই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে নাটকটি। এরই মধ্যে দুই কোটির মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছে এটি।

Advertisement

এ নাটক দিয়ে দীর্ঘদিন পর আলোচনায় আসেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। তারপর থেকে আবার অভিনয়ের তুমুল ব্যস্ততা ঘিরে রেখেছে তাকে। সারাবছরই অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি। নানামাত্রিক চরিত্রে নিজের অভিনয় স্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।

অভিনয় দিয়ে পৌঁছেছেন সাফল্যের শিখরে। বর্তমানে বৈশাখের নাটক নিয়ে তার ব্যস্ততা। সম্প্রতি উত্তরার একটি শুটিং হাউসে নাজমুল রনির পরিচালনায় ‘এই বৈশাখে’ শিরোনামের একটি নাটকে অভিনয় করছিলেন অপূর্ব। শুটিংয়ের এক ফাঁকেই আলাপ হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই সাম্প্রতিককালের নাটক নির্মাণ, নিজের ক্যারিয়ার ও নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। তুলে ধরা হলো আলাপের চুম্বক অংশ।

জাগো নিউজ : বৈশাখের কাজ নিয়ে ব্যস্ততা দেখছি। এবার বৈশাখ উপলক্ষে কয়টি নাটকে অভিনয় করা হলো?

Advertisement

অপূর্ব : এটা ঠিক হিসাব করে বলতে পারবো না। এর মধ্যে বি ইউ শুভ পরিচালিত একটি নাটকে অভিনয় করলাম। নাটকটির নাম ‘প্রস্থান’। এখানে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছে মেহজাবীন। এখন যেই নাটকটিতে অভিনয় করছি এটিও বৈশাখের নাটক। নাটকটির পরিচালক নাজমুল রনি। এখানে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন মম।

বাবু সিদ্দিকীর ‘মেঘলা মেঘলা দিনে’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেছি। এখানে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন সাফা কবির। সজিবের ‘আমি প্রেমিক’ নামেরি একটি নাটকে অভিনয় করেছি। এখানে আমার বিপরীতে মেহজাবীন অভিনয়। আরও বেশকিছু নাটকে কাজ করেছি।

জাগো নিউজ : নাটকে রোমান্টিক হিরো হিসেবে আপনাকে বেশি পাওয়া যায়। অনেক সময় ঘুরেফিরে একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। এই সমস্যার সমাধান কী?

অপূর্ব : একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে ভালো লাগে না। আমি মনে করি আমাদের কাজের কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটি বাড়াতে হবে। এক ঘণ্টার নাটক আমরা অধিকাংশ সময় দুই দিনে শুটিং শেষ করি। এটা যদি চার দিনে শুটিং করা হয় তখন পরিচালক সময় পাবেন। কমন একটা গল্পও কিন্তু প্রেজেন্টেশনের কারণে ডিফারেন্ট হয়ে যায়। সেই সুযোগটা আমাদের এখানে নেই।

Advertisement

ভাতের মধ্যে যখন আমরা হলুদ মিশিয়ে ভাজি করি তখন সেটাকে কিন্তু ভাত ভাজি বলে। রঙটা অন্যরকম হয়। স্বাদটাও একটু আলাদা লাগে। একই ভাত কিন্তু নানা রকমভাবে খাওয়া যায়। সেটার জন্য সময় লাগে। একটু মেধাও খরচ করতে হয়। এমনটা করতে পারলে আমার মনে হয় যখন কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটি বেড়ে যাবে। তখন কাজের লোড থাকবে না। সবকিছু মিলিয়ে ভালো কিছু হবে।

জাগো নিউজ : অনেক সংকটের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের নাটক। মূল সংকট কী? সমাধান কী?

অপূর্ব : আমার নানা ধরনের বিষয়বস্তু তুলে ধরি মাঝে মধ্যে। কিছু কিছু বিষয় অনেক স্পর্শকাতর হয়ে যায়। কিছু কিছু বিষয় দর্শকরা আগে পিছে না ভেবে নেগেটিভলি নিয়ে নেন। কিছু কিছু গল্পের ক্ষেত্রে সরকারের সাপোর্টও প্রয়োজন হয়। তাই বিশেষ করে পলেটিক্যাল ইস্যুর কোনো গল্পে কেউ যুক্ত হতে চায় না।

সমসাময়িক সমস্যা নিয়ে কোনো একটা নাটক আমরা তৈরি করবো, সেটা নিয়েও অনেক রকম বাঁধার সম্মুখীন হই। ভালো কোনো গল্প অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ গল্প মনে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ গল্প আমরা করি না। সবাইকে অনেক সাপোর্টিভ হতে হবে। দর্শকদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতার একটা ব্যাপার তো থাকেই। কাজের আরও স্বাধীনতা থাকলে নতুন নতুন অনেক ধরনের গল্প আসবে, আমরাও বৈচিত্র্যময় কাজের সুযোগ পাব।

জাগো নিউজ : টেলিভিশন চ্যানেল বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রোডাকশন বাড়ছে। প্রযোজনের খাতিরেই কিংবা অনুরোধে যেই গল্পটা এড়িয়ে যেতে পারতেন সেটাও এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এমন হয় কী?

অপূর্ব : হয় তো। তবে আমরা কথা হচ্ছে ১০টা এভারেজ টাইপের কোনো নাটক না বানিয়ে একটা নিখুঁত প্রোডাকশন বানানো হলেই ভালো হতো। তাহলে ওই একটা প্রোডাকশনই মানুষ ১০ বার দেখতো। এটাতো একটা ইন্ডাস্ট্রির ব্যাপার, ধুম করে কিছু হবে না। আগের চেয়ে এখন একটু সময় নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে অনেকেই এটা ভালো লাগে। যারা এখন সময় নিয়ে কাজ করছে না, তারাও একটা সময় গিয়ে ঠিক হবে বলে আশা করি।

জাগো নিউজ : আপনার অভিজ্ঞ অভিনয় ও ইমেজ দিয়ে অনেক সময় একটা নরমাল গল্পের নাটকও উৎরে যাচ্ছে। এটাকে কী বলবেন?

অপূর্ব : এখানে আসলে উৎরে যাওয়ার কিছু নেই। দর্শকের ভালো লাগা মন্দ লাগাটাই আসল। অভিনয়টা করার জন্য করলাম কিন্তু কারোই ভালো লাগলো না, সেই কাজ করে তো লাভ নাই। গল্প ভালো না হলেও কিছু কিছু সময় হয়তো ভালো অভিনয় দিয়ে পার পাওয়া যায় কিন্তু সেটা উদাহরণ নয়। সংখ্যায় কম হলেও যখন ভালো কাজ করার চিন্তা করবে সবাই তখন ভালো কাজের সংখ্যা বাড়বে।

জাগো নিউজ : নাটকে ভ্যারিয়েশন আনাটা কী খুব কঠিন?

অপূর্ব : আমাদের দেশের নাটকে ভ্যারিয়েশন আনা অনেক কঠিন হয়ে গেছে। এখানে খণ্ড নাটকের যে প্রচলন, এটা কিন্তু পৃথিবীর আর অন্য কোনো দেশে নাই। ৪০ মিনেটের এত নাটক হয়। কাছাকাছি গল্প কিছু হয় তো থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।

প্রতি তিন দিনে যদি একটা খণ্ড নাটক হয় তাহলে মাসে ১০টা গল্প। সেটা যদি আমি একা করি তাহলে মাসে আমারই ১০টা নাটক হয়। সেখানে আরও শত শত শিল্পী আছেন যারাও অনেক অনেক নাটকে অভিনয় করছেন। কেউ কারো গল্প তো কপি করছে না এখানে। সবই আলাদা গল্প নিয়ে নাটক হচ্ছে।

এরমধ্যে ভ্যারিয়েশান আনাটা অবশ্যই কঠিন। আশার কথা হলো কিছু ডিরেক্টর, প্রযোজক, প্রডাকশন হাউস সময় নিয়ে ভালো কাজ করার চেষ্টা করছে।

জাগো নিউজ : কাজের মান কমে যাওয়ার পেছনে বাজেটেরও তো প্রভাব পড়ে!

অপূর্ব : সেটা তো আছেই। এটা তো চ্যারিটি প্রোগ্রাম না। ব্যবসার চিন্তাও করতে হয়। একটা নাটকে কত টাকা খরচ হচ্ছে, বাজেট কতো, খরচ উঠে আসবে কি-না সব কিছু মাথায় রেখেই নাটক নির্মাণ করতে হচ্ছে।

জাগো নিউজ : নাটকের ভ্যারিয়েশন নিয়ে অনেকে অনেক রকম ধারণা করেন। আপনার ধারণাটি কেমন?

অপূর্ব : ভ্যারিয়েশন মানে শুধুই লুক পরিবর্তন করা না। গল্প, ক্যারেক্টার, পরিচালনা, লোকেশন, এডিটিং, পোস্টার ডিজাইন সব কিছুতে ভ্যারিয়েশন থাকতে হয়।

জাগো নিউজ : একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। কোন চিন্তাটা অপূর্বকে সবসময় সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়?

অপূর্ব : আমি আসলে ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কিছু করি না। আমি বর্তমানের সাথে বাঁচি, এটা সবসময়ই বলে আসছি। আমি মনে করি, আমি যখন সুন্দর একটা বর্তমান পার করবো তখন আমার জন্য সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করবে। আমার মানসিক শক্তি হিসেবে কাজ করে আমার স্রষ্টা। আমার পরিবার ও দর্শক প্রেরণা জোগায়।

জাগো নিউজ : অপূর্বর প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ আছে?

অপূর্ব : না, অপূর্ব কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে না। সবাইকে সে সহশিল্পী মনে করে। কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী না, তার কলিগ হিসেবে ট্রিট করে। একই পরিবারে কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী হয় না। এখানে রেসের কিছু নেই। সুতারাং আমরা সুন্দর সম্পর্কে একটি সুন্দর ইন্ডাস্ট্রির জন্য কাজ করে যেতে চাইছি। জাগো নিউজ : এখন ইউটিউব চ্যানেলের জন্যও আলাদাভাবে নাটক নির্মাণ করা হচ্ছে। টেলিভিশন চ্যানেলের নাটকগুলোও ইউটিউবে দেওয়ার পর প্রচুর দর্শক পাচ্ছে। আপনার কী মনে হয় এমন দিন আসবে যখন দর্শক আর টেলিভিশনে নাটকই দেখবে না?

অপূর্ব : এক সময় টেলিভিশনে দর্শক নাটক দেখবে কি-না এটা সময় বলে দেবে। তবে আমি বলবো একটা সময় মানুষ শুধু মঞ্চে নাটক দেখতো, এরপর রেডিওতে নাটক শুনতো। টেলিভিশনে নাটক দেখা শুরু হলো। এখন অনলাইনে দেখছে। প্রযুক্তি বদলাবেই। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলাতেই হবে।

জাগো নিউজ : কোনো কারণে খুব হতাশ হয়েছেন, আবার সেই হতাশা কাটিয়ে উঠেছেন এমন কোনো গল্প শেয়ার করবেন। যা দর্শকদের অনুপ্রেরণা হতে পারে.....

অপূর্ব : অনেক বড় বড় মানুষ, ঋষি, মণীষীরা বলেন, সময় নাকি ঘুরে। ভালো সময় যেমন সবসময় থাকবে না মন্দ সময়ও চিরস্থায়ী নয়। মানুষের জীবনটাই এমন। উত্থান পতন নিয়েই মানুষের জীবন। কোনো কিছুই থেমে থাকবে না। সময়ের সাথে সাথে সব কিছু চলবেই।

স্রষ্টার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। চিন্তা করতে হবে। আজকে হয় তো আমার খারাপ সময় যাচ্ছে, আগামীতে এই সমস্যা থাকবে না। হতাশাগ্রস্ত হয়ে বসে পড়লে চলবে না। উঠে দাঁড়াতেই হবে। আসলে এগুলো বলছি হতাশা কাটানোর অভিজ্ঞতা থেকেই। নিজেকেই উঠে দাঁড়াতে হয় প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে।

জাগো নিউজ : গ্যাংস্টার রিটার্ন সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। পরে আর আপনাকে সিনেমায় দেখা যায়নি কেন?

অপূর্ব : অনেক কারণ আছে। বলতে গেলে লম্বা সময় লাগবে। এরমধ্যে একটা কারণ হলো ভালো পরিচালক, ভালো গল্প আমার কাছে আর আসেনি। আমাদের এখানকার নাটকের কথা যদি বলি তাহলে আমি আমার এই অবস্থানে থেকে অনেক বেশি তৃপ্ত। আমি অনেক ভালো আছি। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, পাচ্ছি, আরও হয়তো পাবো। সুতরাং এরচেয়ে বেটার কিছু যদি আমি না দেখি তাহলে নতুন একটা জগতে আমি কীভাবে যাবো, কেন যাবো?

জাগো নিউজ : সিনেমায় এখন অনেক পরিবর্তন আসছে। এ মুহূর্তে নিজেকে কোন ধরনের সিনেমায় দেখতে চান?

অপূর্ব : এটা আমার মুডের উপর নির্ভর করবে। দেখা যাচ্ছে হঠাৎ এমন একটা গল্প নিয়ে কেউ আমার সামনে হাজির হয়ে গেল আমি না করতে পারছি না। কারণ আমার সেটা ভালো লেগেছে। তবে যাই করি না কেন সেটা আমার মনের মতো হতে হবে।

জাগো নিউজ : আমরা আলাপের শেষের দিকে, আপনার রাজপুত্র আয়াশের খবর জানতে চাই। ও কেমন আছে?

অপূর্ব : ভালো আছে। স্কুলে যাচ্ছে। নার্সারিতে পড়ে এখন।

জাগো নিউজ : আয়াশ একটা নাটকে অভিনয় করেছিল। অনেক প্রসংশা পেয়েছে। নতুন কোনো নাটকে কি অভিনয় করছে আর?

অপূর্ব : না। আর কোনো নাটকে অভিনয় করেনি।

জাগো নিউজ : সবশেষে আপনার দর্শকদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?

অপূর্ব : দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলার এতটুকুই যে, দর্শকরা সব সময় আমাদের সাথে ছিল। আশা রাখি ভবিষ্যতেও সাথে থাকবে উৎসাহ দেবে। আমরা অনেক লিমিটেশনের মধ্যে তাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য কাজ করি।

আমার একটা অনুরোধ আছে, অনেক সময় আমাদের নাটক নিয়ে আগে পিছে কোনো চিন্তা না করেই অন্যদেশের কাজের সঙ্গে তুলনা করা হয়। হলিউডে এমন হয়, বলিউডে এমন হয় আমাদের কেন হয় না। এমন তুলনা করবেন না প্লিজ।

হলিউড বলিউডে কাজের যে সুব্যবস্থা আছে আমাদের সে সুব্যবস্থা নাই। ওখানকার যেসব সুবিধা তা তো আমরা পাই না। তাহলে তাদের সঙ্গে তুলনাটা কেন হবে। এ বিষয়গুলো বুঝতে হবে। আমরা কতটুকু করতে পারি দর্শক তা ভালো করেই জানেন। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা। বাজেট অল্প, বাজার অল্প। তার মধ্যে একটা আদর্শ ঠিক রেখে কাজ করতে হয়।

আমাদের যা সাধ্য তারমধ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দর্শক কালে কালে এতেই বিনোদিত হয়েছে, আগামীতেও হবে। দর্শকদের জন্য ভালোবাসা।

এমএবি/এলএ/এমকেএইচ