পরিকল্পিত পর্যটন ও শিল্পায়নের স্বার্থে শিগগিরই শুরু হচ্ছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলীয় আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ। বর্তমানে বিদ্যমান চট্টগ্রাম-ঈদমনি পর্যন্ত ৭৬ কিলোমিটার সড়কের সঙ্গে কক্সবাজার-চকরিয়ার ঈদমনি পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে ১২০ ফুট প্রস্তে এটি নির্মাণে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পও প্রস্তাব করছে মন্ত্রণালয়।
Advertisement
এটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগে দূরত্ব কমবে প্রায় ৫২কিলোমিটার। আর সময় বাঁচবে প্রায় ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা। কম দূরত্বে যোগাযোগে যুক্ত হচ্ছে শিল্পাঞ্চল হয়ে ওঠা মাতারবাড়িও। উপকূলীয় আঞ্চলিক মহাসড়ক পর্যটক ভোগান্তিসহ সব ধরণের দুর্ভোগ কমাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কক্সবাজারস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, ‘কক্সবাজার-চৌফলদন্ডি-ঈদমনি সড়ক’ নামে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প গত ১ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। চট্টগ্রামস্থ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় হয়ে প্রধান প্রকৌশলীর দফতরের মাধ্যমে পাঠানো প্রস্তাবিত প্রকল্পটি একনেকে উপস্থানের জন্য শিগগিরই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে একনেকে পাস হলেই দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, গত বছরের শুরুতে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ডিপিএম নামের একটি সংস্থাকে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। সংস্থাটি ১৩ মাস ধরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করে। কক্সবাজার সওজ বিভাগের প্রকৌশলীরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প চূড়ান্ত দাঁড় করায়। যা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে।
Advertisement
সওজ সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়। কক্সবাজার শহর থেকে খুরুশকুল বাঁকখালী নদী ও মহেশখালী চ্যানেলের তীর ধরে চৌফলদন্ডি-পোকখালী-খুটাখালী-ডুলাহাজারা ও ফাঁসিয়াখালী হয়ে ঈদমনি সড়কের সঙ্গে মিলিত হবে প্রস্তাবিত সড়কটি। বর্তমানে চট্টগ্রাম শহর থেকে ঈদমনি পর্যন্ত ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নেটওয়ার্ক রয়েছে। নতুন সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম শহর থেকে কক্সবাজার শহরের দূরত্ব এক তৃতীয়াংশ বা ৫২ কিলোমিটার কমে যাবে। এতে চট্টগ্রাম থেকে মাত্র দেড়-দুই ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছা যাবে কক্সবাজার শহরে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরের সঙ্গেও যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজতর হবে। এতে আরও বিকশিত হবে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প। এছাড়া দেশের মেগা শিল্পজোন মাতারবাড়ি-কক্সবাজারের দূরত্বও ৫০ কিলোমিটারের বেশি কমে যাবে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে আরও বেশ কয়েক বছর আগে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলীয় আঞ্চলিক মহাসড়ক বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথম ধাপে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অংশে সড়ক বাস্তবায়নের পর এবার কক্সবাজার অংশে আরও চওড়া সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
সওজ সূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে কক্সবাজার শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে ঈদমনি পর্যন্ত দূরত্ব ৩৬ দশমিক ৯০ কিলোমিটার উল্লেখ করা হলেও এ পথে নতুন সড়ক নির্মাণ করতে হবে মাত্র ২০ কিলোমিটার। এছাড়া বাকি ১২ কিলোমিটার সড়ক একটু চওড়া করতে হবে। শহরের জিরো পয়েন্ট বা হলিডে মোড় থেকে খুরুশকুল ব্রিজ পর্যন্ত বর্তমানে সড়ক রয়েছে। কস্তুরাঘাটে বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণাধীন দ্বিতীয় সেতুটি বাস্তবায়িত হলে নতুন সড়কটি শহরের সঙ্গে এ পথেই সংযুক্ত হবে। এ সড়কটির ফলে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ২শ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। পাশাপাশি শুরু হবে অর্থনীতির নতুন প্রাণ প্রবাহ।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলীয় আঞ্চলিক মহাসড়ক বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব এমএ আজিজ মাহবুব বলেন, সড়কটি বাস্তবায়িত হলে ২শ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রায় ৩০ হাজার একর সরকারি জমিতে শিল্পাঞ্চলসহ নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা যাবে। এতে কর্মসংস্থান হবে অন্তত ৫ লাখ মানুষের।
Advertisement
তিনি আরও জানান, প্রায় ১০ বছর ধরেই উপকূলীয় আঞ্চলিক মহাসড়ক গড়ে তোলার প্রস্তাবটি বিবেচনা করছে সরকার। কিন্তু মেগা প্রকল্প হওয়ায় তা প্রস্তুতিতেই অনেক সময় ক্ষেপণ হয়েছে। এবার আসল কাজ শুরু হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, প্রকল্পটির ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহ থাকায় এটি অগ্রাধিকার প্রকল্পেরও আওতাভুক্ত করা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) শুরুতে প্রকল্পটির টেন্ডার ঘোষণা করা হতে পারে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম-মাতারবাড়ি-কক্সবাজারের দূরত্ব কমার পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলের বিশাল এলাকা অর্থনৈতিক জোন হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/এমকেএইচ