জাতীয়

মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ফেনীর নুসরাত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বাইরে বসে আছেন ফেনীতে মাদরাসায় পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টায় দগ্ধ মেয়েটির বাবা এ কে এম মুসা মানিক। তেমন কথা বলছেন না। দিশেহারা হয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন।

Advertisement

এমন সময় ফেনী থেকে একজনের ফোন আসে তার মোবাইলে। তিনি বলেন, ‘মেয়ে মৃত্যুর সঙ্গে নড়ছে; ওকে লাইফ সাপোর্টে দিয়েছে, আপনারা দোয়া করেন।’ কথাটুকু বলেই ফোন কেটে দিলেন তিনি। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বাইরে একবার বসছিলেন, একবার উঠছিলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে দু-একবার কথা বলেছেন, কিন্তু বারবারই প্রসঙ্গ হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি।

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।

নুসরাত জাহান রাফির শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্ট দিতে বলেন চিকিৎসক। কিন্তু বাবা-মা তাকে লাইফ সাপোর্টে দিতে চাননি। পরে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে লাইফ সাপোর্টে দেয়ার জন্য ঢামেক কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দেন।

Advertisement

মেয়ের বিষয়ে বাবা মুসা মানিক জাগো নিউজকে বলেন, আপনারা আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন। আর কিছু বলতে পারব না।

মেয়ের বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ওর দায়িত্ব নিয়েছেন, তাই দোষীদের ন্যায়বিচারের বিষয়ে আমি আশাবাদী।

পাশে বসা মেয়ের মামা মো. সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ওকে বারবার জিজ্ঞেস করেছি বল কে তোর গায়ে আগুন দিয়েছে? উত্তরে সে আমাকে বলে, ‘মামা তাদের কণ্ঠটা আমার চেনা, আমার কাছের (পরিচিত) মানুষ, হাতটা ফর্সা। চেহারাটা মনে করতে পারছি না।’ আজ সকালেও তাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি, চেহারা বলতে পারে নাই।’

নুসরাতের চিকিৎসার বিষয়ে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, আজ (সোমবার) সকালে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে আমরা লাইফ সাপোর্টে দেই।

Advertisement

এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে ওই ছাত্রীর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। দগ্ধ ছাত্রীর বাড়ি সোনাগাজী পৌরসভার চরচান্দিয়া গ্রামে। সে আলিম পরীক্ষার্থী।

এ বিষয়ে দগ্ধ ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘আমার বোন সকালে আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে যায়। তাকে ফুঁসলিয়ে অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রিত কয়েকজন শিক্ষার্থী মাদরাসার ছাদে নিয়ে গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান।’

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ ওই যাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাহ- এমন অভিযোগ এনে ছাত্রীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

মামলার পর পুলিশ তাৎক্ষণিক অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে।

অন্যদিকে আরেকটি অংশ তার শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে। এদিকে এ ঘটনায় রোববার থেকে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাদরাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম ও অনির্দিষ্টকালের জন্য হোস্টেল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

এআর/জেডএ/জেআইএম