টপঅর্ডারে হাল ধরবেন অধিনায়ক রকিবুল হাসান আর শেষদিকে ঝড় তুলবেন অফস্পিনিং অলরাউন্ডার সোহাগ গাজী- চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে এটিই যেন মোহামেডান লিমিটেডের ব্যাটিংয়ের গল্প। আগের নয় রাউন্ডে বারবার দেখা গিয়েছে এমন চিত্র।
Advertisement
যার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলো প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে লিগের দশম রাউন্ডের ম্যাচেও। টপঅর্ডারদের ব্যর্থতার ভিড়ে দারুণ এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন রকিবুল, শেষ দিকে ১৪ বলে ৩৩ রানের ক্যামিও খেলেছেন সোহাগ গাজী। মাঝে রজিত ভাটিয়ার ৬৬ রানের ইনিংস মিলিয়ে প্রাইম ব্যাংকের সামনে ২৯৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে পেরেছে মোহামেডান।
আগের রাউন্ডেই শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে খেলেছেন ৮৪ রানের ঝলমলে ইনিংস। দেখিয়েছেন নিজের সেরা ফর্মের আভা। সে ধারাবাহিকতায় আজ বিকেএসপিতে প্রিমিয়ার লিগের দশম রাউন্ডেও দুর্দান্ত শুরু করেন মোহামেডান লিমিটেডের ড্যাশিং ওপেনার লিটন কুমার দাস।
তবে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি লিটন। ৬ চার ও ১ ছয়ের মারে খেলেছেন ৩৫ রানের ইনিংস। বাঁহাতি স্পিনার মনির হোসেনের বলে ধরা পড়েছেন মিডঅনে দাঁড়ানো নাহিদুল ইসলামের হাতে।
Advertisement
আউট হওয়ার আগে লিটনের ব্যাট থেকে আসা একমাত্র ছক্কায় ঘটেছে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা। বিকেএসপির চার নম্বর মাঠের সীমানার বাইরে বড় ছাতার নিচে বসেছিলেন জুয়েল নামের একজন মাঠকর্মী। উপভোগ করছিলেন লিটনের দর্শনীয় ব্যাটিং।
কিন্তু দশম ওভারের প্রথম বলে লিটনের ব্যাট থেকে আসা শটেই মাঠ ছেড়ে চলে যেতে হয় সে মাঠকর্মীকে। মনির হোসেনের করা বলে সজোরে ডিপ মিড উইকেট বাউন্ডারিতে হাঁকান লিটন। যা সীমানার বাইরে থাকা ছাতার ভেদ করে নিচে বসে থাকা মাঠকর্মীর ঠোটে গিয়ে আঘাত হানে।
শটটি করেই এমন কিছুর আশঙ্কা করছিলেন লিটন। যখন দেখলেন তা সোজা লেগেছে সে মাঠকর্মীর মুখে, তখন সঙ্গে সঙ্গে খেলার মাঝেই দৌড় দেন সীমানার বাইরে, সেই মাঠকর্মী জুয়েলের কাছে। শক্ত ক্রিকেট বল মুখে লাগায় থেতলে যায় জুয়েলের ঠোটের বড় একটা অংশ, ব্যথা পান দাঁতেও।
প্রাথমিকভাবে স্ট্রেচারে করে বিকেএসপি হাসপাতালে নেয়া হয় জুয়েলকে। থেতলে যাওয়া ঠোটে পাঁচটি সেলাই পড়েছে জুয়েলের। পরে দাঁতের চিকিৎসার জন্য জিরানী বাজারে ডেন্টিস্টের কাছে নেয়া হয়েছে তাকে। ভাগ্যিস মাথায় লাগেনি বলটি। না হয় আরও গুরুতর কিছু হতে পারতো এই ঘটনায়।
Advertisement
ওদিকে এমন ঘটনায় মনোযোগে বিঘ্ন আসে মাঠে থাকা লিটনের। সে ওভারের দ্বিতীয় বলে ২ রান নিলেও তৃতীয় বলে আবারও বড় শট খেলতে গিয়ে মিডঅনে দাঁড়ানো নাহিদুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান ৩৬ রান করা লিটন।
এর আগে ইনিংসের তৃতীয় বলেই খালি হাতে ফিরে যান আরেক ওপেনার ইরফান শুক্কুর। আর লিটনের বিদায়ের পর ব্যর্থতার ধারা বজায় রেখে মোহাম্মদ আশরাফুল ফেরেন ৪ রানে, আগের ম্যাচগুলোতে রান পাওয়া অভিষেক মিত্রর ব্যাট থেকে আসে ২০ রান, ব্যর্থ হন নাদীফ চৌধুরীও (১১)।
মাত্র ৮৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে মোহামেডান। ষষ্ঠ উইকেটে দলকে উদ্ধার করেন অধিনায়ক রকিবুল হাসান এবং রজত ভাটিয়া। দুজন মিলে মাত্র ১৯.৪ ওভারে গড়েন ১৪৬ রানের জুটি। চলতি লিগে আগের নয় ম্যাচে ৫ ফিফটি করলেও সেঞ্চুরির দেখা পাননি রকিবুল।
সে আক্ষেপ তিনি মেটালেন প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে দশম রাউন্ডে। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে নিজের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিতে রকিবুল খেলেন ১১ চার ও ১ ছয়ের মারে ১০২ রানের ইনিংস। রজত ভাটিয়া আউট হন ৪ চার ও ৩ ছয়ের মারে ৬০ বলে ৬৬ রান করে।
শেষদিকে মোহামেডানকে ৩০০ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ এনে দেয়ার পুরো কৃতিত্ব সোহাগ গাজীর। আগের দুই ম্যাচে যথাক্রমে ২৫ বলে ৪৩* ও ২২ বলে ৪৫ রান করা গাজী আজ খেলেন ১৪ বলে ৩৩ রানের ঝড়ো ক্যামিও। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৯৬ রানে থামে মোহামেডানের ইনিংস।
প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে বল হাতে ২টি করে উইকেট নেন আলআমিন হোসেন, মনির হোসেন, নাঈম হাসান এবং আব্দুর রাজ্জাক।
এসএএস/পিআর