বিপিএলে কোচিং করতে এসে হালে পানি পাননি টম মুডি, ওয়াকার ইউনুস, ল্যান্স ক্লুজনার আর মাহেলা জয়বর্ধনের মত এক সময়ের বিশ্ব নন্দিত ক্রিকেটাররাও।
Advertisement
ওই চার হাই প্রোফাইল কোচকে পিছনে ফেলে এবারের বিপিএলের ফাইনালে জায়গা করে চমক দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই নামী ও মেধাবী প্রশিক্ষক খালেদ মাহমুদ সুজন এবং মোহাম্মদ সালাউদ্দীন।
এরপর প্রিমিয়ার ক্রিকেট টি-টোয়েন্টি লিগে অবশ্য সুজন আর সালাউদ্দীনের দল ফাইনালে টিকিট পায়নি। ওই দুই দেশ প্রসিদ্ধ কোচের জায়গায় ফাইনাল খেলেছিল সোহেল ইসলামের শেখ জামাল ধানমন্ডি আর মিজানুর রহমান বাবুলের প্রাইম দোলেশ্বর ক্লাব।
এবার ৫০ ওভারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও আছে চমক। দেশের অন্যতম সেরা কোচ সালাউদ্দীনের গাজী গ্রুপ খাবি খাচ্ছে। শিরোপা দৌড়ে তো নেই’ই, সেরা ছয়েও জায়গা করে নিতে পারেনি এখনো।
Advertisement
অন্যদিকে এবার লিগের শুরু থেকে সবার ওপরে থাকা আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনও আজ মসনদ হারালেন। রোববার আকাশি-হলুদদের ৬ উইকেটে হারিয়ে ১০ ম্যাচে সর্বাধিক ৯ জয়ে এককভাবে লিগ টেবিলে সবার ওপরে লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ।
নামের পাশে জাতীয় দলের ‘সাবেকে’র তকমা এঁটে ফেলা দুই শাহরিয়ার নাফীস আর নাঈম ইসলাম এবং টেস্ট স্পেশালিস্ট মুমিনুল হক, মেহেদী মারুফ, নাবিল সামাদ, মোহাম্মদ শহীদ, শুভাশীষ রায়, মুক্তার আলী এবং সম্ভাবনাময় নাঈম শেখ ও উইকেটরক্ষক জাকির আলীর গড়া লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ কাগজে কলমে আহামরি কোনো দল নয়। কারো কারো চোখে চার নম্বর, আবার কেউবা বলেছিলেন রূপগঞ্জকে ৫-৬ নম্বর দল।
কিন্তু মাঠে সেই দল দুরন্ত, দুর্মনীয়। প্রাইম ব্যাংক ছাড়া আবাহনী, মোহামেডান, প্রাইম দোলেশ্বর, গাজী গ্রুপ, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও শাইন পুকুরের মত কাগজে-কলমে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দলগুলোকে হারিয়ে এখন পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে রুপগঞ্জ।
অবস্থাটা এমন, উত্তরা স্পোর্টিয়ের সাথে শেষ ম্যাচ জিতে গেলে ১১ ম্যাচে ১০ জয়ে ২০ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে শীর্ষে থাকবে নাঈম ইসলামের দল। আর হারলেও সবার ওপরে থাকতে পারবে। সে ক্ষেত্রে আবাহনী যদি শেখ জামালের সাথে শেষ ম্যাচ জিতে, তাহলে আবাহনী আর রূপগঞ্জের পয়েন্ট সমান হবে। মানে কোচ আফতাব এবং তার দলের প্রথম লিগে পয়েন্টে ওপরে থাকা মোটামুটি নিশ্চিত।
Advertisement
এমন নয়, ওপরে যাদের নাম বলা হলো তাদের কেউ বা ক’জন খুব আহামরি নৈপুণ্য দেখিয়ে দলকে এতটা ওপরে টেনে তুলেছেন। পরিসংখ্যান কিন্তু তা বলছে না। এখন পর্যন্ত রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে নেই লিজেন্স অফ রূপগঞ্জের কেউ। ৪০১ রান করে ছয় নম্বরে জায়গা পেয়েছেন তরুণ নাঈম শেখ।
আর রান তোলায় দশম স্থানটি মেহেদি মারুফের (৩৫৭)। একইভাবে উইকেট শিকারেও শীর্ষ পাঁচে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের কোন বোলার নেই। দুই পেসার মোহাম্মদ শহীদ আর মুক্তার আলী সমান ১৪ উইকেট করে পেয়ে যথাক্রমে ছয় ও আট নম্বরে।
মোটকথা একদম তাক লাগানো একক নৈপুণ্য নেই কারোরই; কিন্তু তাদের দল এখন সবাইকে পিছনে ফেলে পয়েন্ট তালিকায় এক নম্বরে।
একটু মেলানো কঠিন। তবুও লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের এমন উত্থানের পেছনের কারণ কি? সিনিয়র ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস বলেছেন ‘টিম এফোর্ট আর ডিসিপ্লিন।’
শনিবার বিসিবি একাডেমি মাঠে মিডিয়ার সাথে আলাপে ওপরের কথা দুটি বলেছিলেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের এ উইলোবাজ। সেই সাথে তার সমবয়সী কোচিং স্টাফ, বিশেষ করে হেড কোচ আফতাব আহমেদের কথা বলেছিলেন শাহরিয়ার নাফীস।
আবাহনী রূপগঞ্জের কাছে হারার পর অনেকের প্রশ্ন, রূপগঞ্জের কোচ কে? অনেকের হয়ত জানাই নেই, এক সময়ের মাঠ মাতানো ড্যাশিং ফ্রি স্ট্রোক প্লেয়ার আফতাব এবার লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জের হেড কোচ।
আগের দুই বছর মোহামেডানের সহকারী কোচের ভূমিকায় থাকা সাবেক এ জাতীয় ক্রিকেটারকে হেড করেছে রূপগঞ্জ। কর্মকর্তাদের সাথে বসে জীবনে প্রথমবার প্লেয়ার্স ড্রাফটেও অংশ নিয়েছেন তিনি। এখন মাঠের বাইরে থেকে দল সাজাচ্ছেন। ছক কষছেন।
জাতীয় দলে এই সময়ে নেই। তাতে কি! ক্রিকেটাররা, বিশেষ করে ব্যাটসম্যান আফতাব তো অনেক বড়। অনেকের চোখেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সব সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটিং প্রতিভা আফতাব। সহজাত স্ট্রোক প্লেয়ার। ১৬ টেস্টে ৫৮২, ৮৪ ওয়ানডেতে ১৯৫৪ আর ১১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২২৮ রান- পরিসংখ্যান অবশ্য খুব বড় কিছুর নিদর্শন নয়।
তবে সবার মত, তারচেয়েও বড় মাপের ব্যাটসম্যান আফতাব। শটস খেলার সামর্থ্যকে মানদণ্ড ধরলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে খুব ওপরের দিকেই জায়গা পাবেন চট্টগ্রামের এ ৩৪ বছর বয়সি সাবেক ক্রিকেটার।
তার সম বয়সি আর সমসাময়িক ক্রিকেটার যারা, যাদের সাথে একত্রে ২০০২ সালে বিশ্ব যুব ক্রিকেট খেলতে নিউজিল্যান্ড গিয়েছিলেন, সেই দলের মাশরাফি বিন মর্তুজা আর মোহাম্মদ আশরাফুল এখনো খেলে যাচ্ছেন। তার সঙ্গী মোহাম্মদ শরীফ এখনো মাঠেই আছেন। তবে আরেক সঙ্গী তালহা জুবায়ের কোচিংয়ে এসেছেন অল্প কয়েক বছর আগেই।
গত লিগে সহকারি কোচের ভূমিকায় থাকলেও এবার শাইন পুকুরের হেড কোচ তালহা জুবায়ের। আর আফতাব প্রথম প্রশিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েই পাদপ্রদীপের আলোয়। অনেক তারকা, হাই প্রোফাইল ও প্রতিষ্ঠিত কোচের ভিড়ে শুরুতে কেউ আমলেই নেননি কোচ আফতাবকে।
পুরোন দল মোহামেডানই তাকে পাত্তা দেয়নি। গত চার বছরের হেড কোচ সোহেল ইসলামকে ছেড়ে মোহামেডান এবার কোচ হিসেবে বেছে নিয়েছে জাতীয় দলের সাবেক পেসার মঞ্জুরুল ইসলামকে। জানা গেছে, এবারো আফতাবকে সহকারি কোচ রাখার প্রস্তাব ছিল মোহামেডানের।
তাই রূপগঞ্জের কোচের প্রস্তাব পেয়ে তা সঙ্গে সঙ্গে লুফে নেন আফতাব। দায়িত্ব প্রাপ্তির পরও ছিল সংশয়-সন্দেহ। সমালোচকরা বলেছেন, আফতাব তো নরম-সরম মানুষ। ক্যারিয়ার সচেতন ছিলেন না তেমন। খেলোয়াড়ী জীবনে ফিটনেসে ঘাটতি ছিল। শারীরিক পরিশ্রম কম করতেন। নিজেকে ফিট রাখার তাগিদটাই ছিল কম।
সেই আফতাব কিভাবে দল সামলাবেন, লক্ষ্য ও পরিকল্পনা আঁটবেন? দুর্মুখোরা এমন প্রশ্নও তুলেছেন; কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটা ঘটলো। প্রথম বার প্রিমিয়ার লিগে কোচের দায়িত্ব পেয়ে এখন পর্যন্ত দক্ষতা ও মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন আফতাব।
এআরবি/আইএইচএস/পিআর