চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের একাংশের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের নেপথ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিরোধী ও সরকার বিরোধীদের ইন্ধন দেখছেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
Advertisement
একই সঙ্গে ‘শিবির স্টাইলে’ আন্দোলনকারীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেছেন, নৈরাজ্যমূলক কর্মকাণ্ড করায় তাদের ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।
রোববার সংঘর্ষের পর বিকেলে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন চবি উপাচার্য ও প্রক্টর। আন্দোলনকারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
উপাচার্য বলেন, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে গাত্রদাহে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুটি কয়েক ও সরকার বিরোধীরা ছাত্রদের অস্থিতিশীল করার উসকানি দিয়েছে। সরকারকে আহ্বান জানাবো কারা ইন্ধন দিচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে। যারা এমনটা করছে তাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় জিম্মি হতে পারে না।
Advertisement
চবি উপাচার্য দাবি করেন, পুলিশ যে অস্ত্র মামলা করেছে তা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিজেদের ভুলেই করেছে। তবে তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে বলা হয়েছে ছয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র মামলা দেয়া হয়েছে, মূলত দেশীয় অস্ত্রের মামলা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে দুই একদিন সময় লাগবে।
তিনি বলেন, আমি সকাল থেকেই বলেছি তোমরা আমার কার্যালয়ে দাবি নিয়ে আসো। যৌক্তিক দাবি নিয়ে আলোচনার দরজা সবসময় খোলা আছে। তোমরা আমাদের সন্তান। তাদের শিক্ষাজীবন একদিনও নষ্ট হোক এটা আমরা চাই না। যারা বিভ্রান্ত তারা নিজেরাই যেন আর সংঘাতে না জড়ায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের মামলা করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে যথাযথ আইনি ও জড়িতদের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ সময় প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, গত একমাসে ছাত্রলীগের আন্দোলনকারী দুই গ্রুপের সঙ্গে পাঁচ বার আমাদের বৈঠক হয়। গতকাল রাতেও কথা হয়। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল সংঘাতে জড়াবে না। স্বাভাবিক প্রতিবাদ করবে। কিন্তু তারা রোববার সকাল থেকে শাটল ট্রেন আটকে, শিক্ষক বাস অচল করে, অনুষদের ফটকগুলোর তালাতে গ্লু লাগিয়ে- শিবির স্টাইলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তাদের নৈরাজ্যমূলক কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতেই পুলিশ তাদের বিবেচনায় ব্যবস্থা নিয়েছে।
Advertisement
ছাত্রদের নামে আগ্নেয়াস্ত্রের মামলা দেয়া হয়নি উল্লেখ করে প্রক্টর বলেন, দেশীয় অস্ত্রের মামলা দেয়া হয়েছে। আর সম্প্রতি হলে অভিযান চালিয়ে পরিত্যক্ত অস্ত্র উদ্ধারের মামলার সঙ্গে ছাত্রদের সম্পর্ক নেই। হলে অভিযানের সময়ও ছয়জনকে গ্রেফতার করেনি। অভিযানের পরদিন হামলায় জড়িয়ে পড়লে পুলিশ তাদের জীবন রক্ষার্থে বাধ্য হয়ে গ্রেফতার করেছে।
সংঘর্ষের আগে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে কেন যাননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা আমাদের পদত্যাগ চায়। সেখানে গেলে একটি অপ্রীতিকর অবস্থা হতে পারে তাই আমরা যাইনি। আর আজকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহনের প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউদ্দোলা রেজা বলেন, আমরা আগের দিন রাতেই ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করি। তাদের কিছু দাবি-দাওয়া ছিল। সকালে বিচ্ছিন্ন একটি গ্রুপ শাটল ট্রেন ও বাস আটকে দেয়। এরপরও সকালে নেতারা আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে এবং দাবির বিষয়ে আমারা সহযোগিতার আশ্বাস দেই। কিন্তু কিছু বহিষ্কৃত ছেলে বিনা উসকানিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় দুইজন আটক করা হয়েছে। আমাদের তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি এনামুল হক আরাফাত জাগো নিউজকে বলেন, বিনা উসকানিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা করা হয়েছে। এতে ২০-৩০ জন আহত হয়েছেন। আমদের যৌক্তিক দাবি ও পুলিশি হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র ধর্মঘট চলবে।
এর আগে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে পুলিশ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ বাধে। এতে পুলিশের পক্ষ থেকে ২০ এর অধিক টিয়ারশেল- ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়িন্ত্রণে জলকামানও ব্যবহার করা হয়।
এদিকে প্রতিরোধ হিসেবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষিপ্ত স্থান থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলা এ সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেন চলাচল।
আবদুল্লাহ রাকীব/এএম/পিআর