জাতীয় সংসদে ২০০৯ সালে পাস হওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের কোনো বিধান নেই। তবুও এক দশক ধরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ বাবদ ফি আদায় করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
এদিকে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের কোনো বিধান রাখা হয়নি। তাই নির্বাচন করতে হলে প্রথমে ছাত্র সংসদের আইনের খসড়া একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে পাস করে তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে পাঠাতে হবে। বিধানটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংযুক্ত হলে তারপরেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে। যদিও বিধান না থাকলেও থেমে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায়।
জানা গেছে, ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী কাছ থেকে জনপ্রতি আদায় করা হয়েছে ২০০ টাকা। আর দ্বিতীয় দফা স্নাতকোত্তর ভর্তির সময় আদায় করা হচ্ছে জন প্রতি ১০০ টাকা।
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিকৃত সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। স্নাতকোত্তর শেষ করেছে পাঁচ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী। ফলে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ ইতোমধ্যে ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। ছাত্র সংসদ চালু না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছা মাফিক এ অর্থ ব্যয় করছেন বলে অভিযোগ ছাত্র সংগঠনগুলোর। কিন্তু ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনে প্রায় নির্ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ফি আদায় নিয়ে ক্ষোভ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ নেই, তাহলে কোন আইনে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নামে ফি আদায় হচ্ছে। খেয়ালখুশি মতো ফি আদায় আর নির্বাচন আয়োজনে আইনের দোহাই দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করছে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে সাবেক ছাত্রনেতারাও। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি চৌধুরী মেহেদী হাসান শিশির জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই উপাচার্যদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর স্বেচ্ছাচারিতায় ব্যাহত হয়ে আসছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও কেবল শিক্ষার্থীদের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। ফলে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাই পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা ছাড়াও খেলাধুলা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং সংস্কৃতিচর্চার বিকাশে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ছাত্রলীগ বলছে, প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করলে তারা অংশগ্রহণ করবে। তারা ইতোমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে। তবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নির্বাচন আয়োজনের আগে ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থানের দাবি জানিয়েছে।
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান নোবেল শেখ বলেন, খুব তাড়াতাড়ি ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়া হোক। গণতন্ত্র চর্চার ও শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অন্যতম মাধ্যম। তাই বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের বিধান সংযুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আল মুরসালিন মুন্না বলেন, উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারী আচরণের কারণে একটি স্বৈরতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলোচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়। তাই রাজনৈতিক সহাবস্থান ও নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ পেলে ছাত্রদল অবশ্যই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনে অংশ নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি যুগেশ ত্রিপুরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনদের নিয়ে ছাত্র সংসদ গঠনের ব্যাপারে আলোচনা করে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা।
প্রায় একই দাবির কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বায়ক জিনাত আরা আফরিন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন হয় ছাত্র সংসদের মাধ্যমে। তাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন এখন সময়ের দাবি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
পরে উপাচার্যের বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের সহকারী পরিচালক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের বিধান নেই। তাই আইন সংশোধন বা এ বিধান সংযুক্ত করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশাসন ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
আইন ছাড়া কীভাবে শিক্ষার্থীদের থেকে ছাত্র সংসদ বাবদ ফি আদায় করা হয়েছে জানতে চাইলে তাবিউর রহমান প্রধান জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি ট্রাডিশনালি হয়ে আসছে। হয়ত তৎকালীন প্রশাসন না বুঝেই এ নামে ফি আদায় করছে। তবে ছাত্র সংসদ নিয়ে বর্তমান প্রশাসন আন্তরিক।
সজীব হোসাইন/এএম/পিআর