মতামত

বিপিএল ক্রিকেট নাকি ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য হবে?

স্পট ফিক্সিং থেকে আর্থিক অনিয়মসহ নানা কারণে দু’বছর বিপিএল হয়নি। তার অর্থ বিপিএল ‘ছিল’ হয়ে যায়নি। বিপিএল আছে। এবং এই আছে যদি হয় বর্তমান তাহলে বিপিএলের সম্ভাব্য ভবিষত ‘থাকবে’। আর থাকবে তার মতো করেই! তা নিন্দুকেরা যতোই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-কে ‘বাংলাদেশ প্রবলেম লিগ’ বলুক না কেন! প্রবলেম সঙ্গে নিয়েই সে থাকবে!বিতর্ক, আর্থিক অনিয়ম দূর করতে আরো সতর্ক এবং কঠোর অবস্থানে থাকবে বিসিবি। বোর্ড কর্তারা বার বার সেটা বলেছেন। কিছু উদ্যোগও নিয়েছেন। ক্রিকেটারদের বকেয়া পারিশ্রমিক শোধে নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা দিতেও দ্বিধা করছে না। যে সব ফ্র্যাঞ্চাইজি আর্থিক অনিয়ম আর কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিল তাদের বাদ দিয়ে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি খোঁজার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিছু সাড়াও মিলেছে। আবার দু’ একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি বিসিবি’র বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে আগের বকেয়াসহ বিপিএলের তৃতীয় আসরের আর্থিক নিশ্চয়তার চেকও দিয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি দু’টো হলো সিলেট রয়্যালস আর রংপুর রাইডার্স। একই ভাবে বিসিবি’র নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজিসহ আর্থিক নিশ্চয়তা দিয়েছে আরো তিনটা প্রতিষ্ঠান। বেক্সিমকো, ডিবিএল আর এক্সিওম। দুই আর তিন যোগ করলে ফ্র্যাঞ্চাইজি হচ্ছে পাঁচ। কিন্তু এই পাঁচ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চাইছে না বিসিবি। তারা সংখ্যাটা আরো বেশি দেখতে চান। তাই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসতে আপত্তি নেই বিসিবির! আর্থিক নিশ্চয়তা দেয়ার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও বিসিবি তাই আরো কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে আলোচনা করছে। আলোচনা চালিয়ে যাবে। হয়তো আলোচনা শেষে আরো দু’টো ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নেয়া হবে! তাহলে আগের অনিয়ম দূর করতে এতো হাকডাক করে কী লাভ হলো! আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি, ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক কমানো, এসব বলার অর্থ কী দাঁড়ালো! নতুন নিয়মে বিপিএলে শুরুর আগেই নিয়ম ভাঙার ইঙ্গিত! তাহলে কি অনিয়মের মধ্যে দিয়ে নিয়ম চালু করার চেষ্টা?আসলে শুরুর কথাটাই আসল কথা। বিপিএল ছিল। বিপিএল আছে। বিপিএল থাকবে। এবং সেটা তার মতো করেই। সেখানে নিয়ম-অনিয়ম, শৃঙ্খলা-বিশৃঙ্খলা এই সব শব্দকে এতো জোর দিয়ে কোনো লাভ নেই। দু’বছর পর বিপিএল যখন আবার চালুর কথা হলো তখন সেই পুরনো কথাটা মনে পড়েছিল। ‘কাদম্বরি মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই।’ অর্থাৎ আবার বিপিএল হচ্ছে। এরপর বিপিএল পুনরায় চালু করতে গিয়ে বিসিবির বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল যেভাবে জেগে উঠেছে এবং শুরুতেই যেরকম লেজেগোবরে অবস্থা তাতে বলতেই হবে ‘তাঁরা জাগিয়ে উঠিয়া প্রমাণ করিল বিপিএলের সব প্রবলেম চিরনিদ্রায় যাচ্ছে না!’ যে কারণে পত্রিকার পাতায় বড় করে শিরোণাম হলো; ‘সেই পুরনো পথেই বিপিএল!’বিসিবি সভাপতি দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই বলেছিলেন; বিসিবির আর্থিক শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই! আমার প্রথম কাজ হবে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এখানে আর্থিক বিষয়ে কারো কাছে কোনো কাগজ-পত্র চাইলে তিনি বলেন, আমি জানি না, অমুক জানেন। পরে জানা যায় এ ব্যাপারে লিখিত কাগজপত্রই নাই! এভাবে চলতে পারে না। আমি চলতে দেবো না।’ বিসিবি প্রধানের সেই সময়ের কথা সাধুবাদ যোগ্য।কিন্তু অনিয়ম আর আর্থিক বিশৃঙ্খলার কারণে যে বিপিএল দু’বছর বন্ধ রাখতে হলো সেটা পুনরায় চালু করতে গিয়ে আবার কেন নিয়ম ভাঙার প্রশ্ন উঠছে! বিসিবি সভাপতির ঘোষণা অনুযায়ী নতুন করে আর ফ্র্যাঞ্চাইজি নেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। পরবর্তী বোর্ড সভায় সময়সীমা বাড়ানোর অনুমোদনও যদি দেয়া হয়, তাহলেও প্রশ্ন থাকবে কোনো প্রতিষ্ঠানকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেয়ার জন্যই এই সময় বাড়ানো! পাঁচটা ফ্র্যাঞ্চাইজি যখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব শর্ত পূরণ করেছে, তাহলে সেই পাঁচটা  ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়েই বিপিএল চালু করলে মানুষ অনেক বেশি আশাবাদী হয়ে উঠতো  বিপিএলের স্বচ্ছতার ব্যাপারে। তাছাড়া এই বিপিএল তো ললিত মোদির মস্তিষ্কজাত আইপিএল এর জেরক্স কপি! সেই আইপিএলেও সাহারা গ্রুপ,  যারা ফ্র্যাঞ্চাইজি ছিল পুণে ওয়ারিওর্স এর কিন্তু শর্ত পূরণ  করতে না পারায় বাদ পড়েছিল। আইপিএল-এ দল কমেছে। কিন্তু লিগটা হয়েছে। তাই সাতের জায়গায় পাঁচটা ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে বিপিএল হলে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে কি?এশিয়া কাপ এবং ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি দু’টো টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে বাংলাদেশ  ক্রিকেটারদের জন্য বিপিএল আয়োজনটা দরকার। তবে দল বাড়িয়ে আয় বাড়ানোর চিন্তাকে বেশি প্রাধান্য দিলে তাতে ক্রিকেটীয় ক্ষতিই বেশি হওয়ার শঙ্কা থাকছে। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘ইনজুরি টাইম’ ‘এক্সট্রা টাইম’ ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। তিনি কাজ করেছেন দেশের নেতৃস্থানীয় বিভিন্ন দৈনিকে, টেলিভিশন এবং দেশি-বিদেশি রেডিওতে।এইচআর/এমএস

Advertisement