কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে না হতেই আবারো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেখা দিয়েছে বন্যা। প্রবল বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার নিম্নাঞ্চলের গ্রাম, চর ও দ্বীপচরগুলো নতুন করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে জেলায় আবারো বন্যা দেখা দিয়েছে। আর এতে করে জেলায় নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। বন্যার কারণে বাঁধে ও পাকা সড়কে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে ভুগছে। দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, চুলকানিসহ পানিবাহিত নানান রোগ। এছাড়াও জেলার নদীর তীরবর্তী প্রায় হাজার খানেক মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন।জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জাগো নিউজকে জানান, বানভাসী মানুষের জন্য নতুন করে আরো ৭৯ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর আগে ৮০ মেট্রিকটন চাল ও আড়াই লাখ টাকা বিতরণ করা হয়। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান জাগো নিউজকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ২৮.৯৭ সে.মি., নুনখাওয়ায় দুধকুমার নদের পানি ২৬.২২ সে.মি. এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৩.৭৮ সে.মি. এবং ধরলা ব্রিজ পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ২৬.৭০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে না যাওয়ায় কুড়িগ্রামের চিলমারীর বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এসব এলাকার বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ঘরছাড়া হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। তাদের বসবাস এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ওয়াপদা বাঁধ ও কেচি সড়কের উপর খোলা আকাশের নিচে। তিন সপ্তাহের অধিক সময় ধরে পানিবন্দি থাকায় দুর্ভোগ চরমে উঠেছে বানভাসী মানুষজনের। দুর্গত এলাকায় ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ বানভাসী সব মানুষের মাঝে জোটেনি ত্রাণের চাল। মোটরসাইকেল কিংবা নৌকার শব্দ শুনলেই ত্রাণের জন্য ছোটাছুটি শুরু বন্যার্ত মানুষরা। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে অনেক পরিবারের। এসব ঘরছাড়া মানুষের হাতে কাজ না থাকায় তারা ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। পাশাপাশি গো-খাদ্যের সঙ্কট এবং বিভিন্ন রোগ দেখা দেওয়ায় গবাদী পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছে বন্যার্তরা। রানীগঞ্জের পুর্বভাটিপাড়া, সরকটারী, ময়নারখামার, মজারটারী, মাঝিপাড়া, থানাহাটের ঠগেরহাট, ছোটকুষ্টারী কেচিরাস্তা, রমনার পাত্রখাতা, জেলে পাড়া, মাঝিপাড়া দুর্গত এলাকায় হাজার হাজার পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। রানীগঞ্জ ইউনিয়নের মহন মহোন এলাকার মেরেজা, মতিউর, ছক্কু, মহিলা, রাবেয়াসহ অনেকে জাগো নিউজকে জানান, তারা এ পর্যন্ত কোনো সাহায্য পাননি। রানীগঞ্জ মদন মহোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রাণ বন্ধু পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, এ গ্রামের প্রায় ২০টি পরিবার প্রায় ২০/২৫ দিন থেকে স্কুলের ঘরে ও বারান্দায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম বানভাসী মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, আমার এলাকায় ৩ হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দি আর ২৫০ পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকারিভাবে ২ মেট্রিকটন চাল পেয়েছি তা ২শ মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। নাজমুল হোসেন/এমজেড/এমএস
Advertisement