ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় গত আট মাসে ৫৬টি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৪৫ জন বিভিন্নভাবে খুন হয়েছেন। বাকি ১৬ জনের মৃত্যু নির্ণয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ১৩ জনের ভিসেরা রিপোর্ট এখনো আদালতে জমা হয়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে বাণিজ্য করা হচ্ছে এমন অভিযোগও উঠেছে। মহেশপুরের জননী ও শৈলকুপার আয়েশা ক্লিনিকে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় একদিনে মারা গেছেন প্রসূতিসহ পাঁচজন। সোমবার এ দুটি ক্লিনিক অপচিকিৎসার অভিযোগে প্রশাসন বন্ধ করে দেয়। এছাড়া সামাজিক কোন্দল ও দুর্বৃত্তদের হাতে আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে খুন হয়েছেন চারজন। ফেব্রুয়ারি মাসে খুন হন আটজন। এর মধ্যে মহেশপুরের লেবুতলা সীমান্তে বিএসএফের হাতে জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। সদর উপজেলার ডেফলবাড়ি গ্রামের মাঠে দুলাল ও পালাশ নামে দুই যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। মার্চ মাসে জেলায় খুন হন আটজন। এর মধ্যে কোটচাঁদপুরের ভোমরাডাঙ্গা গ্রামে মুক্তিপণের দাবিতে মাদ্রাসাছাত্র মিরাজকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এপ্রিল মাসে খুন হয় ছয়জন। মে মাসে জেলায় খুনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির ১১টি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর মধ্যে কালীগঞ্জে স্ত্রীর পরকীয়ার শিকার হয়ে খুন হন রফিউদ্দিন নামে এক মোচিকের কর্মচারী। শৈলকুপার আনন্দনগর গ্রামের স্কুলছাত্র আশিককে হত্যা করেন তার চাচা। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগে ভাইয়ের হাতে খুন হন কলেজ ছাত্র কামরুজ্জামান। জুন মাসে নিহত হন চারজন। এর মধ্যে মহেশপুরের বাঘাডাঙ্গায় বিএসএফের নির্যাতনে জাহাঙ্গীর নামে এক বাংলাদেশি নিহত হন। ব্যাপারীপাড়ার সরকারি দলের সমর্থক তরিকুলকে গুলশান পাড়ায় খুন করেন দুর্বৃত্তরা। সেসময় এ মামলা নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। কোটচাঁদপুরের ফাদিলপুর থেকে এক অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।জুলাই মাসে মরদেহ উদ্ধারসহ নিহত হন আটজন। এর মধ্যে সদর উপজেলার অচিন্তনগর গ্রামে শিশু মনিরাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। মনিরা হত্যার প্রতিবাদে ফুসে উঠেছেন এলাকাবাসি। তবে এখনো এর মূল ঘাতকরা গ্রেফতার হননি। এ মাসে জেলায় তিন অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কোটচাঁদপুরে এক বৃদ্ধ ও সদর উপজেলার ফুরসন্দি এবং শৈলকুপার ত্রিবেনী থেকে দুই যুবকের মরদেহের পরিচয় মেলেনি এখনো। সর্বশেষ আগস্ট মাসে নারীসহ সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে শৈলকুপার বড়মৌকুড়ি গ্রামে দু`গ্রুপের সংঘর্ষে আব্দুল ওহাব নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। শৈলকুপার ত্রিবেনী গ্রামে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদদের নির্যাতনে এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। আর বাকিদের মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। শৈলকুপার আয়েশা ক্লিনিকে রোগী হত্যার দায়ে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা হয়েছে ক্লিনিক মালিক ও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। এ বিষয় নিয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জাগো নিউজকে জানান, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সার্বিকভাবে ভালো। জেলায় চরমপন্থিদের কোনো বিস্তার নেই। তাদের শক্তভাবে দমন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, জেলায় আট মাসে যেগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার কারণ অনুসন্ধান করে দোষীদেরে আটকের জন্য পুলিশ ততপর রয়েছে।এমজেড/এমএস
Advertisement