বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহাম্মেদ চৌধুরীকে চাপা দেয়া সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটি মালিক ননী গোপালের নির্দেশে কনডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত চালাচ্ছিলেন। বাসটির মালিক ননী গোপাল পুলিশের কাছে এ তথ্য স্বীকার করেছেন।
Advertisement
রাজধানীর শাহজাদপুর বাঁশতলা এলাকায় গত ১৯ মার্চ (মঙ্গলবার) মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সিনথিয়া সুলতানা মুক্তাকে চাপা দেয় সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসটি। পরে বাস যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে চালক সিরাজুল ইসলামকে আটক করে ট্রাফিক পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
এ সময় বাসের ক্ষতি হতে পারে ভেবে কনডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত মালিক ননী গোপালকে মোবাইল ফোনে জানান। মালিক তাকে বাসটি চালিয়ে পালাতে বলেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও অদক্ষ ইয়াছিন আরাফাত মালিকের কথায় বাসটি নিয়ে পালাতে গিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেইটের সামনে বিইউপি শিক্ষার্থী আবরারকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান আবরার।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসের মালিক ননী গোপাল সরকার এসব তথ্য জানিয়েছেন।
Advertisement
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে সুপ্রভাত বাসটির চালক সিরাজুল ইসলাম দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করায় ধারণা ছিল সেই আবরারকে হত্যা করেছে। যে কারণে পুলিশ তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কনডাক্টর মো. ইয়াছির আরাফাত (২২) ও হেলপার মো. ইব্রাহিম হোসেনকে (২১) গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়।
আসামিরা আদালতে দায় স্বীকার করে এবং বাসের মালিক ননী গোপাল সরকারের নির্দেশে সেদিন বাস চালিয়েছিলেন মর্মে জবানবন্দি দেয় কনডাক্টর ইয়াছিন। এরপরই গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় মুগদা এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা মালিক ননী গোপালকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে ননী গোপাল সরকার গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়, বাসটির রুট পারমিট ছিল মহাখালী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে। কিন্তু সুপ্রভাত বাস কোম্পানির প্রতিনিধির সাথে যোগসাজশে সুপ্রভাত ব্যানারে সদরঘাট (ভিক্টোরিয়া পার্ক) থেকে গাজীপুর রুটে চালিয়ে আসছিলেন। ওই দিনও ঘাতক বাসটি সদরঘাট থেকে গাজীপুর যাওয়ার জন্য ভোরে রওয়ানা হয়েছিল।
Advertisement
ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় মালিকের প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল আহত ব্যক্তির দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা। কিন্তু সেটা না করে বাসটি বাঁচানোর জন্য দ্রুত পালাতে গিয়ে আরেকটি দুর্ঘটনা সংঘটিত করে। মালিক ননী গোপাল সম্পূর্ণ দায়িত্বহীন পরিচয় দিয়ে অদক্ষ কনডাক্টরকে বাসটি নিয়ে পালিয়ে যেতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সুপ্রভাত মালিক ননী গোপাল কনডাক্টরকে প্ররোচিত করেছিল। তিনি আবরার হত্যাকাণ্ডের কোনোভাবে দায় এড়াতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, তদন্তে আমরা বেশ কিছু ব্যত্যয় পেয়েছি। সেটা হচ্ছে, ওই বাসটি পারমিটবিহীন রুটে সেদিন চালানো হয়েছিল। বাসটি ৪৫ সিটের কিন্তু সেটা মডিফাই করে করা হয়েছে ৪৯ সিটের। আর দুই বছরে আগে ওই ননী গোপাল আরেকজনের কাছ থেকে বাসটি ক্রয় করলেও কাগজে-কলমে মালিকানা পরিবর্তন করেননি। আর হত্যাকাণ্ডের মালিক, কনডাক্টর ও হেলপার আত্মগোপনে চলে যায়।
গ্রেফতার ননী গোপালকে আজ আদালতে হাজির করে তিনদিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি।
জেইউ/আরএস/এমকেএইচ