সাংগঠনিক দুর্বলতাকে চিহ্নিত করে দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭৫টি ইউনিটকে কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। তবে এতো অল্প সময়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনায় ক্ষোভে ফুসে উঠেছে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এরকম পরিস্থিতিতে যথাসময়ে কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে কি-না তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। অনেকে আবার বিএনপির এরকম সিদ্ধান্তের প্রতিবাদও জানিয়েছেন। ফলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল নিয়েও বেকায়দায় পড়বে দলটি।বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠনে দলের প্রতিটি পৌর, থানা, উপজেলা, জেলা এবং মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠিয়েছে বিএনপি। গত ৯ আগস্ট দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল কমিটি গঠন ও পুনর্গঠন করে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।তবে এতো অল্প সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দেয়া দুঃসাধ্য কাজ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য তৃণমূলের নেতারা ক্ষোভে ফুঁসছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমান্ডের উপর। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র নির্দেশিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনের কাজ শেষ করা নিয়ে জেলা ও মহানগরের নেতারা এক প্রকার বিপদে পড়েছেন। কারণ, বিগত সরকারবিরোধী তিন মাসের আন্দোলনে অনেক নেতা এখনো কারাগারে রয়েছেন।আবার অনেকে একাধিক মামলার আসামি হয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে রয়েছেন আত্মগোপনে। ইতোমধ্যেই অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চার্জশিটও দিয়েছে পুলিশ। অনেকের নামে রয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। ফলে দলকে পুনর্গঠন করাতো দূরের কথা, বিএনপির নাম উচ্চারণ করতেও আতঙ্কে থাকছেন কর্মী-সমর্থকরা। এ রকম পরিস্থিতিতে কীভাবে সম্মেলন করে কমিটি গঠন করবে তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন দলের পৌর, উপজেলা, মহানগর ও জেলা পর্যায়ের নেতারা।দলীয় সূত্র জানায়, তৃণমূলের কমিটি গঠনে কেন্দ্র থেকে যে সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে তা অপর্যাপ্ত বলে মনে করেছেন দলটির কেন্দ্রের নেতারাই।দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার সংশয় প্রকাশ করে জাগো নিউজকে বলেন, সারাদেশে বিএনপির কয়েক লাখ ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে সামনে কোরবানির ঈদ। আমার আশঙ্কা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব কমিটি করা সম্ভব হবে না। তারপরও আশা করছি, তৃণমূলের কমিটি গঠনের পরপরই জাতীয় কাউন্সিল করা হবে।এদিকে কেন্দ্র থেকে চিঠি প্রাপ্তির পর বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার জানান, কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মু্ক্তি বা পলাতকরা প্রকাশ্যে না আসা পর্যন্ত দল পুনর্গঠনের বিষয়টি ভাবনাতে আনাই অবান্তর। তারপরও যেহেতু কেন্দ্রের নির্দেশ তাই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইদুল হক সাদু জাগো নিউজকে বলেন, অতীতেও আমরা কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা পেয়েছি। এবার দল পুনর্গঠনে যে চিঠি দেয়া হয়েছে, তাতে আমরা খুব আশান্বিত। তবে, দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ সফল হবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কা ও সন্দেহ রয়েছে।দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন, বিগত আন্দোলনে দলের সঙ্কট মুহূর্তে যেসব নেতারা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে আত্মগোপনে থেকেছেন, দলের পক্ষে কাজ করেননি, নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঠিক রাখতে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেন, দল আবার তাদেরই মতামত নিয়ে কমিটি গঠনের কথা বলেছে।তারা মনে করেন, ওই সব সুবিধাবাদী নেতাদের মতামত নিয়ে কমিটি গঠন করলে তারাই আবার নেতৃত্বে আসবেন অথবা তাদের অনুগতরাই কমিটিতে স্থান পাবে। এতে দল পুনর্গঠনের এ উদ্যোগে কোনো লাভ বয়ে আনবে না।তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, কেন্দ্রে পাঠানো চিঠিতে যাদের মতামত নিতে বলা হয়েছে তাদের মতামত নিয়ে কমিটি গঠন করা হলে দলের সবাই কাজ করার সুযোগ পাবেন।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের জেলা কমিটি গঠন করে জাতীয় কাউন্সিল করবে বিএনপি। কাউন্সিলের আগে সংস্কারপন্থী ও দলছুটদের ফিরিয়ে আনা হবে। দলের দফতরের মাধ্যমে সেসব নেতাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।এসব তথ্যের ভিত্তিতে স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের নেতৃত্বে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। এ ছাড়া দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনের খসড়া যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত কাজ চলছে বলে ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।এমএম/এমএএস/বিএ
Advertisement