বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন স্টেশনের সঙ্গে কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা না থাকা ২১ নারীর কাছে ফ্রি টিকিট বিক্রি করেছেন সদ্যবিদায়ী ও বিতর্কিত কান্ট্রি ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম।
Advertisement
চড়া দামে ওই নারীদের কাছে বিক্রি করলেও নথিপত্রে সেগুলোকে ফ্রি টিকিট হিসেবে দেখান তিনি। এ বাবদ সাড়ে ১১ লাখ টাকা পকেটে ভরেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
অডিট শাখা সূত্রে জানা গেছে, উল্লেখিতসংখ্যক টিকিট ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইস্যু করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিমানের অভ্যন্তরীণ অডিট আপত্তি দিলেও শফিকুলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিমান কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে শফিকুল ইসলামের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি। তাকে প্রাথমিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তিনি কর্ম ও দফতরবিহীন কর্মকর্তা হিসেবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয়ে প্রতিদিন হাজিরা দেবেন। এ ছাড়া শফিকুল ইসলামের বিষয়ে ২০১৭ সালে বিমানের অভ্যন্তরীণ অডিট বিভাগ আপত্তি দিলে কী কারণে তা আমলে নেয়নি বিমান কর্তৃপক্ষ সেটিও খতিয়ে দেখবে মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আসন্ন মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে লন্ডনে যাবে। আগামী সপ্তাহে কমিটির সদস্যরা ভিসার জন্য কাগজপত্র জমা দেবেন।
টাকার বিনিময়ে ফ্রি টিকিট বিক্রি, রেভিনিউ টিকিটে অনিয়ম ও কার্গো জালিয়াতির মাধ্যমে চার বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে লন্ডন স্টেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, শুধু ফ্রি টিকিট বাবদ এ কর্মকর্তা হাতিয়ে নিয়েছেন ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শফিকুল ইসলামের নামে চার বছরে লোকাল স্টেশন থেকে ২ হাজার ৪৭২টি ফ্রি টিকিট ইস্যু হয়, যার সবই ছিল লন্ডন-ঢাকা-লন্ডন রুটে।
শফিকুল ইসলামের টিকিট-সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে জাগো নিউজের কাছে বেশকিছু তথ্য এসেছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, শফিকুল ইসলাম ২০১৬-১৭ সালে বিমানের লন্ডন অফিস থেকে মোট ৬৮৩টি ফ্রি টিকিট ইস্যু করেন। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাসের ২৭৪টি এবং ইকোনমি ক্লাসের ৮০৯টি। ২০১৭-১৮ সালে বিজনেস ক্লাসের ১৫১টি এবং ইকোনমি ক্লাসের ২০৯টি; ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৯৩টি বিজনেস ক্লাস এবং ৩৭৫টি ইকোনমি ক্লাসের টিকিট বিক্রি করেন।
Advertisement
২০১৯ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য আগেই ৫১৫টি ফ্রি টিকিট ইস্যু করে রেখেছিলেন শফিকুল ইসলাম। যার ২৮৫টি বিজনেস ক্লাসের।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘রেভিনিউ টিকিট বিক্রি না করে ফ্রি টিকিট বিক্রিতে বেশি উৎসাহী ছিলেন শফিকুল ইসলাম। বিষয়টি তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক দিনের মধ্যে একটি কমিটি লন্ডনে পাঠানো হবে। দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
আরএম/এসআর/পিআর