স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিজিবি সদস্যরা এখন থেকে সীমান্তে দায়িত্ব পালন করবে। তারা (বিজিবি) মানুষের বাড়ি বা গোয়ালে গিয়ে গরু তল্লাশি করবে না।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিজিবি সদর দফতরে ‘দেশের সীমান্ত এলাকায় বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও আশু করণীয় সম্পর্কে মতবিনিময়’ সভায় তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে বিজিবি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে এবং ভারতের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় আছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ রকম সুসম্পর্ক আর ছিল না।
ঠাকুরগাঁওয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের সংঘর্ষের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় যাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সে বিষয়ে বিজিবি পক্ষ থেকে নিজস্ব একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট কিছু কিছু আসছে আবার কিছু বাকি রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা মনে করি, এই তদন্ত রিপোর্টগুলো মামলার আলামত হিসেবে গ্রহণ করে কাজ করা হবে।
Advertisement
‘গত দুইমাসে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে’। এত সুসম্পর্কের মধ্যেও কেন হত্যা বেড়েছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অতি উৎসাহী হয়ে আমাদের লোকেরা সীমান্ত এলাকায় চলে যায়। এ ধরনের ক্ষেত্রে বিজিবি সতর্কতার জন্য ফায়ার ওপেন করে।
মাদক ব্যবসার সঙ্গে অনেক বিজিবি সদস্য জড়িত বলে আমরা শুনেছি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আপনারা অনেক কিছুই শুনছেন, সে বিষয়ে আমি সবসময় একটা কথাই বলি, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। যেই এই কাজটি করেন, আমরা প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেই। বিজিবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও আপনারা সেগুলো দেখছেন না। কারণ, বিজিবির নিজস্ব আইন রয়েছে। তাদের ক্লোজ করে তাদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করা হয়।
এর আগে মতবিনিময় সভায় দেশের সীমান্ত এলাকার সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, আইজিপি, র্যাব মহাপরিচালক এবং বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, সীমান্তে বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ একসঙ্গে কাজ করলে ওপার থেকে মাদক আসা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।
Advertisement
র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা মাদকের আসামি ধরছি কিন্তু বিচারকের সংখ্যা কম থাকায় সময় মতো তাদের বিচার হচ্ছে না। বিচারের দেরি হওয়ার কারণে এক সময় এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সাক্ষী পাওয়া যায় না, আলামত পাওয়া যায় না। যদি বিচারক কম থাকে তাহলে ট্রাইব্যুনাল করে কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, আমার মতামত হলো, দেশে যত অবসরপ্রাপ্ত বিচারক রয়েছেন তাদের নিয়ে আমরা একটা টেম্পোরারি কোর্ট করে বিচার করতে পারি। প্রয়োজনে আসামি খালাস হয়ে যাক, কিন্তু আমরা চাই বিচার হোক। অনেক অভিজ্ঞ বিচারক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবসর গ্রহণ করে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার নিয়ে ঘরে বসে আছেন। তাদের কাজে লাগানো উচিৎ।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে বিজিবিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে, তাদের টহল বৃদ্ধির জন্য আরও মোটরসাইকেল দিতে হবে। এছাড়াও সীমান্ত এলাকায় মাদকসহ চোরাচালানে কাউকে গ্রেফতার করা হলে তাকে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া উচিৎ।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দুর্বল চিত্তের কোনো ওসিকে সীমান্ত এলাকায় দায়িত্ব না দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় সবার কথা শুনে সমাপনী বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে মাদক চোরাচালান বন্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে ডিসি-ডিএম, বিজিবি-বিএসএফ, মন্ত্রী-সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে, নিয়মিত হচ্ছে। বর্তমানে দু’দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে। তবে আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা। যদিও সুনির্দিষ্ট কারণে গত ২ মাসে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে।
দেশের মাদক সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, মাদক দেশে তৈরি হয় না। ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসে। আমরা ভারতকে সীমান্তবর্তী ফেনসিডিলের কারখানাগুলো বন্ধ করার অনুরোধ করেছি, ভারত এই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিয়ামারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির কাছে আমি নিজে বলেছি, তাদের সীমান্ত রক্ষা বাহিনীকে (বিজিপি) বলা হয়েছে, কিন্তু তারা মাদক বন্ধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এ বিষয়ে তাদের (মিয়ানমার) সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক তৈরি করলেও মিয়ানমার এতে স্বাক্ষর করেনি। তবে আমরা আরও বিকল্পভাবে দেশকে মাদকমুক্ত করার পরিকল্পনা করেছি। আমরা মসজিদ, মাদরাসাসহ উপাসনালয়গুলোর মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলাচ্ছি। এতে মাদকের চাহিদা হ্রাস করানোর চেষ্টা করছি আমরা।
এআর/আরএস/পিআর