কথা কাটাকাটির জেরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গ্রীনলাইন পরিবহনের একটি বাসের চাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ না দিলে ১১ তারিখ থেকে গ্রীনলাইন পরিবহনের টিকিট বিক্রি বন্ধ এবং সব গাড়ি জব্দ করা হবে বলেও সতর্ক করেছেন আদালত।
Advertisement
আদালত গ্রীনলাইনের ব্যবস্থাপক আব্দুস সাত্তারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণ না দিলে ১১ এপ্রিলে গ্রীনলাইন বাসের সব রুটের টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে হবে।’ ১০ এপ্রিল এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেন আদালত।
হাইকোর্টের তলবে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে হাজির হন গ্রীনলাইন পরিবহনের ম্যানেজার আব্দুস ছাত্তার। তিনি আদালতে হাজির হয়ে মালিক চিকিৎসার জন্য ভারতে আছেন বলে জানানোর পর ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে এসব নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি। অন্যদিকে গ্রীনলাইন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ।
Advertisement
এর আগে দুপুরে আদালতের আদেশের পরও গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় পরিবহন সংস্থাটির ব্যবস্থাপককে (ম্যানেজার) ২টার মধ্যে হাইকোর্টে হাজির হতে বলেন হাইকোর্ট। আদালতের তলব আদেশে হাজির হন গ্রীনলাইনের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আব্দুস সাত্তার।
আদালতের কাছে আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘গ্রীনলাইন পরিবহনের মালিক মো. আলাউদ্দিন অসুস্থ। তিনি চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। আগামী ৯ এপ্রিল তিনি দেশে ফিরবেন।’
তখন আদালত বলেন, ‘আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। ১০ এপ্রিল আমরা পরবর্তী আদেশ দেব।’
আদালত আরও বলেন, ‘১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করলে আমরা গ্রীনলাইনের সব গাড়ি সিজ করে ফেলব।’ এ সময় আদালত ১১ এপ্রিলের গ্রীনলাইন পরিবহনের সব রুটের টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে বলেন।
Advertisement
আদেশের পর অজি উল্লাহ বলেন, ‘গ্রীনলাইন পরিবহনের মালিক আলাউদ্দিন সাহেব বয়স্ক ব্যক্তি। জেনারেল ম্যানেজারের ভাষ্যমতে, চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছেন। এ জন্য আজকে আদালতে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দাখিল করা যায়নি। আদালত জেনারেল ম্যানেজারের বক্তব্য শুনে পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন ১০ তারিখ। ১০ তারিখে হলফনামা দাখিলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি এটা করতে তারা ব্যর্থ হয় তাহলে পরবর্তী আইনানুগ আদেশ দেবেন আদালত। আদালত বলেছেন, ১০ তারিখে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দিয়ে যদি আদালতের নির্দেশ পালন না করে ১১ তারিখ তারা টিকিট বিক্রি করতে পারবেন না।
রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ বাস্তবায়ন সম্পর্কে আজ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার দিন ধার্য ছিল। আদালতে বিষয়টি উঠলে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, ‘গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। সাড়াও দেয়নি। তাদের ব্যক্তিগত উপস্থিতি দরকার।’
পরে আদালত গ্রীনলাইন পরিবহনের ম্যানেজারকে তলব করেন। আদালত বলেন, অন্যথায় গাড়ি জব্দ (সিজ) করে টাকা দেয়া হবে।
গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের দেয়া ক্ষতিপূরণের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে।
গত ১৪ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। একই সঙ্গে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষের করা আবেদনটি ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। পরে আপিল বিভাগে গত ৩১ মার্চ আবেদনটির ওপর শুনানি হয়। শুনানিতে খারিজ হয়ে যায় আপিল।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচালক প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) গায়ের ওপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দেন। এতে রাসেলের দেহ থেকে বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর অস্ত্রোপচার করে তার বাম পা কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনায় রাসেলের বড় ভাই আরিফ সরকার বাসচালক কবির মিয়ার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ওইদিনই মামলা করেন।
পা হারানো রাসেলের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম, গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা। ওই দুর্ঘটনার পর সরকারি দলের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি আইনজীবী অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি গত বছরের ১৪ মে হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন।
রিটের শুনানিতে চলতি বছরের ৬ মার্চ রাসেল আদালতকে বলেছিলেন, পা হারানোর পর এখন পর্যন্ত গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ তাকে একটি টাকাও দেয়নি। খোঁজখবর নেয়নি, চিকিৎসার ব্যয়ও বহন করেনি। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রাসেলকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এফএইচ/এনএফ/এনডিএস/জেআইএম