রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
Advertisement
কোম্পানি কর্তৃপক্ষের তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের এ তথ্য জানিয়েছে।
ডিএসই জানিয়েছে, বনানীর এফআর টাওয়ারে কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান কার্যালয় রয়েছে। গত ২৮ মার্চ ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফলে কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ ব্যবসায়িক ও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না।
এদিকে কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিএনপি নেতা তাসভির উল ইসলামকে শনিবার রাতে (৩০ মার্চ) বারিধারার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এফআর টাওয়ারের নকশাবহির্ভূত ও বর্ধিত অংশের মালিক তিনি।
Advertisement
অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় বনানী থানায় অবহেলাজনিত মৃত্যু সংঘটনের অভিযোগে শনিবার মামলা হয়। এতে তাসভির উল ছাড়াও রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল, বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী এসএমএইচআই ফারুককে আসামি করা হয়।
তাসভির উল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। পাশাপাশি তিনি কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তা। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বরে তিনি ভবনটির ভূমি মালিক ইঞ্জিনিয়ার ফারুক ও রূপায়ন গ্রুপ যৌথভাবে নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেন। তখন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন দেয়।
পরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ভবনটিকে ২৩ তলা পর্যন্ত বর্ধিত করে নির্মাণ করা হয়। ডেভেলপার কোম্পানি ভবনটির ২০ ও ২১তম তলাটি জাতীয় পার্টির প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য মাইদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে। মাইদুল ইসলামের কাছ থেকে ফ্লোর দুটি কিনে নেন কাশেম ড্রাইসেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএনপি নেতা তাসভির উল ইসলাম। এরপর তিনি নকশা পরিবর্তন করে ছাদের ওপর আরও দুটি ফ্লোর নির্মাণ করেন।
এ এফআর টাওয়ারটি একাধিকবার পরিদর্শন করে এর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার বিভিন্ন ত্রুটির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল ফায়ার সার্ভিস। এজন্য কিছু সুপারিশও করা হয়েছিল। তবে পরপর দু'বার নোটিশ করেও কাজ হয়নি। ভবনের ফায়ার সেফটি ইস্যুতে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।
Advertisement
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৮তলা ভবন নির্মাণের জন্য এফ আর টাওয়ারের নকশা রাজউক থেকে অনুমোদন করা হলেও সেখানে পরবর্তীতে নির্মাণ করা হয় ২৩তলা। যেখানে রাউজকের অনুমোদিত নকশা থেকে এ ভবনের নকশায় আরও অনেক বিচ্যুতি রয়েছে। এফআর টাওয়ারের মালিকপক্ষ ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজউকের কাছে আরেকটি নকশা পেশ করে, যার সঙ্গে রাজউকে সংরক্ষিত নকশার কোনো মিল নেই।
রাজউক সূত্র জানায়, ভবনটি ১৮তলা নির্মাণের জন্য প্ল্যান পাস হয় ১৯৯৬ সালে। কিন্তু ২০০৫ সালে এসে ভবন মালিক কর্তৃপক্ষ একটা কপি দাখিল করেন যে, ভবনটি ২৩ তলা হয়েছে। সেটাতে সন্দেহ হবার কারণে তদন্ত শুরু করে রাজউক। সেই তদন্তে দেখা যায়, যে কপি তারা দাখিল করেছেন সে সম্পর্কে রাজউকের রেজিস্ট্রারে কোনো তথ্য নেই। এ ব্যাপারে ২০০৭ সালে রাজউক একটি রিপোর্টও তৈরি করে। তবে ধারণা করা হচ্ছে- রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে পরে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এমএএস/এনডিএস/জেআইএম