রাজধানীতে বাসচাপায় হাত হারানোর পর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানির জন্য আগামী বুধবার (১০ এপ্রিল) দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
রিটকারী আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। আদালতে রিটকারী আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস বলেন, রাজীবের মৃত্যুর এক বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও তার পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। যদি তার পরিবার ক্ষতিপূরণের টাকা পায়, তাহলে হয়তো তাদের কাজে লাগবে। রাজীবের দুই ভাই এতিমখানায় অসহায় জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় ক্ষতিপূরণের রুলের শুনানি হওয়া দরকার। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে জারি করা এ রুলের ওপর শুনানির মাধ্যমে উচ্চ আদালত থেকে যে আদেশটা আসবে, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বাস চাপায় রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত কমিটি হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে চালকদের ট্রিপভিত্তিক গণপরিবহন চালানোর বিষয়টি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, মাসিক ভিত্তিতে বেতন দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১৮ দফা সুপারিশ পেশ করেছে কমিটি।
Advertisement
প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মাঝে পড়ে কীভাবে রাজিব হাত হারিয়েছেন, সেই বিষয়টি এতে তুলে ধরা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় দায়ীকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের ওই চালকদের ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স ছিল না। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার জন্য স্বজন পরিবহনের চালক দায়ী। এছাড়া রাজিবের মৃত্যুর জন্য শমরিতা হাসপাতালের অবহেলাকেও দায়ী করা হয়েছে।
গত বছরের ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারান ছাত্র রাজীব। দুই বাসের চাপায় তার ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেয়া হয়।
পরদিন চার এপ্রিল রাজীবের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
Advertisement
তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজীবের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ১৩ দিন চিকিৎসার পর ১৬ এপ্রিল মধ্যরাতে মৃত্যু হয় তার।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের রাজীব তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মা এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারান। ঢাকার মতিঝিলে খালার বাসায় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন স্নাতকে। কখনও টিউশনি করে, কখনও বা পার্ট টাইম কাজ করে নিজে পড়াশোনা করেছেন এবং দুই ভাইকেও বানিয়েছেন কোরআনের হাফেজ। তারা এখন তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় পড়ছেন।
এফএইচ/এমএসএইচ/জেআইএম