জাতীয়

সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি, আইন প্রয়োগ করেছে

জি-বাংলা, জি-বাংলা সিনেমা, জি-সিনেমা ও জি-টিভিসহ এই নেটওয়ার্কের সব চ্যানেল বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বন্ধ করার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি, আইন প্রয়োগ করেছে।

Advertisement

মঙ্গলবার সচিবালয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সঙ্গে বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এ কথা জানান।

বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য ডাউনলিংককৃত বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করায় সোমবার পরিবেশক (ডিস্ট্রিবিউটর) সংস্থা ন্যাশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেড এবং জাদু ভিশন লিমিটেডকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

এরপর থেকেই জি-নেটওয়ার্কের চ্যানেল দেখতে পারছেন না বাংলাদেশের দর্শকরা।

Advertisement

ভারতের জি-নেটওয়ার্কের চ্যানেল বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমত সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি। সরকার প্রচলিত আইন প্রয়োগ করেছে। কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন-২০০৬ এর উপধারা-১৯(১৩) এর বিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিদেশি কোনো চ্যানেলে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায় না। শুধু দেশীয় বিজ্ঞাপন নয় কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন দেখানো যায় না। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের আইন।’

ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন-২০০৬ এর উপধারা-১৯ এ সেবাপ্রদানকারী কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যেসব অনুষ্ঠান সম্প্রচার বা সঞ্চালন করা যাবে না তা উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধারার ১৩ উপধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।

মন্ত্রী বলেন, ‘একই ধরনের আইন ভারতে আছে, যুক্তরাজ্যে আছে, কন্টিনেন্টাল ইউরোপে আছে, অন্য দেশে আছে। সেসব দেশে এই আইন মানা হয়।

আরও পড়ুন >> ‘জি’ নেটওয়ার্কের সব চ্যানেল বাংলাদেশে বন্ধ

Advertisement

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে এই আইনটি মানা হচ্ছিল না। আইনটি প্রয়োগ করা হয়নি। এটি না করার কারণে যেটি হয়েছে- বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো যে বিজ্ঞাপন পেত সেই বিজ্ঞাপনের বড় একটা অংশ চলে গেছে ভারতে।’

মন্ত্রী বলেন, আমি শুধু একটা পরিসংখ্যান দেই, ইউনিলিভার বাংলাদেশে আজ থেকে ৫ বছর আগে প্রতিমাসে বিজ্ঞাপন খাতে ১৫ কোটি টাকা খরচ হত। যেটি ৫ বছর আগে ২০ কোটি হওয়ার কথা ছিল, সেটি না হলে বরং কমে ৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। বাকি বিজ্ঞাপন ভারতীয় চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রদর্শন করা হচ্ছে যেটি আইন বহির্ভূত।

আমি শুধু একটা কোম্পানির উদাহরণ দিলাম। সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারব না, এ রকম আরও অনেকগুলো কোম্পানির বছরে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার বিজ্ঞাপন অন্য দেশে চলে গেছে। এই টাকাটাও বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছে।

সুতরাং বাংলাদেশের শিল্পকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য আমরা শুধুমাত্র প্রয়োগ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আইন প্রয়োগের আগে আমরা দু’মাস ধরে প্রচারণা করেছি। তিন দফা নোটিশ দেয়া হয়েছে।

‘১ এপ্রিল আমরা যখন দেখতে পেলাম ডাউনলিংক করে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় তখন আমরা নোটিশ দিয়েছি (পরিবেশক সংস্থাকে)। আমরা কোনো চ্যানেল বন্ধ করিনি।’

তিনি বলেন, ‘এখন যেটি তারা করতে পারে তাহলো তারা সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলোর কাছে ক্লিন ফিড চাইতে পারে। অথবা তারা এখানে যন্ত্র স্থাপন করে ক্লিন করে এখানে চ্যানেল প্রদর্শন করতে পারে।’

মন্ত্রী বলেন, সরকার কোনো চ্যানেল ডাউনলিংক করে না, যারা করে তারাই বলতে পারবে- এটা কেন বন্ধ হয়েছে। আমরা নোটিশ দিয়েছি যাতে বিজ্ঞাপন ছাড়া দেখানো হয়, বিজ্ঞাপনসহ দেখানো হচ্ছে এটা আইনের লঙ্ঘন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা নোটিশ দিয়ে সাতদিনের মধ্যে তাদের কারণ দর্শাতে বলেছি। ১ এপ্রিল নোটিশ দেয়া হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে জবাব দিক, এরপর জবাব অনুযায়ী ব্যবস্থা।’

এই বিষয়ে সরকার কতটা কঠোর থাকবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সাথে থাকলে...আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। কোনো নতুন আইন প্রয়োগ করছি না। দেশের প্রচলিত আইন প্রয়োগ করা শুরু করেছি- দেশের স্বার্থে, দেশের গণমাধ্যমে স্বার্থে, টেলিভিশনের স্বার্থে, টেলিভিশনের সংশ্লিষ্টদের স্বার্থে।’

আরএমএম/জেএইচ/এমএস