জাতীয়

ভোটের হার বাড়াতে চাইলে অনিয়ম হবে : ইসি সচিব

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। ভোটগ্রহণ শেষে রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।

Advertisement

এ সময় এক সাংবাদিক উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমের বিষয়ে জানতে চাইলে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আহত-নিহত যাতে না হয়, সেটার ওপর আমরা সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি। আপনারা আমাদের শতকরা হারের কথা বলেছেন, শতকরা হার বাড়াতে গেলে অনিয়মের মধ্যে পড়তে হয় আমাদের। এজন্য ভোটাররা যে পরিমাণ আসুন না কেন, আমরা সেটার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা যদি ভোটার হার বাড়াতে চাই, তাহলে আবার সেই স্থানীয় প্রশাসন বা রাজনৈতিক দল অনিয়মের দিকে ঝুঁকে পড়বে।’

‘অনিয়ম যাতে না হয় সেজন্য আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। মানুষের যাতে প্রাণহানি না হয়, আহত না হয়, সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। প্রকৃত কত লোক ভোটকেন্দ্রে আসে, সেটাই চেয়েছি’ যোগ করেন ইসি সচিব।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাহলে ৮০ শতাংশ ভোট কীভাবে পড়েছে- জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের তুলনা করলে চলবে না। জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করেনি।’

Advertisement

চার ধাপের এ নির্বাচনের প্রতিটিতেই কতিপয় সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়ার নোটিশ দিতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। এটা চলমান থাকবে, নাকি অন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে- জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘যেখানে আমরা খবর পেয়েছি যে, আইন লঙ্ঘন হয়েছে, তখন আমরা চিঠি দিয়েছি। তারা চিঠি পেয়ে কিন্তু এলাকা ত্যাগ করেছে। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী পদক্ষেপ আর গ্রহণ করতে হয়নি। আমরা আশা করব, সকলেই যেন আচরণবিধি মেনে চলেন।’

 

উপজেলা নির্বাচনে একজনও মারা যাননি 

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চার ধাপে একজনের মৃত্যু হয়নি দাবি করে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো হওয়ার কারণে চার ধাপের নির্বাচনে আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, একটি লোকও নিহত হন নাই। হয়তো কিছু আহত হয়েছেন।’

যদিও গত ১৮ মার্চ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ব্রাশফায়ারের শিকার হন নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে নির্বাচন কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাত সদস্য নিহত হন। আহত হন অনেকে।

Advertisement

এ ঘটনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসি সচিব বলেন, ‘এটাকে আপনারা ভোটের সঙ্গে মিলাবেন কি না? এটা নির্বাচনকালীন সহিংসতা না। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, সেখানে পাহাড়ীদের বিভিন্ন গ্রুপিং আছে। ওটাকে আমরা একদম ভোটকেন্দ্র দখল, ম্যানিপুলেশন করার ওইরকম কোনো কারণ দেখিনি। এতে আঞ্চলিক দলের প্রাধান্য বিস্তারের কারণগুলো ওখানে থাকতে পারে।’

এ ঘটনাকে নির্বাচনী সহিংসতা বলতে রাজি নয় বলেও জানান ইসি সচিব।

চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যা যা করেছেন, তার বর্ণনা দিয়ে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য আমরা অনেকগুলো উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করেছি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এমন কি আমরা পুলিশ সুপারকে (এসপি) প্রত্যাহার করেছি। কয়েকজনকে আমরা সাময়িক বরখাস্তও করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা প্রায় ৪৯টি উপজেলাতে ১২০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করেছিলাম। ঢাকা ও স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে তিন শতাধিক ম্যাজিস্ট্রেট আমরা নিয়োগ করেছিলাম। এর পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, এমন কি গ্রাম পুলিশও আমরা নিয়োগ করেছিলাম।’

এ সময় হেলালুদ্দীন আহমদ আরও জানান, ১৮ জুন পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে ৩০ থেকে ৪০টি উপজেলায় ভোট হতে পারে। প্রথম থেকে চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত যেসব কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে, সেসব কেন্দ্র তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করবে। আর যেসব উপজেলা স্থগিত করা হয়েছে, সেসব উপজেলা নির্বাচন বন্ধের বিষয়েও তদন্ত করা হবে। পরবর্তীতে এর তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

আজ দেশের ১০৭টি উপজেলার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৫১, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৩৩ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪০৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ভোটের আগেই ৮৮ প্রার্থী জয়লাভ করেন। তাদের মধ্যে চোয়ারম্যান পদে ৩৯, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২২ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭ জন রয়েছেন।

পিডি/এনডিএস/পিআর