২০১৭ সালে এসএসসি পাস করে এবার প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন না। সে বছর এসএসসি পাস করে এইচএসসি, আলিম ও কারিগরি স্তরে একাদশ শ্রেণিতে ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫২ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন ১০ লাখ এক হাজার ৭১৭। সে হিসাবে তিন লাখ ৩৮ হাজার ৩৫ জন শিক্ষার্থী ঝরে গেছে।
Advertisement
তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক মনে করেন, এদের সবাইকে ড্রপআউট বলা যাবে না। কেননা, অনেকে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তি হতে পারে। আবার অনেকে পাঠবিরতি দিয়েছে, যাদের আগামীতে পাওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, এটা ঠিক যে মাধ্যমিকে ছাত্রী বেশি পাস করলেও এবার এইচএসসিতে ছাত্র পরীক্ষার্থী বেশি। অনেকের হয়তো বিয়ে হয়ে গেছে। আবার অনেকে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে।
সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এতে মোট অংশ নিচ্ছেন ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ জন। তাদের মধ্যে ১০ লাখ এক হাজার ৭১৭ নিয়মিত এবং বাকি তিন লাখ ৩১ হাজার ২০২ জন অনিয়মিত পরীক্ষার্থী। এবার মাদরাসা বোর্ডে মোট ৮৮ হাজার ৪৫১ এবং কারিগরিতে এক লাখ ২৪ হাজার ২৬৪ জন পরীক্ষা দিচ্ছেন।
Advertisement
এদিকে পরীক্ষা সামনে রেখে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে অবৈধপন্থায় অর্থ হাতিয়ে নিতে ইতোমধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধুচক্র। তারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে। তবে কোনোভাবেই প্রশ্নফাঁস সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, সদ্যসমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষার মতোই এইচএসসি পরীক্ষাও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে। প্রশ্নফাঁসের কোনো সম্ভাবনা নেই।
তিনি অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, কোনো রকমের গুজবে কান দেবেন না এবং অনৈতিক কোনো লেনদেন করবেন না। যারা এই রকমের অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবে, তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫০ জন অংশ নিচ্ছেন। আট বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে তিন লাখ ৯৭ হাজার ৬২২ জন, রাজশাহী বোর্ডে এক লাখ ৫০ হাজার ৯৫৪ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৯৫ হাজার ২০২ জন, যশোর বোর্ডে এক লাখ ২৮ হাজার ৮০৯ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৯৯ হাজার ৬৬৪ জন, বরিশাল বোর্ডে ৬৪ হাজার ৯১৯ জন, সিলেট বোর্ডে ৭৬ হাজার ৬৯৮ জন, দিনাজপুর বোর্ডে এক লাখ ২৪ হাজার ৮৭৯ জন পরীক্ষার্থী।
Advertisement
সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণে নানা প্রস্তুতিপরীক্ষায় যাতে প্রশ্নফাঁস না হয়, সে জন্য পাঁচ সপ্তাহ সবধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী সোমবার থেকে ৬ মে পর্যন্ত সারাদেশে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। এছাড়া প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে মোবাইল ব্যাংকিং কঠোরভাবে নজরদারি করা হবে। বিশেষ করে কোনো মোবাইল নম্বরে একাধিকার একই অংকের টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে বিষয়টি থানায় জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের আগের মতোই ৩০ মিনিট আগে আবশ্যিকভাবে কেন্দ্রের আসন গ্রহণ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরি করলে রেজিস্ট্রারে তার নাম, রোল নম্বর ও বিলম্বের কারণ উল্লেখ করতে হবে। এ ধরনের ঘটনা পরীক্ষার দিনই কেন্দ্রসচিব সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাবেন। কেন্দ্রে শুধু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (কেন্দ্রসচিব) সাধারণ মানের একটি ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। কেউ মোবাইল ফোন বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন না।
এছাড়া আগের বিভিন্ন পরীক্ষার মতো এবারও পরীক্ষা শুরুর মাত্র ২৫ মিনিট আগে কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, সেটা জানানো হবে। পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র বণ্টনে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্য নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা কক্ষে আসনবিন্যাস করে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে।
পরীক্ষা চলাকালে এবং আগে-পরে পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট কাজের সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্রের প্যাকেটে গতানুগতিক কাগজের খামের বদলে অধিকতর নিরাপত্তাবিশিষ্ট অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল খাম ব্যবহার করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণে তদারক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভেন্যু কেন্দ্রের জন্য প্রশ্নপত্রের আলাদা প্যাকেট ও ট্রাংক তৈরি করা হয়েছে, যা ট্রেজারি থেকে সরাসরি ভেন্যুতে পাঠানো হবে।
জানা গেছে, এই পরীক্ষায় অসাধুপায় অবলম্বনের দায়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হবে। আর এতে সহায়তার দায়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচএম/বিএ/জেআইএম