পর্তুগালের রাজধানী মেট্রোপলিটন লিসবনের ব্যস্ততম শহর আলমিরান্তে রেইস। লিসবন মিউনিসিপ্যালিটির দুটি বৃহৎ ওয়ার্ড সান্তা মারিয়া মাইওর এবং অ্যারিওস। পুরনো সব স্থাপত্য এবং পৃথিবীর প্রায় ৭৯ দেশের ভিন্ন ভিন্ন মানুষদের বসবাস এই এলাকাগুলোতে।
Advertisement
স্থানীয় পর্তুগিজ কমিউনিটি, ভিন্ন ভিন্ন দেশের মানুষ আর ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির অভিবাসীদের নিয়ে এই এলাকা মাল্টিকালচারাল মানুষদের এলাকা হিসেবে পরিচিত।
লিসবনের এই জোনটি সবচেয়ে বেশি মাল্টিকালচারাল এবং ভিন্ন ভিন্ন মানুষদের বসবাসের কারণে শহরের এই এলাকাটি খানিকটা আলাদা। ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতির মিশ্রণে অনেকটাই রঙিন স্থানটি। সবসময়ই এলাকায় উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। যেখানে স্থানীয় পর্তুগিজদের সঙ্গে সমানতালে অভিবাসী সম্প্রদায়ও যুক্ত থাকেন।
এবার লিসবন মিউনিসিপ্যালিটি ও লারগো রেসিডেন্সিয়াসের সহযোগিতায় গাবিব আলমিরান্তে রেইস নামের স্থানীয় একটি অ্যাসোসিয়েশন ভিন্ন এক উদ্যোগ নেয়। ৭৯ দেশের অভিবাসীদের নিয়ে অন্যরকম আয়োজন প্রজেক্ট ‘নেক্সট স্টপ’ কিংবা প্রকল্প পরবর্তী গন্তব্য। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো অভিবাসী বিভিন্ন দেশের লুকিয়ে থাকা প্রতিভাবান শিল্পীদের খুঁজে বের করা এবং তাদের মধ্য থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিজয়ীদের নিয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা।
Advertisement
বাছাইয়ের পর স্থানীয় শিল্পীরাসহ ৬০ জন্য শিল্পীকে চূড়ান্ত করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে গান, চিত্রকর্ম, থিয়েটার, পাপেট শো, নাচ ইত্যাদি। প্রকল্পের চমক হলো সম্পূর্ণ প্রকল্পটি যেমন শিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, নাচ, গান পরিবেশন সব কিছুই লিসবন মাল্টিকালচারাল জোনের চারটি মেট্রো স্টেশনের (মার্তৃম-মুনিজ, ইন্তেন্দেন্তে, আঞ্জুস, অ্যারিওস) ভেতরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রতিযোগিতা ও বাছাইয়ের মাধ্যমে ফেস্টিভালে ১৫ দেশের প্রায় ৬০ জন শিল্পী অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন বাংলাদেশি শিল্পী অংশগ্রহণ করেছেন ফেস্টিভালে। চিত্রকর্মে শারমিন মৌ এবং গানে কে এম মোস্তফা আনোয়ার।
গত ২৮ মার্চ তিন দিনব্যাপী এ ফেস্টিভালের উদ্বোধন করা হয়। সেখানে আয়োজক ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা ছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী।
বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের একজন শারমিন মৌয়ের চিত্রকর্ম দুটি স্টেশনে উদ্বোধনের দিন থেকে চার মাসের জন্য প্রদর্শিত হবে। চিত্রকর্মের নাম ‘মানবতার রং’ মূল বিষয় মানুষের ভেতরের রং। শারমিন মৌ জানান, মানুষকে বাইরে আমরা ভিন্ন রূপে দেখলেও প্রত্যেকটা মানুষের ভেতরে লুকানো একটি মানুষ থাকে, লুকানো একটি ছবি থাকে যেটি বাইরের রূপের সঙ্গে অনেক সময় মেলে না। সমাজের মানুষের ভেতরের আসল রূপ ভিন্ন হয়, হিংস্র হয় অনেক সময় কোমল হয়। এমন রূপগুলো শারমিন তার চিত্রকর্মে তুলে ধরতে চেয়েছেন।
Advertisement
শারমিন দীর্ঘ সময় ধরে পর্তুগালে বসবাস করছেন। স্বগৌরব করছেন লাল সবুজের পতাকার প্রতিনিধিত্ব। তিনি পর্তুগালে বাংলাদেশকে তার রং তুলিতে তুলে ধরছেন প্রতিনিয়তই। স্থানীয় পর্তুগিজদের সঙ্গে সমান তালে তার মেধার স্বাক্ষর রাখছেন। তার সঙ্গে সঙ্গে তুলে ধরছেন নিজের দেশীয় সংস্কৃতি ও চিত্রকর্ম। পর্তুগালে বাংলাদেশি পোশাকে শারমিন মৌয়ের ফ্যাশন শো স্থানীয় কমিউনিটিতে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ফেস্টিভালে অংশগ্রহণকারী আরেক গর্বিত বাংলাদেশি পর্তুগালে গবেষণারত বাংলাদেশি, জনপ্রিয় শিল্পী কে এম মোস্তফা আনোয়ার। ‘নেক্সট স্টপ’ ফেস্টিভালে ‘মোস্তফা ও বন্ধুরা’ শিরোনামে একটি কনসার্ট করেছেন তিনি। এ ছাড়াও মেট্রো স্টেশনগুলোতে অডিওতে বাংলা ভাষার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের নানা তথ্যমূলক বক্তব্য দেন।
পর্তুগালে বাংলাদেশের সঙ্গীত সংস্কৃতি তুলে ধরছেন এই সাধক। বাংলা গান এবং দেশীয় সংস্কৃতিকে পরিচিত করাতে দীর্ঘসময় ধরে পর্তুগালের ফেস্টিভ্যালগুলোতে তিনি পরিবেশনা করে থাকেন। ভিন্ন ভিন্ন ভাষা দক্ষতায় তিনি বাংলা গানের অনুবাদ করেও পরিবেশন করেন। বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষরা ছাড়াও পর্তুগালের স্থানীয় অনেক ভক্ত, অনুরাগী রয়েছে কে এম মোস্তফা আনোয়ারের।
প্রকল্পটির অন্যতম পরিচালক মার্তা সিলভা বলেন, ‘লিসবনের অ্যারিওস ওয়ার্ডের আলমিরান্তে রেইস এলাকাটি সবচেয়ে বেশি মাল্টিকালচারাল। ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতির মানুষদের মিশ্রণে এই এলাকা অনেকটাই রঙিন। সবসময়ই এই এলাকায় উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। যা ভিন্ন একটি পরিবেশ তৈরি করে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই প্রকল্পটির একই রকম উদ্দেশ্য নিয়ে করা। যাতে করে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের সংস্কৃতির বিনিময়ের মাধ্যমে রঙিন একটি শহর হবে লিসবন। আমাদের প্রকল্পটি সম্পূর্ণ মেট্রোর ভেতরে এখানে শুধু স্থানীয় আসেন না। অনেক বিদেশিরাও আছেন, বিশেষ করে তাদের কাছেও তুলে ধরা যে সুন্দর মাল্টিকালচারাল পরিবেশ আমাদের এখানে আছে।’
লিসবন মিউনিসিপ্যালিটির দুটি বৃহৎ ওয়ার্ড সান্তা মারিয়া মাইওর এবং অ্যারিওস। পুরনো সব স্থাপত্য এবং পৃথিবীর প্রায় ৭৯ দেশের ভিন্ন ভিন্ন মানুষদের বসবাস এই এলাকাগুলোতে। এই এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় পর্তুগিজ কমিউনিটি, ভিন্ন ভিন্ন দেশের মানুষ আর ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির অভিবাসীরা মিলে এই এলাকা মাল্টিকালচারাল মানুষদের এলাকা হিসেবে পরিচিত।
এমআরএম/পিআর