বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে এফআর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শুধু দেশেই নয় বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়। ২৩তলা ওই ভবনের ৭, ৮ ও ৯ তলায় আগুন লাগার পরপরই আতঙ্কিত লোকজন প্রাণ বাঁচাতে বিভিন্ন তলা থেকে নিচে নামার চেষ্টা করে। প্রথম দিকে কেউ প্রাণ নিয়ে নিচে নেমে আসতে পারলেও আগুন ছড়িয়ে পড়লে ধোঁয়ার কারণে অনেকেই বিভিন্ন তলায় আটকা পড়েন।
Advertisement
আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই উপর তলা থেকে রশিতে, বিদ্যুতের তারে ঝুলে নিচে নামার চেষ্টা করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নামতে গিয়ে কেউ কেউ ঘটনাস্থলেই মারা যান। কেউবা গুরুতর আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভয়াবহ ওই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ঘটনার পর পরই হতাহতদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা শুরু করে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১৩০ জন আহতকে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে ২৬ জন মারা গেছেন।
Advertisement
আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ১১ জন, বার্ন ইউনিটে ৭ জন, কুর্মিটোলা ৫০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৪৪ জন, ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১২ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৩২ জন, অ্যাপোলো হাসপাতালে ১০ জন, বনানী ক্লিনিকে ২ জন, শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন, সিটি হাসপাতালে একজন ও উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল একজন চিকিৎসা নেন।
আহতদের মধ্যে ১২ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তন্মধ্যে ঢামেকের আইসিউতে ১ জন, বার্ন ইউনিটে ৫ জন, সিএমএইচে ২ জন ইউনাইটেড হাসপাতালে, ১ জন অ্যাপোলো হাসপাতালে ২ জন ও উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১ জনকে ভর্তি করা হয়।
ভর্তি রোগীদের মধ্যে বর্তমানে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তন্মধ্যে ঢামেকের আইসিইউতে ১ জন, সিএমএইচের আইসিইউতে ১ জন ও হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে ১ জন এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের আইসিইউতে ১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহতদের নাম-পরিচয় : মৌলভীবাজারের সামিনা ইয়াসমিন (৪৮) অ্যাপোলো হাসপাতালে, কাশিয়ানীর (গোপালগঞ্জ) পারভেজ সাজ্জাদ (৪৬) বনানী ক্লিনিকে, চাঁদপুরের আব্দুল্লাহ আল ফারুক (৬২) ঢামেক বার্ন ইউনিটে, রংপুরের মোস্তাফিজুর রহমান (৩৬), খুলনার মিজানুর রহমান লিটন (৩৪) চাঁদপুরের আতাউর রহমান (৬২) রংপুরের ফরিদা খানম (৪৫) শ্রীলংকার নিরস বি কে রাজা ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল (৪০) ঢাকা সিএমএইচে মারা যান।
Advertisement
আর ঢামেক হাসপাতালে মারা যান ৯জন। তারা হলেন- শরীয়তপুরের মির্জা আতিকুর রহমান (৪২), পাবনার আমির হোসেন রাব্বি (২৯), কুষ্টিয়ার ইফতিয়ার হোসেন মিঠু (৩৭), যশোরের জারিন তাসনিম বৃষ্টি (২৫), লালমনিরহাটের আঞ্জির সিদ্দিক আবির (২৭), নওগাঁর মঞ্জুর হোসাইন (৪৯), নারায়ণগঞ্জের ফজলে রাব্বি (৩০) ও নীলফামারির রুমকি আক্তার (৩০)।
কুর্মিটোলা ৫শ' শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৫ জনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন- নোয়াখালীর জেবুন্নেছা (৩০), মগবাজারের সালাউদ্দিন মিঠু (২৫), বগুড়ার তানজিলা মৌলি (২৫), চাঁদপুরের রেজাউল করিম রাজু (৪০) ও মির্জাপুরের (টাঙ্গাইল) নাহিদুল ইসলাম তুশার (৩৫)।
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান তিন জন। এরা হলেন- ঢাকার গেন্ডারিয়ার (ঢাকা) মাকসুদুর রহমান (৩২) ও মিরপুরের মনির হোসেন (৫২) এবং দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪০)।
হাসপাতালে ভর্তি যারা- সোহেল রানা (২৪) ও মেজর (অব.) মঈন (৪৮) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে, ফজলুল হক (২৮) ও শাহরিয়ার ইসলাম (৩৮) অ্যাপোলো হাসপাতালে, এ বি এম আতিকুর রহমান (৪৯) ইউনাইটেড হাসপাতালে, অনুপম দেবনাথ (৩৪), আব্দুস সবুর খান (৪২) তৌকির ইসলাম (৩২), সাব্বির (২৮) ও রিজওয়ান আহমেদ (৩৫) ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে এবং নজরুল ইসলাম (৪৭) উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এমইউ/এমএমজেড/পিআর