‘বর্তমান সরকার আবারও বাকশাল কায়েমের তোড়জোড় করছে’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন অভিযোগের পেরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বাকশাল আসবে কি-না এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ নেয়নি।
Advertisement
রোববার দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অনুপস্থিতিতে এটি সম্পাদকমণ্ডলীর প্রথম সভা।
গত ১৯ মার্চ এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থা (বাকশাল) কার্যকর থাকলে নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকত না, প্রশ্ন উঠত না। বাকশাল সর্বোত্তম পন্থা ছিল।
এরপর গত বুধবার (২৭ মার্চ) আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় বাকশাল যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছিল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করে জাতির পিতা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে চেয়েছিলেন। যেন কারো কাছে হাত পাততে না হয়, বাংলাদেশ যেন মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।
Advertisement
প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, যে ব্যবস্থাটি পুরোপুরিভাবে এদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং যে বাকশাল প্রবর্তনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পুরোপুরিভাবে হত্যা করা হয়েছিল, যে ব্যবস্থার কারণে দেশের মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল, যে ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের ওপর একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, সেই ব্যবস্থার এখন প্রশংসা করা হচ্ছে।
তিনি (মির্জা ফখরুল) আরও বলেন, আমরা অশনি সঙ্কেত দেখতে পাচ্ছি। এখনকার যে পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি, বাকশালকে আইনগতভাবে বৈধ করার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। এটা এদেশের মানুষের কাছে ভয়াবহ বার্তা নিয়ে আসছে। এ দেশের মানুষ কখনও একদলীয় ও এক ব্যক্তির শাসন ব্যবস্থা মেনে নেবে না।
বিএনপি মহাসচিবের এমন সমালোচনার প্রেক্ষিতেই বাকশালের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর অবস্থান সম্পর্কে জানান মাহবুবুল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, বাকশাল আসবে কি-না এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ নেয়নি। এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তখন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বাকশাল করা হয়েছিল। বর্তমান সরকারের ৫ বছর আছে। এ সময় অপ্রয়োজনীয় বিষয় আনার দরকার নেই।
Advertisement
সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের জন্য দোয়া এবং আশু আরোগ্য কামনা করা হয়েছে বলে জানান হানিফ। গত ৩ মার্চ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ওবায়দুল কাদের। পরের দিন ৪ মার্চ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেয়া হয় তাকে। বর্তমানে সেখানকার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।
রোববারের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় বনানীর অগ্নিকাণ্ডের বিষয়েও কথা হয়। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের হানিফ বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসসহ যেসব বাহিনী কাজ করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।
‘বর্তমান সরকার ফায়ার সার্ভিসের কোনো উন্নয়ন করেনি’- বিএনপি নেতাদের এমন মন্তব্যকে পুরোপুরি মিথ্যাচার দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময় ফায়ার স্টেশন ও জনবল দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। নতুন অনেক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৯ মার্চ সভাপতিমণ্ডলীর সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে দেশব্যাপী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ জন্য ৮টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল জাতীয় অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্যও ৮টি বিভাগে ৮টি টিমের খসড়া করা হয়েছে। ৫ এপ্রিল কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই টিমগুলো যাচাই বাছাই, সংযোজন-বিয়োজন করে চূড়ান্ত করা হবে।
উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকের বাইরে যারা নির্বাচন করেছে, তাদের আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কেউ সহযোগিতা করেছে কিনা এবং কারা সহযোগিতা করেছে তাদের তালিকা করার জন্য বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল, আ খ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও আহমদ হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওসার, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।
এমইউ/এমএএস/এমএমজেড/এমএস