দেশজুড়ে

মাস্ক পরে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের শিয়ালদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে সড়ক মেরামতের নির্মাণসামগ্রী রাখায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। শ্রেণিকক্ষে কমে গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, আলফাডাঙ্গা-শিরগ্রাম সড়ক মেরামতের কাজ করছে মেসার্স কচি এন্টারপ্রাইজ। সড়ক মেরামতের পাথর, বালু, বিটুমিনের ড্রাম, মিক্সার মেশিনসহ নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে শিয়ালদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। বিদ্যালয়ের পাশেই ড্রামে করে জ্বালানো হচ্ছে বিটুমিন। মিটুমিন জ্বালানো আর মিক্সার মেশিনের ধুঁয়া-ধুলায় একাকার বিদ্যালয় এলাকা। এ কারণে বিদ্যালয়ের জানালা দরজা বন্ধ করে চালানো হয় শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষকদের লাইব্রেরির জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। উপস্থিতির সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলে-মেয়েরা মুখে মাস্ক পরে ক্লাস করছে। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মুজাহিদুল ইসলাম জানায়, আমরা ভালো নেই। আমাদের অনেক সহপাঠী অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

একই শ্রেণির ছাত্রী রাবেয়া আক্তার জানায়, ধুঁয়া-ধুলার কারণে আমরা ক্লাস করতে পারছি না। এখনই আমাদের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে এ সমস্ত জিনিসপত্র স্কুল মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে হবে।

Advertisement

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আফরোজা আলম খান বলেন, প্রায় ১৫ দিন ধরে বিদ্যালয় মাঠে এসব নির্মাণসামগ্রী রেখে কাজ করা হচ্ছে। নির্মাণসামগ্রী রাখায় বিদ্যালয়ের মাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। বাইরের একটি টিউওবয়েলের পাকা স্থাপনা ভেঙে ফেলেছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। জানালা বন্ধ করে ক্লাস নিতে হয়। যে কারণে ঠিকভাবে পাঠদান কার্যক্রম চালানো যায় না। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুভাষ কুমার কুন্ডু বলেন, হঠাৎ করেই বিদ্যালয় মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখা শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি জানাই এবং দুইবার তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তবে বিষয়টি আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র নিজে তদারকি করছেন বিধায় আমরা কিছু করতে পারছি না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কচি এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহাবুবুর রহমান কচি বলেন, ওই এলাকায় কোনো খালি জায়গা পাওয়া যায়নি। তাই বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহার করতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে সেটা পূরণ করা হবে।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মিলন বলেন, প্রথম দিকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আলফাডাঙ্গার উচ্চপর্যায়ের লোকজন নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে আমরা কিছু করতে পারিনি।

Advertisement

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আবু বক্কার মিয়া বলেন, প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর সরেজমিনে পরিদর্শনে যাই। প্রধান শিক্ষককে এ ব্যাপারে দরখাস্ত দিতে বলেছি। দরখাস্ত পেলে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলবো।

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সাইফার বলেন, সড়কের কাজটি করছেন আমাদের কচি ভাই। এলাকায় জায়গা না থাকার কারণে স্কুল মাঠ ব্যবহার করছেন। স্কুলের কোনো ক্ষতি হলে ঠিকাদার সেটা পূরণ করবে মর্মে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও অন্যদেরকে অনুরোধ করেছি আমি।

বি কে সিকদার সজল/এএম/এমকেএইচ