জুলহাস মিয়া কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছেন না। পুড়ে যাওয়া দোকানের ছাই-ভস্ম ছুঁয়ে থেমে থেমেই তার আর্তনাদ, ‘ভাই আমার সব শেষ’, ‘আমার কী অইব’। এ সময় সেখানে থাকা এক মুরব্বিকে জড়িয়ে ধরে জীবিকার সম্বল হারানোর শোকে ভেঙে পড়েন তিনি।
Advertisement
গুলশান-১ নম্বর ডিএনসিসি (ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন) কাঁচাবাজারের ভয়াবহ আগুন এভাবে নিঃশেষ করে দিয়েছে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে।
আরও পড়ুন >> আগুনে নিঃশেষ জীবিকার শেষ সম্বল ছুঁয়ে আর্তনাদ
শনিবার ভোর পৌঁনে ৬টার দিকে ডিএনসিসি কাঁচাবাজারের পূর্ব পাশে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
Advertisement
আগুনে কেউ হতাহত না হলেও ২৯১টি দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আগুন নেভার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ দোকানের ছাই-ভস্ম সরাতে লেগে গেছেন। যদি অক্ষত কোনো কিছুর দেখা মেলে সেই খোঁজ করছেন
দেখা যায় কেউ কেউ ছলছল চোখে দোকানের পোড়া জিনিসপত্রের দিকে তাকিয়ে আছেন। বিহ্বল মানুষদের কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কেউবা দোকানের সামনে পরিচিতদের জড়িয়ে ধরে সব হারানোর বেদনায় কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
আরও পড়ুন >> আগেরবার পোড়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকার পণ্য, এবার ৮০ লাখের
Advertisement
জুলহাস মিয়া বলেন, তার দোকানের নাম মায়ের দোয়া বানিয়াতী স্টোর। দোকানে ২৫ লাখ টাকার মালামাল ছাড়াও নগদ ৭০ হাজার টাকা ছিল, সব শেষ।
ক্রোকারিজের দোকান আব্দুল্লাহ ব্রাইট স্টোরের মালিক সাব্বির বলেন, ‘প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পুড়ে সব গলে গেছে। আর ইলেকট্রনিক্সের জিনিসগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। আমার দোকানে প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল ছিল।’
অগ্নিকাণ্ডের স্থল ঘুরে দেখা গেছে, পোড়া ইলেকট্রিক্স সামগ্রী, কসমেটিক, শিশু খাদ্য ও পণ্য, মুদিপণ্য, তরিতরকারি, ডিম যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কেউ কেউ দোকানের মধ্যে থাকা বিভিন্ন পণ্যের পোড়া ছাই ও আধাপোড়া জিনিস সরিয়ে রাস্তায় রাখছেন।
এ সময় মার্কেটের মধ্যে আধাপোড়া অবস্থায় আলু, পেঁয়াজ, ডিম, চাল, ডাল, চিনি, লবণ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন >> গুলশানেও উৎসুক জনতা : বাধাগ্রস্ত আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম
কেউ কেউ আধাপোড়া পণ্য বস্তায় ভরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আবার অনেকে পুড়ে যাওয়া ধাতুর তৈরি বিভিন্ন পণ্য রাস্তার উপর জড়ো করছেন।
আগুনে মাছের দোকানও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে কিছু মাছ অক্ষত ছিল। সেগুলোকে একটি পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো সহযোগিতা দেয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে কি-না জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা দেয়া হবে। সরকারের নীতিমালা সাপেক্ষে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।’
এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে এখানে ২৯১টি দোকান আছে। ক্ষতিগ্রস্তরা বলেছেন আমাদের আবার মার্কেট করে দেন। মার্কেট করতে হয়তো ১৫ থেকে ২০ দিন লাগবে। আবার যখন অস্থায়ী মার্কেট হবে তখন কি ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন আমি মনে করি যারা ব্যবসায়ী আছেন সময় এসেছে সবার একসঙ্গে কাজ করার জন্য।’
মেয়র বলেন, ‘ফায়ার এক্সিট, ফায়ার হাইড্রেন্ট করতে হলে দোকানের সংখ্যা কমে যাবে। মালিকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে দোকান কমানোর জন্য কারা এগিয়ে আসবেন। আমরা চাই সুন্দর একটা প্ল্যান করে কিছু একটা করার জন্য।
তিনি বলেন, দোকানদাররা বলছেন, তারা এগুলো ভাড়া নিয়েছেন। নতুন দোকান করা হলে মালিক পাবেন, ভাড়াটিয়ারা পাবেন না। এখানে অনেক ধরনের জটিলতা আছে।’
আরএমএম/এমএমজেড/জেআইএম