রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারের আগুনের সূত্রপাত বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে। ভবনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র কিংবা রান্নাঘরের ওভেন থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগুনের তীব্রতা বেড়েছে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া দুটি হেলিকপ্টারের বাতাসের কারণে!
Advertisement
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বিষয়টি জানিয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন এবং একাধিকবার ভবনের ভেতরে যান।
ঘটনাস্থলে আসা একটি হেলিকপ্টার ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের আগুনে হেলিকপ্টারের ব্যবহার উপকারের চেয়ে অপকার বেশি। কর্তৃপক্ষের চিন্তাভাবনা ছিল যেহেতু অনেকে ছাদে আছেন, তাদের জীবন বাঁচাতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা যেতে পারে। দু-তিনবার হেলিকপ্টার যখন একটু বেশি নিচে নামে তখন প্রচুর বাতাস হয়, আগুনের তীব্রতা তখন বেড়ে যায়। পরে যখন আমরা তাদের বলি যে, আগুন বাড়ছে তখন হেলিকপ্টার চলে যায়। একই ঘটনা ঘটেছিল বসুন্ধরা সিটির অগ্নিকাণ্ডে।
আগুন লাগার পরপরই দুটি উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার ওপর থেকে পানি ও বালি ছেটায়। একপর্যায়ে তারা ভবন থেকে ৫০-৬০ ফিট উঁচুতে এসে দুজনকে উদ্ধার করে।
Advertisement
আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভবনের অষ্টম অথবা নবমতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুনের ধর্ম হচ্ছে, লাগার পর তা ওপরের দিকে বাড়তে থাকে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে আমরা ধারণা করছি, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত। যে ফ্লোরে আগুন প্রথম লেগেছিল সেখানে অধিক সংখ্যক কম্পিউটার, সিপিইউ, আইপিএস, ইউপিএস, সার্ভার রুমসহ নানা ধরনের তারের জঞ্জাল ছিল। এর যেকোনো একটিতে আগুন লেগে ছড়িয়ে পাড়তে পারে।
তিনি জানান, যখন আগুন লাগে তখন ওই অফিসে লাঞ্চ আওয়ার (দুপুরের খাবার) চলছিল। এমনও হতে পারে, কেউ ফ্লোরের রান্নাঘরে ওভেনে খাবার গরম করতে দিয়েছিল। সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। আগুনের ফলে ভেতরের সবকিছু এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, সূত্রপাতের জায়গাটি খুঁজতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে বৈদ্যুতিক গোলযোগেই ঘটেছে- এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভবনের অষ্টম, নবম ও দশমতলার বিভিন্ন বোর্ড, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী বিশেষ করে কম্পিউটার থাকায় আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ওই তিনটি ফ্লোরই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আগুন ঠিক কোনো ফ্লোর থেকে লেগেছে তা এখনও নিশ্চিত নয়।
ওই ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তদন্ত শেষে আগুনের কারণ ও সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যাবে।
Advertisement
‘আগুনের তীব্রতা বাড়িয়েছে হেলিকপ্টার’- এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমদ খানের কাছে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগুনের দিন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। গ্রামে মাটির চুলায় আগুনের আঁচ যখন কমে যায় তা বাড়ানোর জন্য চোঙা দিয়ে ফু দেয়া লাগে। বাতাসে আগুনের তীব্রতা বাড়ে। সেদিন বনানীর ঘটনায় হেলিকপ্টারের বাতাস আগুনের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। তা না হলে আগুন আরও দুই ঘণ্টা আগে নিয়ন্ত্রণে আনা যেত।
‘ওইদিন হেলিকপ্টার ব্যবহারের ফলে তা থেকে সৃষ্ট বাতাস আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারতো। হেলিকপ্টার যখন উদ্ধারের জন্য নিচে নেমে ভবনের কাছাকাছি চলে আসে, তখন ফায়ার সার্ভিসের জীবনরক্ষাকারী সিঁড়িগুলো (ল্যাডার ইউনিট) নড়চড় করছিল। সেগুলো পড়ে যেতে পারতো।’
তিনি বলেন, ‘হেলিকপ্টার বনজঙ্গলের আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত হয়, ভবনের নয়।’
উল্লেখ্য, বনানীর আগুনের ঘটনায় মোট ২৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২০ জন। তাদের মধ্যে ৫৬ জন রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণের পর অন্যরা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবস এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটিকে ৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এআর/জেএইচ/এমএআর/আরআইপি