ফিচার

ঢাকা শহরের ভয়াবহ যত অগ্নিকাণ্ড

যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা আর অগ্নিকাণ্ডে বসবাসের অযোগ্য শহর ঢাকা। যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনার পর অগ্নিকাণ্ড এবার মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে রাজধানী ঢাকা শহরেই ২,০৮৮টি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া পৃথিবীতে অগ্নি দুর্ঘটনায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহর ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকাকে। আজ ঢাকায় সংঘটিত কিছু অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানাবো-

Advertisement

বসুন্ধরা সিটি: ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ বসুন্ধরা সিটিতে আগুন লাগে। এ আগুনে প্রাণহানী না ঘটলেও পুরো ঢাকা শহরকে নাড়িয়ে দিয়েছিল তীব্রভাবে।

নিমতলী: ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটরায় রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হন নারী ও শিশুসহ ১২৪ জন। নিমতলীর ৪৩ নম্বর বাড়িতে রাত ৯টায় ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় দুই বোন রুনা আর রত্মা এবং পাশের বাড়িতে আসমা নামে এক মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলছিল। কনেরা পার্লারে সাজছিল। আর বাড়ির নিচতলায় রান্না চলছিল। রান্নার জায়গার পাশেই ছিল কেমিক্যালের গুদাম। প্রচণ্ড তাপে গুদামে থাকা কেমিক্যালের প্লাস্টিক ড্রাম গলে যায়। এরপর মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে দরজা-জানালা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

> আরও পড়ুন- কী ঘটেছিল সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিলে

Advertisement

তাজরীন ফ্যাশন: ২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১১ জন নিহত হন। ঢাকা মহানগরীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড কারখানায় ভয়ানক এ দুর্ঘটনায় নয়তলা ভবনের ছয়তলা ভস্মীভূত হয়ে যায়। এতে সরাসরি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় ১০১ জন পোশাকশ্রমিক। আগুন থেকে রেহাই পেতে উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয় আরও ১০ জনের।

রাজধানীর বস্তি: ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরআগে ২০১৬ সালের ০৫ অক্টোবর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে বউবাজার বস্তিতে আগুনে পুড়ে যায় ৫০টি ঘর। এছাড়া ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর একই বস্তিতে লাগা আগুনে প্রাণ হারান ১১ জন। একই বছর ১২ মার্চ রাজধানীর পল্লবীর ইলিয়াস আলী মোল্লা বস্তিতে আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডে বস্তির প্রায় ৫ হাজার ঘরের সব পুড়ে যায়। এছাড়া মাঝে মাঝেই বস্তিগুলোতে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে থাকে।

ডিএনসিসি মার্কেট: ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি ভোরবেলা গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মার্কেটটির বহু দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর অস্থায়ীভাবে দোকান তৈরি করে মার্কেটটি চালু করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ ভোরে আবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ভোর ৫টা ৪৮ মিনিটে মার্কেটের কাঁচাবাজারের পূর্ব পাশে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

> আরও পড়ুন- অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে চাইলে

Advertisement

চকবাজারের চুড়িহাট্টা: ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। রাত পৌনে ১১টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। জানা যায়, সেখানে কেমিক্যালের গোডাউন থাকায় আগুন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জন নিহত হন। আহত হন অনেকেই।

বনানী এফআর টাওয়ার: ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ৭০ জন। ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ, বিমান এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৬ ঘণ্টা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

গার্মেন্টস শিল্প: ২০১২ সালে গরীব অ্যান্ড গরীব গার্মেন্টসে লাগা আগুনে নিহত হন ২১ জন। এছাড়া হামীম গ্রুপের অগ্নিকাণ্ডে ২৯ জনের প্রাণহানী ঘটে। ২০১৩ সালের ২৮ জুন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে স্মার্ট এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেডে আগুনে পুড়ে ৭ নারী পোশাকশ্রমিক নিহত হন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টসগুলোতে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়।

এসইউ/এমএস