ভারতীয় একটি বিমানের ফ্লাইটে ৫০ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি নারী হঠাৎ করেই শ্বাস নিতে পারছিলেন না। সে সময় এক বিমান সেবিকা ঘোষণা দেন যে, দয়া করে বিমানে কোনও চিকিৎসক থাকলে এগিয়ে আসুন। বিমানসেবিকার এই ঘোষণা শুনে ৯ নম্বর রো-এ থাকা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত চিকিৎসক এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন তিলক এগিয়ে আসেন।
Advertisement
তিলক বেল টিপে বিমানসেবিকাকে ডাকতেই তিনি প্রায় ছুটে এসে জানতে চান, ‘আপনি ডাক্তার? পরে বিমান সেবিকার সঙ্গেই ২৭ নম্বর রো-এর সামনে গিয়ে ওই চিকিৎসক দেখেন মধ্যবয়সী এক নারী শ্বাস নিতে না পেরে আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ছেন। সঙ্গে ছিল তার মেয়ে।
পুণে থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টায় বিমান ছাড়ার পরে ততক্ষণে প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট ওড়া হয়ে গিয়েছে বিমানটির। তিলককে ওই নারীর মেয়ে জানান, তারা বাংলাদেশি। তার মা কল্পনারানি সাহা অনেক দিন ধরেই ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছেন। চিকিৎসার জন্যই পুণে গিয়েছিলেন তারা। সেখান থেকে কলকাতায় ফিরে শুক্রবার বিকেলেই ঢাকার রওনা করা কথা তাদের।
তিলক পুণের এএফএমসি-তে (সেনা হাসপাতাল) কর্মরত এবং কাকতালীয় ভাবে তিনি ফুসফুসের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। তিনি কলকাতায় যাচ্ছিলেন অঙ্কোলজি নিয়ে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে। তিনি বলেন, আমি যখন ওই নারীর কাছে পৌঁছাই, তখন তার বেশ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। দেখলাম, পাল্স খুব কম। বিমানসেবিকা মেডিকেল বক্স এনে দিলেন। সেখানে বিপি মেশিন ছিল। সেটা বের করে দেখার আগেই তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পাল্স। কেঁদে ফেলেন পাশে থাকা মেয়ে।
Advertisement
২৭ নম্বর রো পুরোটা খালি করিয়ে তিলক কল্পনাকে শুইয়ে দেন। এরপর তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি বলেন, প্রায় এক মিনিট ধরে পাল্স পাওয়া যাচ্ছিল না। একটানা হার্টে মাসাজ করার পরে আবার শ্বাস নিতে শুরু করেন তিনি।
তিলকের বলেন, আমি তখন প্রয়োজনীয় জরুরি ওষুধ খুঁজছিলাম। তখন তার মেয়ে জানালেন, তার কাছে মায়ের ইনহেলার রয়েছে। তখন নেবুলাইজ করতে পারলে সুবিধা হতো। কিন্তু ইনহেলার তখনকার মতো সাহায্য করেছে। বিমানে অক্সিজেন ছিল। তাও দেওয়া হয়েছে তাকে।
এর মধ্যে বিমানে থাকা আরও দুই চিকিৎসক চলে আসেন তিলকের পাশে। কল্পনা তখন কিছুটা সুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। পরে তাকে একটি জরুরি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও সৈনিক আহত হলে তাকে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়াই তিলকদের কাজ। সময় ধরে সেই জওয়ানকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালাতে হয় আপ্রাণ। ফলে কল্পনাকে ঠিক মতোই সেবা দিতে পেরেছেন তিনি।
বিমানটি কলকাতায় নেমে দরজা খোলার পরে বিমানবন্দরে থাকা চিকিৎসক কল্পনার কাছে আসা পর্যন্ত তিলক সেখান থেকে নড়েননি। বসে ছিলেন তার পাশে। বিমানবন্দরের চিকিৎসকরা কল্পনাকে পরীক্ষা করে পাঠিয়ে দেন কাছাকাছি একটি হাসপাতালে। সেখানে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেলের ফ্লাইটেই মেয়ের সঙ্গে ঢাকা ফিরেছেন কল্পনা।
Advertisement
তিলকের পুরো নাম টি ভি এস ভি জি কে তিলক। তিনি বলেন, যে কোনও ধরনের জরুরি অবস্থা সামলানোর প্রশিক্ষণটাই সেনাবাহিনীতে প্রথম দেওয়া হয়। আমার ৪৪ বছরের জীবনে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে আর কখনও সেই প্রশিক্ষণ কাজে আসেনি। কিন্তু সেদিন ভিনদেশি এক নারীর জন্য সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। গর্ব হচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্যও।
টিটিএন/এমএস