নিজের প্রথম ওভারে খরচ করেছেন ১২ রান, অধিনায়ক রোহিত শর্মা তাই সরিয়েই নেন আক্রমণ থেকে। দ্বিতীয় স্পেলে যখন ফিরলেন বল হাতে, ততক্ষণে জমে গেছে ডি ভিলিয়ার্স-বিরাট কোহলি জুটি। জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু।
Advertisement
সেখান থেকে ১৪তম ওভারে আক্রমণে এসে নিজের শেষ তিন ওভারে মাত্র ৮ রান খরচায় তুলে নেন ৩ উইকেট, দলকে পাইয়ে দেন ৬ রানের রোমাঞ্চকর জয়। ব্যাঙ্গালুরুর মাঠ থেকে মৌসুমে নিজেদের প্রথম জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস।
একপ্রান্তে এবি ডি ভিলিয়ার্স ৪১ বলে ৭০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকলেও, জাসপ্রিত বুমরার বিধ্বংসী বোলিংয়ের বিপরীতে দলের পরাজয়ই দেখেছেন দাঁড়িয়ে। আগে ব্যাট করে মুম্বাই দাঁড় করায় ১৮৭ রানের সংগ্রহ। জবাবে ব্যাঙ্গালুরুর ইনিংস থামে ৫ উইকেটে ১৮১ রানে।
১৪তম ওভারে আক্রমণে এসে মাত্র তিন রান খরচ করে ব্যাঙ্গালুরু অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে ফেরান বুমরা, ভাঙেন জুটি, শক্তি কমিয়ে দেন ডি ভিলিয়ার্সের। ১৭তম ওভারে আরও ভয়ঙ্কর বুমরা। এবার মাত্র এক রান খরচ করে নেন শিমরন হেটমায়ারের উইকেট।
Advertisement
তবু একপ্রান্ত আগলে রেখে ডি ভিলিয়ার্স ঠিকই চালিয়ে নিচ্ছিলেন নিজের ব্যাট। শেষ তিন ওভারে ৪০ রানের চাহিদায় হার্দিক পান্ডিয়ার করা ১৮তম ওভারে ঠিক ১৮ রান নিয়ে নেন ভিলিয়ার্স। ১২ বলে বাকি থাকে ২২ রান। তখনই যেনো নিজের জাদুর শেষটুকু দেখান বুমরা।
বল হাতে করতে আসেন ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথা ১৯তম ওভারটি। আগের ওভারেই পরপর ২ ছক্কা মেরে আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর ডি ভিলিয়ার্স। তাতে থোড়াই কেয়ার বুমরার। সে ওভারে একবারও বাউন্ডারি ছাড়া করতে পারেননি ডি ভিলিয়ার্স। মাত্র ৫ রানের বিনিময়ের কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে ফিরিয়ে মুম্বাইয়ের জয় প্রায় নিশ্চিতই করে দেন বুমরা।
শেষ ওভারে ব্যাঙ্গালুরুর সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭ রানের। প্রথম বলেই অভিজ্ঞ লাসিথ মালিঙ্গাকে ছক্কা হাঁকান তরুণ শিবাম দুবে। আশা জেগে ওঠে ব্যাঙ্গালুরুর। কিন্তু পরের চার বলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান মালিঙ্গা। দেন মাত্র ৪টি রান। শেষ বলে তরুণ শিবাম দুবের সামনে তখন ১ বলে ৭ রানের লক্ষ্য।
ম্যাচ জেতা তখন অসম্ভব, তবু ছক্কা হাঁকালে ম্যাচ গড়াবে সুপার ওভারে। এ আশায় ব্যাট ঘোরান দুবে, কিন্তু ১ রানের বেশি পাননি। ফলে ম্যাচ জিতে যায় মুম্বাই। তবে টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, শেষ বলটি করার সময় দাগের বাইরে পা ফেলেছেন মালিঙ্গা।
Advertisement
কিন্তু আম্পায়ারের চোখ এড়িয়ে যাওয়ায় রক্ষা পায় মুম্বাই। তবে রাগে ফুঁসতে থাকেন কোহলি। যা উগড়ে দেন ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। কিন্ত লাভ হয়নি এতে। মৌসুমে নিজেদের প্রথম জয় পেয়েছে মুম্বাই। দুই ম্যাচ খেলে এখনো জয়হীন কোহলির ব্যাঙ্গালুরু।
দলের আশা ভরসার প্রতীক হয়ে ৪ চার ও ৬ ছক্কার মারে ৪১ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন ডি ভিলিয়ার্স। এছাড়া অধিনায়ক কোহলি ৩২ বলে ৪৬ এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান পার্থিব প্যাটেল করেন ২২ বলে ৩১ রান।
বল হাতে মুম্বাইকে ম্যাচ জেতানো বুমরা ৪ ওভারে মাত্র ২০ খরচায় নেন ৩ উইকেট। এছাড়া তরুণ লেগস্পিনার মায়াঙ্ক মারকান্দে নেন একটি উইকেট। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের ফল নির্ধারক তিন ওভার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন জাসপ্রিত বুমরা।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বিরাট কোহলির দলকে জয়ের জন্য ১৮৮ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় রোহিত শর্মার দল। ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টস জিতেছিলেন স্বাগতিক অধিনায়ক কোহলিই।
তবে তিনি রোহিত শর্মাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজে ফিল্ডিং বেছে নেন। ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক এবং রোহিত শর্মা মিলে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন মুম্বাইকে।
তবে ৬.৩ ওভারে ৬৩ রানের জুটি গড়ার পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান দু’জন। ২০ বলে ২৩ রান করে আউট হন ডি কক। ৩৩ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন রোহিত শর্মা। ৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে ১টি ছক্কার মার মারেন তিনি।
সূর্যকুমার যাদব ২৪ বলে খেলেন ৩৮ রানের ইনিংস। যুবরাজ সিং করেন ১২ বলে ২৩ রান। শেষ দিকে হার্দিক পান্ডিয়া রীতিমতো ঝড় তোলেন ব্যাঙ্গালুরু বোলারদের ওপর। ১৪ বলে তিনি খেলেন ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস। ২ বাউন্ডারির সঙ্গে তিনি মারেন ৩ ছক্কা। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ১৮৭ রান সংগ্রহ করে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।
ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে ইয়ুজবেন্দ্র চাহাল নেন ৪ উইকেট। এছাড়া উমেশ যাদভ এবং মোহাম্মদ সিরাজ নেন ২টি করে উইকেট।
এসএএস/বিএ