আন্তর্জাতিক

ফেলে দেয়া বই কুড়িয়ে জ্ঞানের আলো ছড়ান তিনি

কেউ একজন বলেছিলেন যারা বই ভালোবাসে তারা নাকি মানুষ খুন করতে পারেন না। তবে বই পড়া আর বইকে ভালোবাসা এক ব্যাপার নয়। মানব সভ্যতার ইতিহাস হলো জ্ঞান অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। আর জ্ঞানের একটা বড় বাহন বই।

Advertisement

তবে শিক্ষিত হওয়ার সঙ্গে জ্ঞানের বেশ খানিকটা পার্থক্য রয়েছে। যারা জ্ঞানের খোঁজ করেন তাদের সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকে জানার প্রবল আগ্রহ। বই পড়তে সবাই ভালোবাসেন না। তাইতো অনেকে ‘প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে’ বই ফেলে দেন কিংবা বিক্রি করেন।

বই নিয়ে এমন একজন মানুষের ভালোবাসার গল্প বলবো আপনাদের যিনি কিনা নিজে তথাকথিত শিক্ষিত নন। সামান্য একজন পরিচ্ছন্নাতাকর্মী তিনি। তবে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা তার অগাধ। তাইতো ময়লা সংগ্রহ করার সময় আবর্জনার স্তুপে কুড়িয়ে পাওয়া বই দিয়ে গড়েছেন একটি লাইব্রেরি। সেই বইপ্রেমী মানুষ দক্ষিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার বাসিন্দা। তার নাম হোসে আলবার্তো গুটিরেজ। ১৯৯৭ সালে তিনি কলম্বিয়াতে একজন আবর্জনা সংগ্রহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

আলবার্তো গুটিরেজ ময়লা বহনকারী ট্রাকের ড্রাইভার ছিলেন। তিনি কাজ করতেন মূলত রাতে। আবর্জনার স্তুপ থেকে বই দেখতেন তিনি। ভাবেন, অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছে তাই হয়তো বইগুলো ঘরে স্থান না পাওয়ায় ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন>> বেতন গরিবদের বিলিয়ে পেলেন বিশ্বসেরা শিক্ষকের পুরস্কার

একদিন তিনি খ্যাতিমান রুশ লেখক লিও টলস্টয়ের একটি বিখ্যাত বই পড়ে থাকতে দেখেন। গুটিরেজ টলস্টয়কে চিনতেন। তাই বইটি সংগ্রহ করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু প্রায়ই তিনি আবর্জনার স্তুপ থেকে এরকম বই খুঁজে পেতেন। শুরু করলেন বইগুলো সংগ্রহ।

সেই ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে এখনো তিনি একই কাজ করে যাচ্ছেন। সংগৃহীত বই দিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি লাইব্রেরি। তার লাইব্রেরিতে এখন বইয়ের সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি।

আলবার্তো গুটিরেজ বলেন, উত্তরাধিকারদের জন্য আমরা সবচেয়ে মূল্যবান যা রেখে যেতে পারি সেটা শিক্ষা। আর শিক্ষার হাতিয়ার বইয়ের এই বিপুল সংগ্রহশালা। যা নিশ্চয়ই পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।

Advertisement

কলম্বিয়ার বোগাটায় বসবাস থাকেন গুটিরেজ। গরীবদের এলাকা হওয়ায় সেখানকার কিশোররা পড়ার সুযোগ পায় খুব কম। কাজের সন্ধ্যানে নামতে হয় তাদের অল্প বয়সেই। সেখানে এখন শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে গুটিরেজের লাইব্রেরি।

গুটিরেজের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যান্য ময়লাবাহী ট্রাক ড্রাইভাররাও এখন কোথাও বই পেলেই তাকে দিয়ে যায়। তিনি শিক্ষা উপকরণ দিয়েছেন ২৩৫ টি স্কুল, কমিউনিটিকে। তার সংগৃহীত বইগুলো দিয়ে তিনি একটি কমিউনিটি লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন।

শিক্ষা অনুরাগী ৫৫ বছর বয়সী গুটিরেজ গত বিশ বছর ধরে এই কাজ করেন। সংগৃহীত বই তিনি দান করেন বিভিন্ন লাইব্রেরিতে। তার সংগ্রহের বইয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে ৪৫০টির অধিক লাইব্রেরি, রিডিং সেন্টার, স্কুলের পাঠকক্ষ।

তিনি স্বপ্ন দেখেন একদিন তিনি গোটা কলম্বিয়াকে বই দিয়ে পরিপূর্ণ করবেন। তার মনে হয় সংঘাত কবলিত এই পৃথিবীতে বইপ্রেমী মানুষের খুব দরকার। তিনি আজীবন এই কাজ করে যেতে চান।

এসএ/পিআর