খেলাধুলা

৩০-৪০ এর ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন সৌম্য!

সর্বশেষ ১২ ইনিংসের মধ্যে একটিই উল্লেখযোগ্য। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে একটি ১৪৯ রানের ইনিংস। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটা পেয়েছেন হ্যামিল্টন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে। বাকি ১১ ইনিংসের একটিতেও নেই হাফ সেঞ্চুরি। একবার ডাক মেরেছেন, ২ বার আছে ১ রান করে। সর্বোচ্চ ৪৩। অধিকাংশ সময়ই সৌম্য সরকার আটকে যাচ্ছেন ২০ থেকে ৪০ রানের মধ্যে।

Advertisement

সৌম্য সরকারের ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করলে এই চিত্রই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে। অথচ, তাকে মনে করা হয় বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। ইনিংস ওপেন করতে নামলে শুরুতেই দারুণ ব্যাটিং করেন। কিন্তু হঠাৎ করেই খেই হারিয়ে ফেলেন। কোনো না কোনো লুজ বলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন।

বিশ্বকাপেও সৌম্য সরকারের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ। অথচ, তার নিজেরই কি না ফর্ম ঠিকমত নেই। নিউজিল্যান্ড থেকে ফেরার পর খেলছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। আবাহনীর হয়ে ব্যাট করতে নেমে সৌম্য সরকারের ব্যাট কথা বলছে না। এমন পরিস্থিতিতে, বিশ্বকাপের আগে নিজেকে মানসিকভাবে কতটা প্রস্তুত করছেন সৌম্য?

আর মিরপুরের শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সৌম্য নিজেই জানালেন, এই যে ৩০-৪০ রানের মধ্যে আউট হয়ে যাচ্ছেন, এ নিয়ে তিনি কাজ করছেন। এ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন।

Advertisement

নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে সৌম্য বলেন, ‘একেক জনের কাছে তো একেক রকম প্ল্যানিং। তো আমার কাছে মনে হয় যে, আমরা যেমন ক্রিকেট খেলছি তার মধ্যে অনেক ল্যাকিংস থাকতে পারে। আমি মনে করি যে আমার জন্য ম্যাচের প্রস্তুতিটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর উইকেটের মধ্যে প্ল্যানিংটা অনেক বেশি থাকতে হবে।’

৩০-৪০-এর মধ্যে আটকে থাকার বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত সৌম্য। তিনি বলেন, ‘সাধারণত, আমি যে এমন ৩০ বা ৪০ করার পর আউট হয়ে যাচ্ছি, ওই জায়গাটা থেকে কিভাবে বের হওয়া যায় (সেটা নিয়ে চিন্তা করছি বা কাজ করছি)। বাইরে থেকে চিন্তা না করে আমি যদি ওই জায়গায় একটু অন্যরকমভাবে প্ল্যান করি যে না, আউট হয়ে যাচ্ছি, প্রথম কয়েকটি ম্যাচে একই ভাবে খেলেছি এবং আউট হয়েছি। সুতরাং এই প্ল্যানটি চেঞ্জ করে সেখান থেকে সহজে কিভাবে বের হওয়া যায় তেমন প্ল্যানিং করছি।’

উইকেটে দীর্ঘসময় থাকার বিষয় নিয়ে সৌম্য সরকার বলেন, ‘আর উইকেটের মধ্যে থেকে কতটা শিখতে পারছি, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো বা হচ্ছে না, তবে এর মধ্যেও অনেক কিছু শেখার ছিলো আমার। গত তিন ম্যাচেও আপনি দেখবেন যে আমি ৩৩, ৩৬, ৪৬ করে আউট হয়ে গেছি। এর মধ্যে যে প্ল্যানগুলো ছিলো সেটি আমার জন্য ভালো এবং আমিও খুশি যে আমার ওয়েটা ঠিক ছিলো। তবে আমি আউট হয়েছি ভালো বলগুলোতে। দিনটি আমার ছিলো না আসলে। আমার যে প্রকিয়াটা ছিলো, আমার কাছে মনে হয়েছে যে সেটি যদি ধরে রাখতে পারি তাহলে সেখান থেকে ব্যাক করা যাবে।’

প্রিমিয়ার লিগ খেলে যাচ্ছেন সৌম্য। বিশ্বকাপের আগে এ দিয়ে ম্যাচ প্র্যাকটিসও হয়ে যাচ্ছে। তবুও সৌম্যর ব্যক্তিগত ইচ্ছা, লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করার। সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট চলছে। সেখানে যে ম্যাচগুলো পাবো, চেষ্টা করবো লম্বা সময় ব্যাটিং করা। যাই হোক, বল বেশি করি বা রান বেশি করি..., মাঝখানে যে পরিস্থিতিটা থাকে সেটি নিয়ে একটু কম চিন্তা করা এর ভেতরেই। আর দলের পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলা গুরুত্বপূর্ণ। আমি যদি এভাবে খেলতে থাকি, তাহলে আমার মধ্যে সেটি বেশি করে করতে থাকবে। সেটি নিয়েই বেশি কাজ করছি।’

Advertisement

২০১৫ বিশ্বকাপের তিন-চার মাস বাকি থাকতে জাতীয় দলের সঙ্গে পরিচয়। আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। এবারও একই পরিস্থিতি। দুই সময়ের মধ্যে পার্থক্য কি? জানতে চাইলে সৌম্য বলেন, ‘আসলে আগেরটাতে পুরোই নতুন ছিলাম। আর এবার যদি সুযোগ পাই তাহলে অবশ্যই পরিকল্পনা তেমনই থাকবে। হয়তো বা এবার পরিকল্পনা একটু ভিন্ন থাকবে। ওই সময় যেভাবে জুনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে ফ্রি মাইন্ডে খেলেছি এখন হয়তো অতটা ফ্রি থাকবো না, একটু চাপ তো থাকবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যতটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে ওখানে গিয়ে সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবো। আগে যে বিশ্বকাপ খেলেছি বা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেছি- ওখানে যে সাহস নিয়ে খেলেছি সেটা ধরে রাখার চেষ্টা থাকবে।’

বিশ্বকাপের আগের এই সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টা কিভাবে পার করছেন সৌম্য সরকার। কোনো প্ল্যান করে চলছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। সেটাই তো বললাম, যে খেলাগুলো চলছে আমি সেখানে প্ল্যান করছি যে খেলার যে কোনো পরিস্থিতি এবং গেম প্ল্যান সেগুলো নিয়ে বেশি কাজ করছি। এখানে তো খেলছি অবশ্যই, তবে তার মধ্যেও চিন্তা করছি যে এই পরিস্থিতিতে ওখানে খেললে কেমন হবে বা এখন আমি যদি আউট হয়ে যাই তাহলে দল কেমন চাপে পড়বে। সুতরাং এই চিন্তাগুলো করেই এগিয়ে যাচ্ছি।’

খেলায় পরিবর্তন এনেছেন কি না? সৌম্য সরকার বলেন, ‘না। কাজ করতে গেলে কিন্তু আসলে একটা কাজ একদিনে শেষ হয় না। একদিন হয়তো খুব সহজেই সাফল্য পাওয়া যায়, আরেকদিন দেখা যায় অনেক কষ্ট করে সফলতা পাওয়া যায়। এই প্র্যাকটিসগুলো করছি। আর যেসব প্র্যাকটিস করছি তাতে একটু সময় লাগছে। মূলতঃ সময় নিয়ে করছি যেন শতভাগ না হলেও যেন ৯৯ ভাগ ভালো হয়। সেগুলো নিয়েই কাজ করছি। লম্বা সময় ব্যাটিং করছি।’

এআরবি/আইএইচএস/পিআর