আন্তর্জাতিক

শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদের প্রচার নিষিদ্ধ করছে ফেসবুক

চলতি মাসের এক শুক্রবারে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদ এবং লিনউড মসজিদে অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত এক শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীর গুলিতে নিহত হন অর্ধশত মুসল্লি। হামলাকারী নৃশংস সেই বন্দুক হামলার ঘটনা ফেসবুক লাইভে সরাসরি সম্প্রচার করেছিল।

Advertisement

হামলার পর তাৎক্ষনিকভাবে ১৫ লাখ ভিডিও মুছে ফেলা হয়েছে দাবী করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তারও কয়েকদিন পর তারা জানায় নৃশংস সেই হত্যাযজ্ঞের লাইভ দেখেছিলেন মাত্র দুইশ জন মানুষ। তবে অনেকে তাদের এই দাবি মেনে নেয়নি।

ভয়াবহ সেই হামলার ঘটনা লাইভ সম্প্রচারিত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে। সর্বস্তরের মানুষ শ্বেত জাতীয়বাদের নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ করে।

নিন্দা আর প্রতিবাদ প্রবল হওয়ার প্রেক্ষিতে এবার ফেসবুক ঘোষণা দিয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদ কিংবা জাতীয়তাবাদের ‘স্তুতি-প্রশংসা, সমর্থন ও প্রতিনিধিত্বমূলক’ কোন ধরনের পোষ্ট করা যাবে না আর ফেসবুকে।

Advertisement

বুধবার এক ব্লগ পোষ্টে ফেসবুক জানিয়েছে, ‘সুশীল সমাজ এবং একাডেমিকদের সঙ্গে তিন মাস আলোচনার পর সংস্থাটি বুঝতে পেরেছে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদকে ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ’ ও সংগঠিত ‘হেট ক্রাইমে’র থেকে আলাদা করা যাবে না।

তাছাড়া যেকোনো জঙ্গি মতাদর্শ প্রচারে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি চিহ্নিত এবং ব্লক করার ক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্তাব্যক্তিরা।

এ ধরণের জিনিসপত্র ফেসবুকে যারা সার্চ করবেন তাদের তথ্য সরাসরি উগ্র জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এমন সংস্থার কাছে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জায়ান্টটি।

এর আগে ফেসবুক শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের কিছু কর্মকাণ্ড, যেসব ঘটনাকে বর্ণবাদী বলে মনে করেনি, তা চালানোর অনুমতি দিয়েছিল। যার মধ্যে শ্বেতাঙ্গদের জন্য আলাদা জাতিরাষ্ট্রের দাবি সম্বলিত প্রচারণাও ছিল।

Advertisement

অবশ্য এ বিষয়ে ফেসবুক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, ‘এটা মার্কিন নাগরিকদের নিজেদের নিয়ে গর্ব এবং বাস্কদের বিচ্ছিন্নতাবাদের মত ব্যপার, যাকে আমরা সেখানকার মানুষের নিজেদের পরিচয়ের জরুরি অংশ বলে মনে করি।’

যার কারণে ফলে প্রতিজন ব্যবহারকারীর নিজের পরিচয়কে সম্মান জানানোর জন্য সেগুলো বন্ধ করা হতো না বলে জানিয়েছে ফেসবুক।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে জঙ্গি মতাদর্শ প্রচারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যাতে ব্যবহার না করা হয়, সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব নেতাদের অনেকেই।

নিউজিল্যান্ডের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল ‘প্রকাশক, শুধু পোষ্টম্যান বা বার্তাবাহক না’।

ফেসবুক এর আগে জানিয়েছিল, মসজিদে হামলার ঘটনার ভিডিওটি মুছে ফেলার আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ লাখ ভিডিও ব্লক করেছে এবং তিন লক্ষ ভিডিও ডিলিট করেছে। কিন্তু তার আগেই অন্য যেকোন ভিডিওর চেয়ে চার হাজার গুণ বেশি মানুষ সেটি দেখেছে।

এদিকে, ফরাসী মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গ্রুপ ঐ ফুটেজ ব্যবহারের জন্য ফেসবুক এবং ইউটিউবের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে।

ফেসবুকের সঙ্গে এখন অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও এমন সহিংস জিনিস সম্প্রচার বন্ধের ব্যপারে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে।

এসএ/পিআর