জাতীয়

নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় : প্রধানমন্ত্রী

নিরীহ মানুষ অযথা যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে র‌্যাব সদস্যদের অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Advertisement

তিনি বলেন, আপনাদের কাজ হবে 'দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন'। এই নীতিতে অটল থাকবেন। কোনোভাবেই নিরীহ মানুষ যেন অত্যাচার নির্যাতনের শিকার না হয়। অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে মানবাধিকারের বিষয়টিও ভাবার জন্য র‌্যাব সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা র‌্যাব ফোর্সেসের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন র‌্যাব ফোর্সেসের একটি চৌকস দল।

সকাল ১০টায় র‌্যাবের সদর দফতর, কুর্মিটোলায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী বলেন, র‌্যাব সদস্যদের বেতন এবং সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া অভিযান পরিচালনার জন্য আধুনিক সরঞ্জামসহ যা কিছু প্রয়োজন তা দেয়া হচ্ছে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হলে আমরা আরও সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন পরবর্তী অগ্নি সন্ত্রাসসহ বিএনপি যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল তা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে র‌্যাব কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা ছিল প্রশংসার মতো। এবার তারা অধিক তৎপর থাকায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনের আগে মতিঝিলে অবৈধ টাকাসহ তাদের আটক করেছে র‌্যাব। এ টাকা সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার হতো।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ৪৮ বছরের মধ্যে ২৯ বছর দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ সময় দেশে কোনো গণতন্ত্র ছিল না। ৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত আমরা দেশে উন্নয়ন করেছি। স্বাধীনতার পর এ সময়টা ছিল দেশের মানুষের জন্য সুখের সময়। এছাড়া গত ১০ বছরে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এই সাড়ে তিন বছর তিনি দেশের উন্নয়নের জন্য এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে হাত দেননি। দেশকে তিনি যখনই উন্নয়ন এবং অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন ঠিক তখনই পঁচাত্তরের ঘাতকরা নিশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এরপরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা দেশে উন্নয়ন দিতে পারেনি, গণতন্ত্র দিতে পারেনি । কারণ দেশ ছিল অস্থিতিশীল। এ সময় ১৯টি ক্যু হয়েছে। ঘন ঘন কারফিউ হয়েছে। মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। কেউ কথা বলতে পারতো না। অস্বাভাবিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে মানুষ জীবন যাপন করেছে যে কারণে উন্নয়ন হয়নি।

Advertisement

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশি-বিদেশি প্রচুর বিনিয়োগ আসছে। প্রবাসী বাঙালিরা দেশে বিনিয়োগ করছে। দেশে কর্মসংস্থানের জন্য ১০০টি শিল্পাঞ্চল করা হয়েছে। এ সব শিল্পাঞ্চলে আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা দিতে হবে। সে জন্য র‌্যাব পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় সীমানা নির্ধারণ এবং সমুদ্রসীমা সমাধান করেছি। ছিটমহল বিনিময় যে শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে এটা একটা দৃষ্টান্ত। এত শান্তিপূর্ণভাবে কোনো ছিটমহলের সমাধান হয় না, বিশ্বে নজির নেই। আমরা যে বিশাল সমুদ্রসীমার অর্জন করেছি তা কাজে লাগাতে হবে। এজন্য আমরা ব্লু ইকোনমি নীতি অনুসরণ করছি। এছাড়া এখন আমরা মহাকাশ বিজয় করেছি। মহাকাশ বিজয় এবং অন্য উন্নয়ন সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা শুধু সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদ ও মাদকের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করবেন না, এদের সঙ্গে নতুন করে যাতে কেউ যুক্ত না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য যা করণীয় সব করবেন। মনে রাখবেন আপনাদের পরিবার-পরিজন গ্রামে বাস করে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা গ্রামকে শহরের সুযোগ সুবিধা দিতে চাচ্ছি। গ্রামের প্রতিটি ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে শিক্ষিত হবে, চাকরি করবে, ব্যবসা বাণিজ্য করবে, উদ্যক্তা হবে। দেশের উন্নয়ন হলে আপনাদের পরিবার উন্নয়ন থেকে বাদ যাবে না। এ কথা মনে রেখেই আপনাদের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করতে হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০২০ থেকে ২০২১ সাল মুজিব বর্ষ পালন করতে চাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীকে সুন্দর এবং ব্যাপকভাবে পালন করতে চাই। দেশকে আমরা এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই যে ২০৭১ সালে যারা এ দেশে বসবাস করবে তারা যেন উন্নত সমৃদ্ধ একটি দেশ পায়।

অনুষ্ঠানের পরে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব ১০, ১৩ ও ১৪ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ফলক উন্মোচন করেন।

এফএইচএস/এএইচ/জেআইএম