আলতাফ পারভেজ। গবেষণা করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে। লিখছেন, রাজনীতি, ইতিহাসের নানা প্রসঙ্গ নিয়েই।
Advertisement
ভারতের আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করেন নির্মোহভাবে।
বলেন, বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে এখন রাজনৈতিকভাবেই জাতীয়তাবাদের বিস্তার ঘটছে। আর এ কারণেই গণমানুষের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো নির্বাচনে চাপা পড়ছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধের খবরে। যার পেছনে রয়েছে পুঁজির কর্তৃত্ব।
এই বিশ্লেষক মনে করেন, কংগ্রেস আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে বিশেষ ছাড় দিয়ে জোট গঠন করতে না পারলে নির্বাচনের ফলাফল বিজেপির পক্ষে যাবে। তবে আঞ্চলিক দলগুলোও এবারের নির্বাচনে ভালো করতে পারে বলেও মত দেন। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে দ্বিতীয়টি।
Advertisement
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু
জাগো নিউজ : আগের পর্বে বলেছিলেন, মোদি নয়, মূলত এবারে ভারতের নির্বাচন লড়াই হচ্ছে বিজেপি প্রধান অমিত শাহ বনাম অন্যরা। এই লড়াইয়ের চেহারাটা কী হতে পারে?
আলতাফ পারভেজ : কংগ্রেস গতবার পেয়েছিল ৪৪টি আসন। ভারতে সরকার গঠন করতে হলে ২৭২টি আসন দরকার হয়। ফলে কেউ বলতে পারবে না কংগ্রেস এবার এককভাবে সরকার গঠন করবে। অর্থাৎ শূন্য ভাগ সম্ভাবনা এক্ষেত্রে। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোট সরকার হতে পারে, এমন সম্ভাবনা শতকরা ৩০ ভাগ।
অপরদিকে বিজেপি এককভাগে সরকার গঠন করতে পারে, সে সম্ভাবনা হচ্ছে শতকরা ১০ ভাগ। বিজেপি গতবার পেয়েছিল ২৮২টি আসন। অর্থাৎ সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে মাত্র ১০টি আসন বেশি পেয়েছিল। এবার বিজেপি’র আসন কমবে। প্রশ্ন হচ্ছে কত ভাগ কমবে?
Advertisement
আরও পড়ুন > ভারতের এবারের নির্বাচন হচ্ছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ
আমি মনে করছি, বিজেপির নেতৃত্বে জোট সরকার গঠন করার সম্ভাবনা শতকরা ৪০ ভাগ। আর আঞ্চলিক দলগুলোর জোট সরকার গঠন করার ২০ ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। এসব হিসাবের ফলাফল হচ্ছে মোদির সম্ভাবনা ৫০ ভাগ। তবে বাকি ৫০ ভাগে কিন্তু কংগ্রেস নেই। আবার দ্বিতীয় অপশনে আমি চারটি সম্ভাবনার কথা বলেছি।
১. বিজেপি গতবারের চেয়েও ভালো করবে। ২. অথবা বিজেপি গতবারের মতো ফলাফল করবে। ৩. অথবা গতবারের চেয়ে খারাপ করবে। ৪. অথবা গতবারের চেয়ে খুব খারাপ করবে।
তবে ১ এবং ৪নং সম্ভাবনার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার খুব দরকার আছে বলে মনে করি না। কারণ কেউই মনে করছেন না বিজেপি গতবারের চেয়ে ভালো করবে। আবার বিজেপি গতবারের চেয়ে খুব খারাপ করবে, এটিও কোনো তথ্য দ্বারা সমর্থিত হচ্ছে না।
সম্প্রতি যে রাজ্যগুলোতে বিজেপি হেরেছে, সেখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির ভোটের ব্যবধান খুবই কম। জাতীয় নির্বাচনে এই ব্যবধান আরও কমিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন অমিত শাহ। সুতরাং বিজেপি গতবারের চেয়ে খুব ভালো করবে না ঠিক, তবে খুব খারাপও করবে না।
তার মানে বিজেপির জন্য দুটি অপশন নিয়ে আলোচনা করা যায়। হয় বিজেপি গতবারের মতো ফল করবে, নতুবা গতবারের চেয়ে খারাপ করবে। তবে আমি মনে করি, বিজেপি গতবারের চেয়ে কিছুটা খারাপ করবে।
জাগো নিউজ : তার মানে খারাপ করলেও বিজেপি-ই ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকছে?
আলতাফ পারভেজ : ভারতের নির্বাচনে ‘সম্ভাবনা’ ঠিক নিশ্চিত থাকে না। বিজেপি আসলে কতটুকু খারাপ করবে তার ওপরেই নির্ভর করছে। ধরুন, গতবারের চেয়ে ৫০টি আসন কম পেল বিজেপি। আবার ৩০টি আসনও কম পেতে পারে। যদি ৫০টি আসন কম পায়, তখন প্রশ্ন আসছে তাহলে এ আসনগুলো কে পাবে?
বিজেপির না পাওয়া আসনগুলো যদি আঞ্চলিক দলগুলো পায়, তাহলে এক ধরনের চিত্র সামনে আসবে। তখন সরকার গঠনে আঞ্চলিক দলগুলো ভূমিকা রাখতে পারবে। যদি কংগ্রেস পায়, তাহলে তাদের সরকার গঠন করার সম্ভাবনা থাকবে।
সঙ্গত কারণে বলতে হয়, বিজেপি খারাপ করবে এটি হয়তো সত্য, তেমনি অনিশ্চিত হচ্ছে আসলে ‘ভালো’টা করবে কারা। আবারও প্রশ্ন থেকে যায়, বিজেপি আসলে কতটা খারাপ করবে?
জাগো নিউজ : আপনার বিশ্লেষণ কী? বিজেপি খারাপ করলে কে ভালো করতে পারে?
আলতাফ পারভেজ : বিজেপি খারাপ করলে আঞ্চলিক দলগুলোর ভালো করার সমূহ সম্ভাবনা আছে। ভারতের সবচেয়ে বড় প্রদেশ হচ্ছে উত্তরপ্রদেশ। সেখানে ৮০টি আসন। উত্তরপ্রদেশে এবারে বড় একটি ঘটনা ঘটে গেছে। আঞ্চলিক বড় দুটি দল এবার এক হয়েছে। বহুজন সমাজবাদী পার্টি আর সমাজবাদী পার্টি জোট করেছে।
গতবার ৮০ আসনের মধ্যে ৭৩টি পেয়েছিল বিজেপি। এবারে সেখানে বিজেপির আসন সংখ্যা ২০টিতে নামতে পারে। কংগ্রেস কিন্তু এখানে শক্তিশালী না। তার মানে আঞ্চলিক দল ভালো করবে। আর সেখানে আঞ্চলিক বড় নেতা মায়াবতী। মায়াবতী রাহুল গান্ধীকে সমর্থন করবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। মায়াবতী অন্য আঞ্চলিক দলগুলোর সমর্থনও চাইতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যায় আঞ্চলিক দলগুলো ভালো করলে মায়াবতী শক্তিশালী অবস্থানে যেতে পারে। এসব রাজ্যে ভালো না করলে আঞ্চলিক দলগুলো ভালো করতে পারবে না।
জাগো নিউজ : আঞ্চলিক দলগুলোর বেলায় পুঁজিপতিদের অবস্থান কী হবে?
আলতাফ পারভেজ : পুঁজিবাদীরা চাইবে না কংগ্রেস, বিজেপির বাইরে অন্য কোনো শক্তি ক্ষমতায় আসুক। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, নতুন শক্তি ক্ষমতায় আসলে পুঁজির জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। সিদ্ধান্ত নিতে বিতর্ক করতে হবে। আঞ্চলিক শক্তিগুলো বাধা দেবে। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি আঞ্চলিক দলগুলো ভালো করে এবং পুঁজিপতিরা তাদের না চায়, তখন কী হবে? তখন পুঁজিপতিরা চাইবে রাহুল গান্ধী ক্ষমতায় আসুক।
জাগো নিউজ : সেটি কি সহজ হবে? পুঁজিপতিরা তো বিজেপির পক্ষে?
আরও পড়ুন > ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ‘সাময়িক’
আলতাফ পারভেজ : রাহুল গান্ধীর পক্ষে আঞ্চলিক দলগুলোর সমর্থন পাওয়া এবার অত সহজ হবে না।
জাগো নিউজ : কিন্তু জোটগত রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা তো কংগ্রেসেরই ভালো।
আলতাফ পারভেজ : কংগ্রেসের সে অভিজ্ঞতা বেশ ভালো। তবে বিজেপি যদি খারাপ করে এবং শরিক দলগুলোর সমর্থন দরকার পড়ে, তখন হয়তো শরিকেরা চাইবে মোদির জায়গায় অন্য কাউকে বসিয়ে সরকার গঠন করা হোক।
জাগো নিউজ : মোদির বিকল্প কেন খুঁজবে?
আলতাফ পারভেজ : মোদির ঘনিষ্ঠ বন্ধু হচ্ছেন অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথের মতো রক্ষণশীল নেতারা। বিজেপির মধ্যে এই তিনজনই এখন বড় লবি। এটি অনেক শরিক দলের পছন্দ নয়।
জাগো নিউজ : কিন্তু নরেন্দ্র মোদির আদর্শকে অনেকটা মেনে নিয়েই তো তারা জোট করেছেন?
আলতাফ পারভেজ : হ্যাঁ। এরপরেও সহনীয় এবং অসহনীয় বলে দুটি শব্দ আছে। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, আদিত্যনাথ অতিমাত্রায় রক্ষণশীল গোছের নেতা। মুসলিম, দলিতদের ব্যাপারে তারা খুবই হার্ডলাইনে। গত ৫ বছরে অন্তত তাই প্রমাণ মিলেছে। বিজেপির অনেক শরিকের জন্য এটি বিব্রতকর।
বিজেপির শরিকরা আসামে, মহারাষ্ট্রে, উত্তরপ্রদেশে আছে এবং তাদের মুসলিম, দলিত সমর্থকরাও আছে। তাহলে গত ৫ বছরে ওই শরিকরা অবশ্যই বিব্রত হয়েছে বিজেপির নেয়া নীতির কারণে। শরিকরা বিজেপির সঙ্গে থাকতে চাইবে বটে, তবে অপেক্ষাকৃত সহনীয় মানসিকতার নেতৃত্ব দেখতে চায়। অর্থাৎ মোদির বিকল্প খুঁজতে চাইবে হয়তো।
জাগো নিউজ : কিন্তু মোদির সফলতার গল্পও আছে। অন্তত হিন্দুত্ববাদীদের কাছে মোদি এখন জনপ্রিয়ও।
আলতাফ পারভেজ : মোদির সফলতার গল্প মূল্যায়ন করতে হবে উপরিতল থেকে। মোদি ভারতকে দেখাতে চাইছে বৈশ্বিক শক্তিরূপে। ভারত এখন আঞ্চলিক মুরব্বিতে পরিণত হচ্ছে। চীনকে মোকাবেলা করছে। এগুলো মোদি সমর্থক মিডিয়া ব্র্যান্ড করছে। এগুলো বড় বড় অর্জন বলে দেখানো হচ্ছে।
কিন্তু ভারতের ভেতর থেকে দেখলে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে হয়। ভারতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দরিদ্র মানুষ বসবাস করছে। মুম্বাই, গুজরাটের পাশাপাশি বিহার, উড়িষ্যার মতো অনুন্নত রাজ্যও আছে। ভারতে আদিবাসীদের অবস্থা খুবই খারাপ। ভারতে এখনও বন্যঘৃণা রয়ে গেছে। অচ্ছুত সংস্কৃতি আছে। দলিতদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে। গরু রক্ষার নামে মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে। গো-মূত্র নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে সেখানে।
ভারতে কৃষকরা খুবই বঞ্চনার শিকার। দলিতরা, মুসলিমরা বঞ্চনার শিকার। মূলত এগুলোই হওয়ার কথা ছিল ভারতীয় রাজনীতি, নির্বাচনের ইস্যু। অথচ ৫টি সাবমেরিন কিনেছে কী-না, পারমাণবিক অস্ত্র আছে, অত্যাধুনিক বিমান কিনেছে এসবই এখন ভারতের নির্বাচনের ইস্যু।
জাগো নিউজ : ভারতের দুই রূপের কথা বলছেন। নির্বাচনে সাধারণ মানুষ কোন রূপ বিশ্বাস করবে?
আলতাফ পারভেজ : সাধারণ মানুষ অবশ্যই বেঁচে থাকার লড়াইকেই গুরুত্ব দেবে। তবে নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ইস্যুগুলো সেই অর্থে গুরুত্ব পাবে না। মিডিয়া উপরিতলের বিষয়গুলোই বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছে।
এর কারণ হচ্ছে, পুঁজিপতিরা ভারতের বড় বড় মিডিয়ায় বিনিয়োগ করে রেখেছে। আম্বানিদের প্রায় ৪০টি মিডিয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের কাছে ছত্তিশগড়ের আদিবাসীদের খবরের চেয়ে মোদি পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে পারল কী-না, এমন খবরই বড় করে দেখায়। গ্রামীণ জনপথের দরিদ্র কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কী-না তা নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনা নেই।
বেকারত্ব, তরুণ শিক্ষিতদের জন্য কী করা হলো তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। ভারতের মিডিয়া খুবই নিয়ন্ত্রিত একপেশে নীতি অবলম্বন করছে। সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার বিষয়গুলো ইস্যু হতে দেবেই না। হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ লিখতে চাইছে। কিন্তু দিন শেষে আলোচনাটা চলে যাচ্ছে জাতীয়তাবাদ, যুদ্ধ, পাকিস্তানকেন্দ্রিক ইস্যুতে।
জাগো নিউজ : কিন্তু সাধারণ ভোটার কী মিডিয়ার তৈরি ইস্যুতেই ভরসা রাখবে?
আলতাফ পারভেজ : মিডিয়া ক্রমাগতভাবে ধারণা উৎপাদন করতে থাকলে সমাজে সেটাই ইস্যু হয়ে যায়। যদি প্রতিবাদ করার মতো অন্য কোনো ঢেউ থাকত, তাহলে মিডিয়ার তৈরি ইস্যুতে মানুষ ভেসে যেত না।
জাগো নিউজ : কংগ্রেস তো বিজেপির তৈরি ইস্যুকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছে?
আলতাফ পারভেজ : ঠিক তা নয়। কংগ্রেসও বিজেপির তৈরি বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছে। কংগ্রেস বিতর্কের ভিন্ন প্যারাডাইস তৈরি করতে পারেনি। এমনকি ভারতের বামপন্থী বা সমাজতান্ত্রিক দলগুলোও বিকল্প এজেন্ডা তৈরি করতে পারেনি। যদিও বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, মোদিকে হারানোই তাদের মূল লক্ষ্য। বামপন্থিদের ইস্যু হওয়ার কথা দরিদ্র মানুষের স্বার্থ। কিন্তু মোদির তৈরি যুদ্ধ উন্মাদনার মধ্যে বামপন্থীরাও অংশ নিয়েছে। যে কারণে তারা তাদের এজেন্ডাগুলোও রক্ষা করতে পারেনি।
জাগো নিউজ : বিজেপিকে হারানো কংগ্রেসরও লক্ষ্য। এই প্রশ্নে বামপন্থীদের পাশে কংগ্রেসকে পেতেই পারে।
আলতাফ পারভেজ : কংগ্রেস অন্য দলগুলোকে নিয়ে যে একটি বিজেপিবিরোধী জোট করবে, তা কিন্তু পারেনি।
জাগো নিউজ : না পারার কারণ কী হতে পারে?
আলতাফ পারভেজ : কংগ্রেস প্রকাশ্যে বিজেপিকে শত্রু ভাবছে। কিন্তু গোপনে গোপনে চাইছে, তৃতীয় কোনো শক্তির যেন উত্থান না ঘটে। কংগ্রেস জোট করার নামে এমন কোনো ছাড় দেবে না, যাতে করে তৃতীয় পক্ষ বেশি আসন পেয়ে যায়। সেখানে প্রতিদিনই অবস্থান পাল্টাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের সঙ্গে কংগ্রেসের ঐক্য হওয়ার কথা ছিল।
জানতে পারলাম, সেই ঐক্য আপাতত হচ্ছে না। এখানে ঐক্য হলে সিপিএম ভালো করত। উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী এবং অখিলেশ যাদবদের সঙ্গে কংগ্রেসের ঐক্য হওয়ার কথা ছিল। সেটাও হচ্ছে না। অন্ধ্র প্রদেশেও ঐক্য হচ্ছে না। ঐক্য হলে ওই সব প্রদেশে আঞ্চলিক দলগুলোও কিছু আসন বেশি পেত।
কংগ্রেসের সঙ্গে অন্যদের ঐক না হলে বিজেপি ভালো করবে। যেমন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপির সঙ্গে চতুরমুখী লড়াই হবে। ঐক্য না হওয়ায় মমতা এবং বিজেপি ভালো করবে। খারাপ করবে কংগ্রেস এবং সিপিএম। কংগ্রেস চায় বিজেপিবিরোধীরা ভালো করুক, তবে সেই বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় কংগ্রেস। কংগ্রেসের এই ভূমিকায় সংকীর্ণ মনোভাবের প্রকাশ পেয়েছে। এই সংকীর্ণ মনোভাবের ফলাফল দেবে বিজেপিকে।
ধর্মনিরপেক্ষ মনে করে পূর্বে মুসলমানরা কংগ্রেসকে ভোট দিত। কিন্তু গত ৫ বছরে কংগ্রেস মুসলমানদের পক্ষে এমন কোনো অবস্থান নেয়নি, যে কারণে তারা কংগ্রেসের ভোট ব্যাংক হিসেবে ফিরে আসবে। এবার মুসলমানরা অনেকটাই আঞ্চলিক বিবেচনায় ভোট দেবে। উত্তরপ্রদেশে দেখা গেছে মুসলমানদের কেউ কেউ বিজেপিকেও ভোট দিয়েছে।
হিন্দু ভোট কমবে বলে কংগ্রেস এখন মুসলমানদের পক্ষ নিতেও ভয় পায়। এই ভয়ের কারণে তারা মুসলমানদের ভোটও হারাচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় মধ্যপন্থার জায়গাটা সংকীর্ণ হচ্ছে। আর এটিই এখন কংগ্রেসের নিয়তি। এ অঞ্চলে উগ্রজাতীয়তাবাদী রাজনীতির বিকাশ ঘটছে। আর এ ধারা যেন প্রাকৃতিকভাবেই ঘটছে। সর্বত্রই উগ্রবাদের বিস্তার। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম এসেছে। আমি তো মনে করি, ট্রাম আবারও ক্ষমতায় আসবে। আমি, আপনি ট্রামকে পছন্দ করছি না। বাস্তবতা তো নৈর্ব্যক্তিকভাবেই দেখতে হবে।
মিডিয়া এবং পুঁজিবাদী স্বার্থ এক হয়ে মানুষকে এমন মনোজগতে প্রবেশ করাচ্ছে, যেখানে ব্যক্তি তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে। ধর্ম হোক অথবা জাতীয়তাবাদই হোক, যার ওপর ভর করে মানুষ উগ্র সিদ্ধান্ত নিতে কোনো দ্বিধা করে না। মানুষ এখন কল্পিত সংকটে পড়ে প্রতিপক্ষ খুঁজে বেড়াচ্ছে। একজন দলিত খারাপ অবস্থায় আছে, অথচ সে তার জীবনের সংকটগুলো বাদ দিয়ে পাকিস্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। সে তার নিজ গ্রামের সমস্যার কথা ভুলে গেছেন। অথবা তাকে ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে।
মূলত অস্ত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই এই উগ্রবাদের রাজনীতি। শান্তি থাকলে তো অস্ত্র ব্যবসায় লাভ নেই। অশান্তি থাকলেই লাভ।
এএসএস/এমআরএম/জেআইএম