দুই দশক আগে সৌদি আরবের এক ধনকুবেরের ইয়ট থেকে চুরি যাওয়া পাবলো পিকাসোর একটি চিত্রকর্ম উদ্ধার করেছেন আর্ট ওয়ার্ল্ডের ইন্ডিয়ানা জোনস খ্যাত ডাচ গোয়েন্দা আর্থার ব্র্যান্ড। বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
Advertisement
১৯৯৯ সালে পাবলো পিকাসোর এই চিত্রকর্মটি শেষ বারের মতো দেখা যায় সৌদির ওই ধনকুবেরের ইয়টে। আর্থার ব্র্যান্ড বলছেন, হারানোর পর থেকে কয়েক বছর ধরে এই ছবির জন্যে ডাচ অপরাধ জগতে চলেছে পুলিশি খোঁজ।
পিকাসোর ওই চিত্রকর্মটির নাম বুস্ট ডা ফাম বা ডোরা মা। ১৯৩৮ সালে প্রথম এই নারীর প্রতিকৃতি আঁকা হয়। যে চিত্রকর্মটির মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৫ মিলিয়ন ইউরো বা ২৮ মিলিয়ন ডলার।
ডোরা মার ছিলেন কিংবদন্তী চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর প্রেমিকা। তাদের মধ্যে ছিল সাত বছরের প্রেমের সম্পর্ক। চিত্রকর্মটি শিল্পীর নিজের বাড়িতে ১৯৭৩ সাল অর্থাৎ তার মৃত্যু পর্যন্ত টাঙানো ছিল।
Advertisement
আর্থার ব্র্যান্ড গত বছরে সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছিলেন সেইন্ট মার্কের হারিয়ে যাওয়া একটি বাইজেন্টাইন মোজাইক মূর্তি উদ্ধার করে। ১৯৭০ সালে সাইপ্রাসের একটি গির্জা থেকে যেটি চুরি যায়।
তার আন্তর্জাতিক প্রশংসা ও স্বীকৃতি মেলে যখন তিনি নাৎসি ভাস্কর জোসেফ থোরাকের তৈরি দুটি ঘোড়ার মূর্তি উদ্ধার করেন। যেটি হিটলারের ঘোড়া নামে পরিচিত, আর এ ঘটনাটি ২০১৫ সালের।
সংবাদ সংস্থা এএফপিকে পিকাসোর এই চিত্রকর্মটি সম্পর্কে আর্থার বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই এটির খোঁজ করা হচ্ছিল। কখনো এই ছবিটি জালিয়াতির কাজে বা কখনো মাদক বেচাকেনার মূল্য হিসেবেও ব্যবহার হয়েছে।
আর্থার ব্রান্ড নেদারলান্ডেসের একটি স্থানীয় দৈনিককে বলেন, ‘অনেকেই মনে করেছিল যে, এটি নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশ চুরি হওয়া শিল্পের ক্ষেত্রে সাধারণত ঘটে থাকে। কেননা এগুলো পরে আর খোলা বাজারে বিক্রি করা যায় না।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ডোরা মারের পোট্রেটটি খুঁজে পাওয়ার পর এক রাতে তিনি সেটি নিজের শোবার ঘরে টাঙিয়ে রেখেছিলেন আর ছবিটি খুঁতিয়ে দেখেছিলেন।
২০১৫ সাল থেকে আর্থার ব্রান্ড এই শিল্পকর্মটির খোঁজ শুরু করেন। এক জাহাজ থেকে পিকাসোর একটি পেইন্টিং চুরি হয়েছে জানতে পারার পরই তিনি মূলত খোঁজে নামেন। তারপর নেদারল্যান্ডসের অপরাধ জগতে তিনি এটি প্রচার করে দেন। যদিও তিনি নিশ্চিত ছিলেন না যে এই কৌশলটি কাজ করবে কিনা।
কয়েক বছরের অনুসন্ধানের পর আর্থার ব্র্যান্ড জানতে পারে, চিত্রকর্মটি বুস্ট ডা ফাম’র যা কিনা ডোরা মা’রের পোট্রেট হিসেবেও পরিচিত।
ডোরা মার একজন বিখ্যাত আলোকচিত্রী এবং শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯০৭ সালে থিওডোর মার্কোভিচে তার জন্ম। ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত পাবলো পিকাসোর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ১৯৯৭ সালে ৮৯ বছর বয়সে ডোরা মার মৃত্যু হয়।
শেখ আবদুল মোহসেন আব্দুলমালিক আল-শেখ নামের এক সৌদি ধনকুবেরের বিলাসবহুল ইয়ট থেকে এই শিল্পকর্মটি চুরি হয়ে যায়। সেসময় কোরাল আইল্যান্ডে জাহাজটির কিছু সংস্কারের কাজ চলছিল।
তিনি একবার যখন নিশ্চিত হলেন যে তিনি ঠিক কোন চিত্রকর্মটি খুঁজছেন, তখন থেকে তিনি সেই সব লোকদের কাছে আবেদন করতে থাকেন। যেসব ব্যক্তি এই চিত্রকর্মটির সঠিক পরিচয় না জেনেই হয়তো কিনে থাকতে পারেন।
চলতি মাসের শুরুতে তার কাছে এর সাড়া মেলে। এএফপিকে আর্থার ব্রান্ড বলেন, ‘একজন ডাচ ব্যবসায়ীর দু’জন প্রতিনিধি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, তাদের মক্কেলের কাছে ছবিটি আছে। তিনি বিষয়টিতে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, সেই ব্যক্তি ভেবেছিলেন যে পিকাসোর শিল্পকর্মটি বৈধ ছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে দেখা গেল যে, ছবিটি আসল হলেও যে উপায়ে তিনি সেটি কিনেছিলেন, সেটি বৈধ ছিলনা।
বিষয়টি বোঝার পর তারা একটি কালো ময়লা ব্যাগে জড়িয়ে সেই মাস্টারপিসটি আর্থার ব্র্যান্ডের আমাস্টাডার্মের ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেন।
ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডসের পুলিশ জানিয়েছে, তারা চিত্রকর্মটির সর্বশেষ মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না। এখন একটি বীমা কোম্পানি পুরো বিষয়টি দেখছে। তারাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
এসএ/পিআর