পাচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আনা চার রোহিঙ্গা নারীকে উদ্ধার করেছে র্যাব। বুধবার ভোরের দিকে খিলগাঁওয়ে র্যাব-৩ এর অভিযানে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট ও ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের কপি উদ্ধার করা হয়েছে।
Advertisement
বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, ‘সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে নারী পাচার করে আসছে বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র। পাচারের পর সেইসব দেশে নির্যাতনের শিকার হলে জবাবদিহি কিংবা আইনি ঝামেলা এড়াতে এবার একটি চক্রের টার্গেট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীরা। ইতোমধ্যে ভুয়া পরিচয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করে চার রোহিঙ্গা নারীর জন্য পাসপোর্টের আবেদন করা হয়েছিল। তবে পাসপোর্ট তৈরি হওয়ার আগেই ওই চার রোহিঙ্গা নারীদের উদ্ধারসহ পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব-৩।’
আটকরা হচ্ছেন আব্দুল হামিদ (পাচারকারী দলের সদস্য) এবং রিয়াদ হোসেন (পাসপোর্টের দালাল)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ৩৩টি পাসপোর্টসহ বিপুল পরিমাণ ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের কপি, পাসপোর্টের ফরম ও একটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়।
উদ্ধার রোহিঙ্গা নারীরা হচ্ছেন মিয়ানমারের মন্ডু শহরের বাগঘুনা এলাকার বাসিন্দা হাসিনা বেগম (২৫), বুশরা আক্তার (১৯), ছাবেকুন্নাহার (১৮) ও মিয়ানমারের ভুচি দং এলাকার বাসিন্দা রুমা আক্তার (১৮)। তারা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে ২০১৭ সাল থেকে কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালি ক্যাম্পে বসবাস করছিলেন।
Advertisement
আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিও এমরানুল হাসান বলেন, ‘শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থানকালে মানবপাচার চক্রের দালাল জাহিদের প্রলোভনে সৌদি আরবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চার নারী। মার্চের প্রথম সপ্তাহে দালাল জাহিদ ও মোমিনুলের সহায়তায় তারা ঢাকায় এসে খিলগাঁওয়ে আটক হামিদের ভাড়া বাসায় অবস্থান করতে থাকেন। কক্সবাজারের দালাল জাহিদ ও মোমিনুলও মিয়ানমারের বংশোদ্ভূত নাগরিক।’
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের বাসিন্দা হামিদ গত প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির সহায়তায় মানবপাচার চক্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। সৌদি আরবে নারী পাচার করতে কোনো টাকা লাগত না। এ কারণে খুব সহজেই অসহায় নারীদের প্রলুব্ধ করা যায়। সম্প্রতি চক্রটি রোহিঙ্গা নারীদের টার্গেট করে। কারণ, সৌদিতে এসব নারীরা নির্যাতনের শিকার হলে তাদেরকে (পাচারকারী) জবাবদিহি করতে হবে না এবং ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নিতে পারবে না।’
র্যাব-৩ অধিনায়ক আরও জানান, একেকজন রোহিঙ্গা নাগরিক পাচারের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে বাজেট চক্রটির। এর মধ্যে হামিদ নিজে পেতেন ১৫ হাজার টাকা। আটকদের ঢাকায় থাকা-খাওয়াবাবদ খরচও পেতেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব অধিনায়ক জানান, আটক রিয়াদের কেরানীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের পাশে একটি ফটোকপির দোকান রয়েছে। তিনি নিজের ইচ্ছামতো ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করে নিজেই প্রয়োজনীয় কাগজ সত্যায়িত করে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতেন। উদ্ধার চার রোহিঙ্গা নাগরিককে ক্যাম্পে প্রত্যাবর্তন এবং আটক দুইজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।
Advertisement
এআর/এসআর/এমএস