জাতীয়

এক প্রান্তে দড়ি অন্য প্রান্তে বসতি!

রাজধানীর মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ মোড়ের দিকে একটু এগোলেই চোখে পড়বে ভিন্ন রকমের এক ফুটওভার ব্রিজ। অন্য আর দশটা ব্রিজের মতো এতে কোনো সিঁড়ির ধাপ নেই। একটু হেলানোভাবে মসৃণ ছাদটিই যেন আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠে গেছে। তাই এতে উঠতে যেমন বাড়তি শক্তি ব্যয় হয় না, তেমনি নামতেও বেগ পেতে হয় না।

Advertisement

ফুটওভার ব্রিজটির এক প্রান্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, অন্য প্রান্তে রমনা পার্ক। এছাড়া দুই পাশেই রয়েছে সবুজেঘেরা গাছ-গাছালি। ফলে ব্রিজের উপরে উঠতে বেশ ভালোই লাগে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এমন সুন্দর একটি ফুটওভার ব্রিজ ফেলে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে পারাপার হচ্ছে!

ব্রিজটি ব্যবহারে পথচারীদের উৎসাহ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও নেই কোনো উদ্যোগ। বরং কর্তৃপক্ষই যেন এটি ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছে। ফলে শো-কেসের ন্যায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে এটি।

রোববার সরেজমিন ব্রিজ এলাকা ঘুরে এবং এর আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার স্বাদ মেলে এ প্রতিবেদকের। রোববার দুপুরে রমনা পার্ক প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজটির প্রবেশ পথ দড়ি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। যেন কেউ ব্রিজটিতে উঠতে না পারে!

Advertisement

পরে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েকদিন আগে ওই এলাকার ফুটপাতের টাইলস পরিবর্তনের কাজ চলছিল। তাই ফুটপাতসহ ব্রিজটিতে যেন জনগণ উঠতে না পারে সে জন্য দড়ি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। টাইলস পরিবর্তনের কাজ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু দড়ি খুলে দেয়ার কথাটি বেমালুম ভুলে গেছে কর্তৃপক্ষ!

দড়ির প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে এ প্রতিবেদক ফুটওভার ব্রিজের উপরে উঠে দেখতে পান, উপরের অংশটা বেশ পরিষ্কার। তবে দুই পাশে উঁচু করে ব্যানার টানানোয় উপর থেকে রাস্তা দেখার কোনো উপায় নেই।

ব্রিজটির সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রান্তের দিকে নামতে গিয়ে দেখা যায়, অস্থায়ী মানুষের বসবাসের সরঞ্জাম, একটি টঙ দোকান ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা। শেষ প্রান্তে গিয়ে দেখা মেলে বেশকিছু উদ্বাস্তু, পরিবার-পরিজন নিয়ে বসে আছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে প্রান্তে ব্রিজটি এসে মিশেছে ঠিক তার মাঝ বরাবর শাহ আলম নামের এক আখের রসবিক্রেতা মেশিন বসিয়েছেন।

‘এটা তো ওভারব্রিজ, এখান দিয়ে মানুষ পারাপার হবে। আর আপনি মেশিন বসিয়ে আখের রস বিক্রি করছেন- এমন প্রশ্নে শাহ আলম মুখভর্তি হাসি দিয়ে বলেন, ‘এ ওভারব্রিজে দিনে ১০টা লোকও পার হয় না। তাই কিছু বেচাবিক্রি করছি। বোঝেন তো, গরিব মানুষ!’

Advertisement

প্রশাসন বা পুলিশের লোকজন কিছু বলে না- জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, ‘না স্যার। আসলে ওভারব্রিজটি জনগণ ব্যবহারই করে না। তাই কেউ কিছু বলেও না। আপনি নিজে এখানে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে দেখেন, কেউ এটি ব্যবহার করে কিনা?’

১০ মিনিট নয় প্রায় ঘণ্টাখানেক সেখানে অবস্থান করে কাউকে ওভারব্রিজটি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে ব্রিজটির পাশের ফুটপাতের চা-বিক্রেতা আমিনুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় দুই বছর ধরে এখানে চা বিক্রি করি। খুব কম মানুষ এটি ব্যবহার করেন। রমনা থেকে সোহরাওয়ার্দী কিংবা সোহরাওয়ার্দী থেকে রমনা পার্কে যেতে গুটিকয়েক মানুষ এটি ব্যবহার করেন। তবে পহেলা বৈশাখের দিন ব্রিজটি বেশি ব্যবহৃত হয়।

ওভারব্রিজটির আশেপাশে বেশকিছু ভাসমান মানুষ ঘোরাঘুরি করে। সন্ধ্যা হলেই তারা সেখানে শুয়ে পড়ে। অসামাজিক কর্মকাণ্ডও চলে ব্রিজটি ঘিরে- বলেন শাহ আলম।

ব্রিজটির দুই প্রান্তে বিশেষ করে এর নিচের অংশে ময়লা ফেলে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ব্যবহার কম, এ কারণে বিষয়টি দেখারও যেন কেউ নেই। তবে একটি সতর্কতামূলক বাণী এ প্রতিবেদকের দৃষ্টি কাড়ে। সেটি হলো, ব্রিজটির দু’প্রান্তেই শক্ত খুঁটি গেড়ে বড় বড় করে লেখা রয়েছে, ‘দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলুন, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করুন’।

এমইউএইচ/বিএ/এমএআর/আরএস/জেআইএম