জাতীয়

নিচে গাড়ির ভয়, ওপরে ছিনতাইকারীর

সকালে দারুস সালাম ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে রাস্তার পশ্চিম থেকে পূর্ব পাড়ে যাচ্ছেন ব্যস্ত কর্মজীবীরা। আবার কেউ বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে বা দ্রুত অফিস পৌঁছাতে ব্যবহার করছেন এটি। তবে সন্ধ্যা হতেই এ দৃশ্য বদলে যায়। ‘ভয়ের আঁধার’ নামে ফুটওভার ব্রিজটি ঘিরে। কখনও ছিনতাইকারী, কখনও বা 'তৃতীয় লিঙ্গ’ সদস্যদের উপদ্রব। ফলে পারত পক্ষে কেউ ওঠেন না সেখানে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হন সবাই।

Advertisement

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় আবদুল করিম ওরফে রাজীব ও দিয়া খানম ওরফে মীম নামে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। ওই ঘটনায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং গত সপ্তাহে প্রগতি সরণি এলাকায় বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহাম্মেদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানামুখী উদ্যোগ ও কঠোরতার কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

সেই সঙ্গে কোনো স্থানে ফুটওভার ব্রিজ থাকলে তা ব্যবহার না করে কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করারও নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। পাশাপাশি পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।

তবে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সন্দেহভাজন যানবাহন আটক ও ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন কিংবা যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় মামলা দেয়ার প্রবণতা দৃশ্যমান। সেই সঙ্গে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপারেও পথচারীদের বাধা দিতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের।

Advertisement

ঢাকার ব্যস্ততম একটি সড়ক মিরপুর রোড। সরেজমিন রোববার বিকেল ৪টার দিকে টেকনিক্যাল মোড় ও কল্যাণপুরের মাঝামাঝি দারুস সালাম ফুটওভার ব্রিজে গিয়ে দেখা যায়, আগের তুলনায় শোভা বাড়ানো হয়েছে। সেখানে নানা ধরনের ফুলের গাছ দিয়ে সবুজায়নের একটা চেষ্টা দেখা গেছে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে। তবে পথচারীদের সংখ্যা খুবই কম।

ওজন মেশিন নিয়ে ব্রিজের মাঝ বরাবর বসে আছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. শফিকুল ইসলাম। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, এখানে মানুষ কম, তাই ব্যবসাও ভালো না। চলতে-ফিরতে পারি না, নিচে খুপড়িতে থাকি, তাই এখানেই বসা। সকালে ও বিকেল ৪টার পর এ ফুটওভার ব্রিজে লোকজনের যাতায়াত কিছুটা বাড়ে। তবে সন্ধ্যার পর একেবারেই কমে যায়, থাকে না বললেই চলে।

এ সময় অপরপাশে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছিলেন প্রতিবন্ধী আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগেও ডায়াবেটিস হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ড ছিলাম। দুর্ঘটনায় পঙ্গু হইছি। বাধ্য হয়ে স্ট্রেচারে ভর দিয়ে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে এ ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়াই, কিন্তু সন্ধ্যার পর থাকি না। আগের তুলনায় ছিনতাই কমলেও এ ব্রিজের ওপর এখনও দুর্বৃত্তরা ঘোরাফেরা করে।’

ছিনতাইকারীদের কারণে যদি ভয় বা জীবনের ঝুঁকি থাকে তাহলে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে- প্রশ্ন রেখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমি তো নিয়মিত সকালে এ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করি। রাস্তার ওপারে গিয়ে নিউ মার্কেটের বাস ধরি। নিউ মার্কেটে আমার ব্যবসা থাকায় নিয়মিত এ পথে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু রাত ৮টার পর এটি ব্যবহার করি না। কারণ একটাই, হয় ছিনতাইকারী, নয় তো হিজড়াদের উৎপাত।’

Advertisement

অবশ্য ফুটওভার ব্রিজের নিচে খালপাড় যাওয়ার গলির মুখের মুদি দোকানি সুলেমান মিয়া বলেন, এখন পরিবেশ বেশ ভালো। ফুলের গাছ, সন্ধ্যার পর লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছুদিন আগেও সন্ধ্যার পরই অন্ধকারে ডুবে থাকত ব্রিজটি।

এ ব্যাপারে দারুস সালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান মিয়া বলেন, আগে ছিনতাই হতো, এখন হয় না। লাইটিংয়ের কারণে দূর থেকেও উপরের সবাইকে দেখা যায়। এরপরও যদি কেউ হয়রানি বা ছিনতাইয়ের শিকার হন তাহলে অভিযোগ করুন, আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

জেইউ/এমএমজেড/এমএআর/জেআইএম