মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বললেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
Advertisement
মঙ্গলবার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের উপস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বলায় তিনিও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা চেয়ারম্যানকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল প্রধান অতিথি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আমি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হওয়ার পরও মুক্তিযোদ্ধারা আমার বিপক্ষে কাজ করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার।
Advertisement
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল মুক্তিযোদ্ধাদের শান্ত করেন।
পরে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধারা কষ্ট পেয়েছে, আঘাত পেয়েছে, তাদের আদর্শ ও সম্মানকে আঘাত করা হয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করলে যেমন বাংলাদেশকে অস্বীকার করা হয়, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদেরও অস্বীকার করলে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা হয়। তাই উপজেলা চেয়ারম্যানের উচিত এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহার করা। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত তার বক্তব্য প্রত্যাহার কিংবা দুঃখ প্রকাশ করেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বলায় আমার বক্তব্যে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলেছি।
বীরগঞ্জ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কালিপদ রায় বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমাদেরকে রাজাকার বলায় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা মর্মাহত হয়েছি। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
Advertisement
তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম আমাদেরকে রাজাকার বলে, অথচ তিনি নিজেই একসময় আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপি, জাতীয় পাটি ও এলডিপি হয়ে ক্ষমা চেয়ে আওয়ামী লীগে এসেছেন। তার বিরুদ্ধে বীরগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার মেয়রসহ সকল চেয়ারম্যান অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে গোপন ব্যালটে ভোট দিয়েছিলেন। আর তিনি নৌকার এমপির বিরুদ্ধে নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ঝাড়ু মিছিল করেছিলেন। তিনি অবিলম্বে ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে মুক্তিযোদ্ধারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায় বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হলে মানুষ সারাজীবন মুক্তিযোদ্ধা থাকে না। যেসব মুক্তিযোদ্ধা ১৮ মার্চ উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছে, সাম্প্রদায়িক ইজম তুলেছিল সেই কতিপয় মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বলেছি। সকল মুক্তিযোদ্ধাকে বলিনি।
এমদাদুল হক মিলন/এমএএস/এমএস