ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা সামনে আনায় চাকরিচ্যুত রাজশাহীর মহানগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম ইনিস্টিটিউটের সেই শিক্ষিকা এবার থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। সোমবার রাতে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জহুরুল আলম রিপনের বিরুদ্ধে নগরীর কাটাখালি থানায় অভিযোগ দেন তিনি।
Advertisement
২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল ওই শিক্ষিকাকে ধর্ষণ চেষ্টা চালান অধ্যক্ষ। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা কম্পিউটার প্রদর্শক কাম মেকানিক পদে কর্মরত ছিলেন। তার ইনডেক্স নম্বর ৩০৭৩২২৯। তিনি অধ্যক্ষ জহুরুল আলম রিপনের খালাতো ভাবি।
আর এ কারণেই এতদিন মুখ খোলেননি তিনি। ওই শিক্ষিকার অভিযোগ, অধ্যক্ষ কেবল তার-ই নন, অনেক কোমলমতি ছাত্রীর শ্লীলতাহানী করেছেন। তিনি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত হন অধ্যক্ষ। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কাটাখালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবারন চন্দ্র বর্মন। তিনি বলেন, অভিযোগ তদন্তাধীন। শিগগিরই এ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
Advertisement
লিখিত ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল অধ্যক্ষ তার নিজ বাড়িতে ওই শিক্ষিকাকে ল্যাপটপ আনতে পাঠিয়েছিলেন। সরল বিশ্বাসে গিয়ে দেখেন, বাড়ির সদর দরজায় তালা দেয়া। ওই সময় অধ্যক্ষকে পেছনে দাঁড়ানো দেখেন তিনি।
এসময় কৌশলে অধ্যক্ষ তাকে তার শোবার ঘরে নিয়ে যান। পরে তাকে কুপ্রস্তাব দেন, নানান প্রলোভনও দেন। কিন্তু তাতে রাজি হননি শিক্ষিকা। ফাঁকা বাড়িতে তাকে জাপটে ধরে শ্লীলতাহানীরও চেষ্টা করেন। তবে কোনো রকমে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন ওই শিক্ষিকা।
ওই শিক্ষিকার ভাষ্য, অধ্যক্ষের বাড়ি থেকে ফিরেই তিনি তৎকালীন প্রভাষক মোকসেদ আলীকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। লোকলজ্জায় বিষয়টি অন্য সহকর্মীদের না জানিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান।
ঘটনার কিছুদিন পর অধ্যক্ষ তাকে কলেজে ডেকে উল্টো প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেন। একই সঙ্গে কলেজে একটি কম্পিউটার প্রদানের শর্ত দেন। কিন্তু কোনো শর্তই তিনি মানতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত তাকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে নেন অধ্যক্ষ।
Advertisement
ঘটনার বিচার চেয়ে গত রোববার (২৪ মার্চ) কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন শিক্ষিকা। একই সঙ্গে চাকরিতে পুর্নবহালের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগ গুরুতর উল্লেখ করে দ্রুত তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তবে শিক্ষিকার এই অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন অধ্যক্ষ জহুরুল আলম রিপন। তার দাবি, তাকে ফাঁসাতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। তাছাড়া ওই শিক্ষিকা ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।
এর আগে ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিজ অফিস কক্ষেই এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে অধ্যক্ষ রিপন। ঘটনার চারদিনের মাথায় ওই ছাত্রীসহ আরও দুই ছাত্রী এবং এক শিক্ষিকা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ দেন।
এছাড়া আর্থিক অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরাও। অভিযোগ তদন্ত হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
পরে অপহরণ ও ধষর্ণচেষ্টার অভিযোগে একমাস পর ৮ মার্চ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ওই প্রতিষ্ঠানেরই এক ছাত্রী। ওই দিনই জেলার পবা উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর পাঁচ দিনের মাথায় ১৩ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ছাত্রী অপহরণ ও ধষর্ণচেষ্টায় তাকে অভিযুক্ত করে গত বছরের ৪ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। যদিও জামিনে মুক্ত রয়েছেন অধ্যক্ষ।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস/এমএস