জাতীয়

আতঙ্ক নয়, রূপালি আলোয় ঝলমলে ঢাকা

আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ভয়ানকভাবে জ্বলছিল রাজধানী ঢাকা। পাকিস্তানি বাহিনীর কামান আর ট্যাংকের গোলা দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে দিয়ে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নীলক্ষেত, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সসহ ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল।

Advertisement

হানাদার বাহিনীর কামান আর ট্যাংকের গোলার সেই আগুনের আলোয় রক্তিম রঙ ধারণ করেছিল গোটা ঢাকার আকাশ। ঢাকার আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে পড়া সেই আলোয় ছিল না বিন্দুমাত্র আনন্দ। ছিল শুধু ভয় আর আতঙ্ক।

চারদিকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রের গগনবিদারী শব্দের মধ্যে রক্তের বন্যা আর সারি সারি লাশের স্তূপ তৈরি করেছিল ভয়ানক এক দৃশ্য। ছিল দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য ভয়ার্ত মানুষের আর্তচিৎকার আর আকাশছোঁয়া আগুনের লেলিহান শিখা।

৪৮ বছর ঘুরে আবারও এসেছে ২৫ মার্চ রাত। তবে এ রাতে নেই কোনো আতঙ্ক, নেই কোনো ভয়। বরং মহান স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীর শহর সেজেছে রূপালি আলোয়। সেই আলোয় ঝলমল করছে ঢাকার আকাশ-বাতাস।

Advertisement

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোমবারের রাত হয়ে উঠেছে আলোকময়। নানা রঙে ঠিকরে পড়ছে যেন মানুষের ভালোবাসা। বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, হাইকোর্ট ভবন, সচিবালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ সব সরকারি ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

এ আলো হঠাৎ কারো চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে না, ক্ষণে ক্ষণে আতঙ্কে অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিচ্ছে না। বরং এই আলো মানুষের মনকে উদ্বেলিত করছে, আনন্দে ভাসিয়ে দিচ্ছে। এ আলোর ঔজ্জ্বল্য মনে করিয়ে দিচ্ছে জাতির এক অবিশ্বাস্য অর্জন। যে অর্জন গৌরবের, বীরত্বের।

রাত ৮টার দিকে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এক মধ্যবয়সীকে। খায়রুল হোসেন নামের এই বেসরকারি কর্মকর্তা বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এক ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ট্যাংক আর সাঁজোয়া বহরে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছিল ঢাকা শহর। আতঙ্কের নগরীতে রূপ নিয়ে ছিল ঢাকা।

তিনি বলেন, আজ আর আতঙ্ক নেই। আছে স্বাধীনতার আনন্দ। সকালের সূর্য উঠলেই সবাই মেতে উঠবে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আনন্দে। সেই আনন্দের উপলক্ষণ হিসেবেই রাজধানী ঢাকা সেজেছে রঙিন আলোয়। এমন রঙিন আলো যেকোনো মানুষের মনকে আনন্দ দেবে।

Advertisement

লাল, নীল, হলুদ আলোর লাইটে সাজানো হয়েছে সচিবালয়। সচিবালয়ের ভবনগুলোর ছাদ থেকে নিচ পর্যন্ত লম্বা তারে পাশাপাশি ঝুলে রয়েছে এসব লাইটগুলো। তবে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে লাইটগুলোতে লাল, নীল, হলুদ বাতি জ্বলতে দেখা যায়নি। হয়তো ২৫ মার্চ কালো রাত স্মরণ রাখতেই বাতিগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। অবশ্য পাশেই বিদ্যুৎ ভবনে দেখা গেছে রূপালী আলোর ঝলমলে দৃশ্য।

পল্টন মোড়ে কথা হয় সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতকাল সচিবালয়ের আশপাশে ছিল বাহারি আলোর ঝলকানি। সচিবালয় যেভাবে আলো দিয়ে সাজানো হয়েছিল, সেই আলোর দিকে তাকিয়ে থেকে অনায়াসেই কয়েক মিনিট কাটিয়ে দেয়া যায়। আজ সচিবালয়ের সেই লাইটিং দেখছি না। হয়তো রাত ১২টার পর দেখা যাবে।

তিনি বলেন, আমরা চাই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানী যেমন আলোয় আলোকিত হয়েছে, সব সময় যেন আমাদের প্রিয় ঢাকা এমন আলোয় আলোকিত থাকে। সেই সঙ্গে আনন্দের আলোয় ভরে থাকুক প্রতিটি মানুষের মন।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সাল আমি দেখিনি। বাবা-দাদার কাছে গল্প শুনেছি। ১৯৭১ মার্চ মাস ছিল আতঙ্কের। ২৫ মার্চ কাপুরুষ হানাদার বাহিনী ঢাকাজুড়ে তৈরি করেছিল ভয়ানক আতঙ্কের পরিবেশ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল কারও বেঁচে থাকার আশা ছিল না। সেই ভয়ানক পরিবেশ পিছু ফেলে বাংলার বীর সন্তানরা স্বাধীনতা ফিরে এনেছে। আজ ২৫ মার্চে রাতে আমরা আতঙ্কে আতকে উঠি না। বরং স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আনন্দে উদ্বেলিত হয়।

এমএএস/জেএইচ/জেআইএম