অনৈতিক প্লেসমেন্ট বাণিজ্য ও স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) সুদের হার বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের শেয়ারবাজারে তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) দুর্বল কোম্পানি আসা, নিরীক্ষকদের দুর্বল নিরীক্ষা প্রতিবেদনের কারণে সম্প্রতি শেয়ারবাজারে পতন দেখা দিয়েছে।
Advertisement
সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের আলোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে ডিএসইর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল হাশেম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএএম মাজেদুর রহমানসহ শীর্ষ ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারের চলমান পতনের কারণ হিসেবে তারল্য সঙ্কটের বিষয়টি উঠে আসে। এ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে এফডিআর সুদের হার বৃদ্ধি ও প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু বেড়ে যাওয়ার কারণে। এফডিআরের সুদের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে শেয়ারবাজার থেকে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। প্লেসমেন্টে ব্যাপক হারে শেয়ার ইস্যুর কারণে বিনিয়োগকারীদের টাকার একটি বড় অংশ পুঁজিবাজারের বাইরে আটকে থাকছে। এই সঙ্কটের কারণে লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে।
ড. আবুল হাশেম বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের লক্ষ্যে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে। এরই প্রেক্ষাপটে আজকের এই বেঠক। বৈঠকের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে বিভিন্ন ধারণা পাওয়া যাবে।
Advertisement
পরে বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধিরা ব্রোকার হাউজের সার্ভিস বুথ অনুমোদন, স্ক্রিপ্ট নিটিং সিস্টেম চালু, কর্পোরেট ডিসক্লোজারের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, লেনদেন নিষ্পত্তির সময়সীমা টি+০ করা, নীতিনির্ধারকদের কৌশলগত দিকনির্দেশনা, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হ্রাস, মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে আরও সক্রিয় করা, প্লেসমেন্ট শেয়ারের নীতিমালা প্রণয়ন, বহুজাতিক ও মৌলভিত্তিক কোম্পানিকে বাজারে নিয়ে আসা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা রক্ষা, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করা, আইপিওর কোটা বাতিল, আইসিবির মতো আরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের গাইডলাইন তৈরি করাসহ বিভিন্ন দাবি জানান।
বৈঠকে অংশ নেয়া এক শীর্ষ ব্রোকার বলেন, তারল্য সঙ্কট এমন আকার ধারণ করেছে, যেখানে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কাছে কোনো টাকা নেই। ফলে শেয়ার কিনতে পারছে না তারা। অন্যদিকে উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে টাকা উঠিয়ে নিয়ে আরও সঙ্কটের সৃষ্টি করছে।
তিনি আরও বলেন, আইপিওতে ভালো মানের কোম্পানি আসছে না। যাতে কোম্পানিগুলো ২-৩ বছরের ব্যবধানে ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে ছিটকে পড়ছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করছে।
তিনি বলেন, নিরীক্ষকদের নিরীক্ষা মানের অবস্থা খুবই শোচনীয়। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যেভাবে আর্থিক হিসাব তৈরি করে, নিরীক্ষক সেটাকেই সত্যায়িত করে। প্রকৃত চিত্র যাচাই করে না। যাতে আইপিওতে আসার জন্য কোম্পানিগুলো সহজেই অতিরঞ্জিত আর্থিক হিসাব প্রকাশের সুযোগ পায়। এছাড়া নিরীক্ষার বাধ্যবাধকতা না থাকায়, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রান্তিক (কোয়ার্টার) আর্থিক হিসাবগুলো নিজেদের মতো করে বেশি সাজিয়ে প্রকাশ করে।
Advertisement
এমএএস/এমএসএইচ/এমএস